Kolkata

ভোরে মহালয়া, বেলায় তর্পণ, তবে চেনা ছবি অমিল

ভোরে ঘুম থেকে উঠে মহালয়া শোনা হল। তর্পণও হল। তবে করোনা আবহে প্রতিবারের চেনা ছবিটা কোথাও যেন অমিল রইল।

কলকাতা : ভোরের আলো তখনও ফোটেনি। এমন রাতভোরে আক্ষরিক অর্থেই বঙ্গবাসীর গণ-জাগরণ বছরে একটাই দিনে হয়। দিনটা মহালয়া। রেডিও বিমুখ বাঙালিকে ভোর ৪টে আচমকাই করে তোলে রেডিওপ্রেমী। বহুদিনের অনভ্যাস কাটিয়ে চলে রেডিও টিউনিং। কোথায় যেন হয় মহালয়াটা? অবশেষে সন্ধান মেলে। ঘরঘর শব্দে বেজে ওঠে… বাজল তোমার আলোর বেণু! চেনা সুরে সত্যিই মেতে ওঠে ভুবন।

মহালয়া নয়, যেন মায়ের পদধ্বনি শুনতে পায় বাঙালি। মনে লাগে পুজোর হাওয়া। মহালয়া মানেই পিতৃপক্ষের অবসান। দেবীপক্ষের শুরু। তবে এবার ছবিটা আলাদা। কারণ আশ্বিন মাস মল মাস। ফলে এই মাসে কোনও পুজো নেই। মহালয়া হয়ে গেল ভাদ্র মাসের শেষ দিনে। তারপর ১ মাস ৫ দিন পর দুর্গাপুজো।


আকর্ষণীয় খবর পড়তে ডাউনলোড করুন নীলকণ্ঠ.in অ্যাপ

মহালয়ার শেষে আপাতত এক দীর্ঘ অপেক্ষা। এবার করোনা আবহে অনেক পাড়ায় এখনও প্যান্ডেলই বাঁধা হয়নি। কিছু জায়গায় শুরুটা হয়েছে মাত্র। যা বলে দিচ্ছে এবার দুর্গাপুজোয় প্যান্ডেলে বৈচিত্র্যের আশা অতটা না করাই ভাল।

বৃহস্পতিবার ভোরে মহালয়া শোনার পর ছিল তর্পণ। পিতৃপক্ষের অবসানের দিনে পিতৃপুরুষের উদ্দেশ্যে তর্পণ প্রাচীন প্রথা। ইহলোক ত্যাগ করা পিতৃপুরুষকে তিল, যব, জল দান শাস্ত্রীয় রীতির অংশ।

এবার সারাদিনই প্রায় অমাবস্যা। তবে তর্পণের নিময় মেনে মধ্যাহ্নের আগেই তর্পণ করতে হয়। এবার আবার করোনার ভয় পিছু তাড়া করছে। ফলে ভোরেই বিভিন্ন ঘাটে তর্পণের ভিড় নজরে পড়ে। তবে অন্যান্য বারের মত ভিড় কিন্তু ছিলনা। সেই ভিড় দিনের কোনও সময়ই হয়নি।

কোমর পর্যন্ত জলে নেমে চলেছে তর্পণ। তিল, জল হাতে মন্ত্রোচ্চারণ। কলকাতা সহ যেসব জায়গায় গঙ্গা রয়েছে সেখানে গঙ্গার ঘাটে ছিল ভিড়। অন্যান্য জায়গায় জলাশয়, অন্য কোনও নদী, দিঘি এমনকি পুকুরেও মানুষকে তর্পণ করতে দেখা গেছে। অনেকে আবার বাড়িতেই সেরেছেন তর্পণ প্রক্রিয়া।

এবার তর্পণ গঙ্গায় হয়েছে ঠিকই, তবে ভিড় ছিল কম। কিন্তু যে ভিড়টা হয়েছিল সেখানে দূরত্ববিধি তেমন নজরে পড়েনি। নজরে পড়েনি মাস্কের সঠিক ব্যবহার।

এবার আরও একটা সমস্যা বিভিন্ন ঘাটে হয়েছে। তা হল তর্পণ করানোর জন্য পুরোহিতের অভাব। প্রতিবার যত পুরোহিত গঙ্গার ঘাটগুলোয় দেখা যায় এবার তা ছিলনা। সংখ্যা ছিল কম। ফলে পুরোহিত যে কজন ছিলেন তাঁদের ব্যস্ততা ছিল তুঙ্গে। দম ফেলার সময় পাননি তাঁরা।

আহিরীটোলা, বাবুঘাট, বাগবাজার সহ বিভিন্ন গঙ্গার ঘাটে এদিন অনেক মানুষ তর্পণ করতে আসেন। জেলায় জেলায় বিভিন্ন নদীর পাড়েও ছিল তর্পণ করতে আসা মানুষের ঢল। তবে প্রতিবার যেমন মহালয়া মানেই পুজোর ঢাকে কাঠি পড়ে যায়। এবার সেটা হল না।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *