গোপালের পিকনিক। শুনে মনে হতেই পারে গোপাল নামে কারও তত্ত্বাবধানে পিকনিক। এটা একটা ভাবনা। আর অন্য যে ভাবনাটা মনের কোণে উঁকি দেওয়া সত্ত্বেও অসম্ভব বলে মনে হচ্ছে সেটাই কিন্তু বাস্তব। সেটাই হচ্ছে। সত্যিই সারা বছর ঠাকুর ঘরের আসনে থাকা বালক কৃষ্ণের নানা মূর্তি নিজেদের মধ্যে পিকনিক করছেন। গোপাল ঠাকুররা এক জায়গায় জড়ো হয়ে শীতের প্রায় শেষে পৌঁছে পিকনিকে মত্ত। সারা বছর ঠাকুর ঘরে থাকা কী ভাল লাগে! তাই একটা দিন একটু অন্যভাবে কাটানো। যেমন মানুষ করে থাকে। একটু অন্যভাবে দিনটা কাটাতে একদিন পিকনিকে মেতে ওঠে। ঠিক তেমনই মঙ্গলবার দিনভর পিকনিক করলেন সিংহাসনে পূজিত গোপালরা। খোদ কলকাতার বুকে সেই পিকনিকের আয়োজন হল নারকেলডাঙায়। যেখানে বিদেশ থেকে এসেও পিকনিকে অংশ নিলেন গোপাল ঠাকুর।
পড়ুন : আরতি কেন করা হয়, করলে তার ফলই বা কি, বুড়িমাকে জানালেন স্বয়ং গোপাল
এই নিয়ে চতুর্থ বছর। না প্রতি বছর দিনক্ষণ মেনে যে গোপালের পিকনিক হয় এমনটা নয়। কিন্তু উদ্যোক্তা পরিবারের ইচ্ছে হলেই হয়। আর সেই পিকনিকে হাজির হন নানা প্রান্তের গোপালরা। এবার থাইল্যান্ড থেকে একজন এই পিকনিকে হাজির হলেন গোপাল নিয়ে। তাঁর থাইল্যান্ডের ঠাকুরঘরে থাকা গোপাল নিয়ে বিমানে এতটা এলেন তাঁর গোপালও এই পিকনিকে অংশ নেবেন বলে। ফলে গোপালের এই পিকনিক এবার দেশের সীমা পার করল। গোপাল এসেছেন নাগাল্যান্ড থেকেও। এছাড়া দুর্গাপুর, বোলপুর, কৃষ্ণনগর সহ নানা প্রান্ত থেকে পিকনিকে হাজির হলেন গৃহস্থের গোপালরা। চুটিয়ে দিন কাটালেন তাঁরা। এবারই প্রথম ১০০ পার করল পিকনিকে অংশ নেওয়া গোপালের সংখ্যা।
আমন্ত্রিত বা নিমন্ত্রিত বলেই নয়, যে কেউ কারও মুখে শুনেও পিকনিকে নিজের গোপাল নিয়ে হাজির হয়েছেন। গোপালের একটু দিনবদল হল। আর সেইসঙ্গে গৃহস্থেরও। গোপালরা সকলে বসেছিলেন সাজানো গ্যালারিতে। নানা মাপের গোপাল। নানা সাজের গোপাল। একসঙ্গে এত গোপাল দেখার সুযোগ সহজে হওয়ার নয়। যে কেউ গোপাল নিয়ে হাজির হলেই তাঁকে সাদরে স্বাগত জানিয়েছেন নারকেলডাঙার বাসিন্দা ওই পরিবার। তাঁর গোপালকে পিকনিকে শামিল করছেন। কেবল গৃহস্থকে হাতে রাখতে হচ্ছে একটি কুপন। নম্বর দেওয়া। এত গোপালের মাঝে যাতে কারও গোপাল অদলবদলের বিভ্রাট সৃষ্টি না হয়।
গোপালরা পিকনিকে এসেছেন। পিকনিক মানে যেমন হৈ হুল্লোড়, তেমনই খাওয়া দাওয়া। তাই তাঁদের জন্য পিকনিকের খাওয়া দাওয়ার আয়োজনও দেদার। এদিন আলাদা করে কোনও পুজো নেই। কেবল সব গোপালকে খাবার নিবেদন করেন এক পুরোহিত। এটুকুই। এরপর তো পিকনিক। গোপালরা সকলে নিজেদের মধ্যে আনন্দ করবেন। গোপালদের জন্য উদ্যোক্তা পরিবারের তরফে খাবার ও উপহারের সুন্দর বন্দোবস্ত করা হয়েছে। খাবারের প্লেটে থাকছে মাখন, মিছরি, মাঞ্চ, বিস্কুট, মালপোয়া, পায়েস, হজমোলা, পান লজেন্স। সারা বছরে গোপালের জন্য এমন মেনু হয়না কোনও পরিবারে। এদিন তো পিকনিক। তাই আয়োজনও আলাদা। পিকনিক শেষে উপহার হিসাবে থাকছে ভাত খাওয়ার থালা, জল খাবারের থালা, চামচ, শীতের কম্বল।
গোপাল নিয়ে গৃহস্থেরা মহানন্দে হাজির হন এই পিকনিকে। যদিও পিকনিক গোপালদের। তবু গৃহস্থই বা বাদ যান কেন। তাই তাঁদের জন্য আলাদা খাওয়া দাওয়ার আয়োজন। মেনুতে শোভা পেল কড়াইশুঁটির কচুরি, বেগুন ভাজা, ছোলার ডাল, ভেজিটেবল চপ, স্যালাড, ফ্রায়েড রাইস, আলুর দম, পাঁপড়, আনারস কোড়ার চাটনি, সীতাভোগ, মিহিদানা। আর খাবার শেষে মুখশুদ্ধি।
প্রথমবার যখন গোপালের পিকনিকের আয়োজন করেছিল নারকেলডাঙার এই পরিবার সেবার গোপালের অংশগ্রহণ ছিল ৫০। প্রতি বারই বেড়েছে গোপালের সংখ্যা। এবার তা ১০০ পার করল। দূর দূর থেকে গোপাল নিয়ে এখানে হাজির হলেন সকলে। অমাবস্যা, একাদশী, প্রতিপদ, পূর্ণিমা। এই ৪টি দিন বাদ দিয়ে কোনও তিথি নক্ষত্রের তোয়াক্কা না করেই এই গোপালের পিকনিকের আয়োজন হয়ে থাকে। এবার তা আরও বৃহৎ আকার নিল।