National

ফণীর ছোবলে মহাপ্রলয়

ঝড়ের গতি ১৮০ থেকে ২০০ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা। তাও বয়েই চলেছে। বয়েই চলেছে। একইভাবে অবিরাম। একটা ভয়ংকর গর্জনের কর্কশ শব্দ কানে বেজেই চলেছে। চারিদিকে আর কোনও শব্দ নেই। কেবল ঝড়ের গর্জন আর তুমুল বৃষ্টির শব্দ মিলে একটা আতঙ্কের একঘেয়ে আওয়াজ হয়েই চলেছে। বড় একটা কিছু চোখে পড়ছে না। চারদিক ঝাপসা। শুধু গাছগুলো নুইয়ে পড়েও আপ্রাণ লড়াই চালাচ্ছে ঝড়ের সঙ্গে। তাদের বেঁচে থাকার লড়াই। জীবনের জন্য লড়াই। কিন্তু তাতেও একের পর এক গাছে উপড়ে উড়ে গিয়ে পড়ছে।

খড়কুটোর মত উড়ে যাচ্ছে বিশাল বিশাল স্ট্রাকচার। ভেঙে পড়েছে কাঁচা বাড়ি। হাওয়ায় ঘুড়ির মত ভেসে যাচ্ছে বাড়ির টিনের চাল। এ প্রলয়ের যেন শেষ নেই। সেই যে সকাল ৮টার পর শুরু হয়েছিল। তা দুপুর পর্যন্ত নিজের প্রায় একই রূপ ধরে রাখল ওড়িশার পুরী, গঞ্জাম, জগৎসিংপুর, বালেশ্বর সহ বিস্তীর্ণ এলাকায়। যেদিকে চোখ যায় শুধুই তাণ্ডব। যাকে রোখার ক্ষমতা কোনও মানুষের নেই। নেই কোনও প্রযুক্তির। প্রকৃতি যেন এক প্রবল রোষে সবকিছু তছনছ করতে উঠে পড়ে লেগেছে।


পড়ুন আকর্ষণীয় খবর, ডাউনলোড নীলকণ্ঠ.in অ্যাপ

উত্তাল সমুদ্রে জলোচ্ছ্বাস শুরু হয় সকাল থেকেই। সমুদ্রের জল উঠে আসে পুরীর রাস্তায়। পুরীর সমুদ্রের এমন প্রলয়ঙ্করী রূপ বহুকাল দেখেননি মানুষ। ওড়িশার ১১টি জেলায় বিদ্যুৎ নেই। ১১ লক্ষ মানুষ বাড়িঘর ছেড়ে আশ্রয় শিবিরগুলিতে মাথা গুঁজেছেন। তাঁরা জানেনও না যে ফিরে গিয়ে তাঁর সাধের ঘরটার কি দশা দেখবেন। কৃষকরা বুঝতে পারছেন না ফিরলে তাঁদের মাঠ ভরা ফসলের কেমন চেহারাটা দাঁড়াবে।

ওড়িশার উপকূলীয় জেলাগুলিতে এদিন যে তাণ্ডব বিকেল পর্যন্তও চালাল ফণী তাতে ধ্বংসের চেহারাটি ঠিক কেমন তা এখনও পরিস্কার নয়। তবে কিছুটা হলেও অনুমেয়। আর যা অনুমেয় তা ভেবেই শিউরে উঠছেন মানুষ। শিউরে উঠছে প্রশাসন। ভুবনেশ্বর স্টেশনের চালাই এদিন ঝড়ে উড়ে যায়।

ভুবনেশ্বর এইমসের অনেক জায়গা ভেঙে পড়েছে। বড় ক্ষতি হয়েছে। অবস্থা বুঝে এখানে সব পরীক্ষা বাতিল করেছে ভুবনেশ্বর এইমস। তবে এইমসের তরফে আশ্বস্ত করা হয়েছে যে সব রোগী, চিকিৎসক, হাসপাতালের অন্য কর্মীরা সুরক্ষিত আছেন। নষ্ট হয়েছে সম্পত্তি। ছাদ উড়ে গেছে। জলের ট্যাঙ্ক ফেটে গেছে, বিভিন্ন অংশ ভেঙে পড়েছে। সেসব ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় ঘুরেও বেড়াচ্ছে। যদিও রসদ তাঁদের কাছে যথেষ্ট মজুত আছে বলেই জানিয়েছে এইমস কর্তৃপক্ষ।

গোটা ওড়িশায় কত গাছ উপড়ে গেছে, কত ইলেকট্রিক পোল ভেঙে পড়েছে, কতগুলি নির্মাণকাজে ব্যবহৃত ক্রেন ভেঙে পড়েছে, কত গাড়ি নষ্ট হয়েছে, কত স্কুটার-বাইক হাওয়া টেনে অনেক দূর নিয়ে গেছে তার কোনও হিসাব এখনও নেই। তবে যেটুকু অনেকে বাইরে উঁকি দিয়ে দেখছেন বা মোবাইল ক্যামেরায় ছবি তুলছেন তাতে ধ্বংসলীলা স্পষ্ট। কার্যত লক্ষ লক্ষ মানুষ নিজেদের আপাতত গৃহবন্দি করে রেখেছেন। বেরিয়েই বা লাভ কি! বাইরে না আছে যানবাহন, না আছে দোকানপাট খোলা, না আছে অন্য কিছু। শুধু ধ্বংস তার চিহ্ন নিয়ে ছড়িয়ে রয়েছে চারধারে।

(সংবাদ সংস্থার সাহায্য নিয়ে লেখা)

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *