কুরুক্ষেত্রের সময় পাণ্ডবরা আসতেন জাগ্রত এই তীর্থে
অতিপ্রাচীন এই তীর্থে অর্জুন লাভ করেছিলেন পাশুপত অস্ত্র। মন্দিরের শিবলিঙ্গটি স্বয়ম্ভু লিঙ্গ। বর্তমান মন্দিরটি নির্মিত প্রায় সাড়ে ৫০০ বছর আগে।
![Vishwanath Temple Uttarkashi](https://www.nilkantho.in/wp-content/uploads/2019/05/vishwanath-temple-uttarkashi.jpg)
পাহাড়বেষ্টিত ছোট্ট জনপদ উত্তরকাশী। হাজার হাজার বছর ধরে বুকে ধারণ করে আছে সুধাবাহী গঙ্গাকে। কালীকমলী বাবার ধর্মশালার একেবারে গঙ্গার চরণ ছুঁয়ে এর সিঁড়ি নেমে গিয়েছে গঙ্গায়। আজকের উত্তরকাশী জমজমাট। মোটের ওপর উত্তরকাশীই হল উত্তরাখণ্ডের গঙ্গোত্রী যাওয়ার পথের প্রাণকেন্দ্র।
বেরিয়ে পড়লাম উত্তরকাশী ঘুরতে। আকাশ মেঘহীন সুনীল। জিপ চলছে এঁকেবেঁকে। বাঁকের পর বাঁক ঘুরে ঘুরে কখনও উঠছে, কখনও নামছে। ভাবছি, মহাভারতীয় যুগ আনুমানিক ৪৪৪৮ বছর আগের কথা। কথিত আছে, শিবরূপী কিরাতের সঙ্গে অর্জুনের যুদ্ধ হয়েছিল এই উত্তরকাশীতে। অর্জুন লাভ করেছিলেন পাশুপত অস্ত্র। মহাভারতের বনপর্বে কৈরাত পর্বাধ্যায়ে আছে কাহিনিটি।
লোক সমাগম বেড়েছে, তবে হিমালয়ের রূপরাশির ঘাটতি নেই এতটুকুও। অতি প্রাচীন তীর্থ এই উত্তরকাশী। অর্ধচন্দ্রাকারে বেষ্টন করে রয়েছে উত্তরবাহিনী গঙ্গা। মা যেমন বাহুডোরে আগলে রাখে সন্তানকে তেমনই গঙ্গা যেন আগলে রেখেছে উত্তরকাশীকে। কত যে সাধুসন্ন্যাসী, যোগী, ঋষি, বিমুক্তকামী হয়ে তপস্যা করেছিলেন উত্তরকাশীর নিভৃতে, তার ইয়ত্তা নেই।
সকাল হয়। বেরিয়ে পড়ি ঘুরতে। উত্তরকাশীর বাজারের মধ্যে দিয়েই শুরু হল চলা। স্থানীয় দোকানদারদের জিজ্ঞাসা করে, এদিক-সেদিক করতে করতে এল উত্তরকাশীর আদালত। এর পাশ দিয়ে আরও খানিক এগিয়ে এলাম ভৈরবচকের কাছে বিশ্বনাথ মন্দিরের সামনে। প্রবেশদ্বার পার হতেই ডানদিকে প্রথমে পড়ল ছোট্ট একটি মন্দির। ভিতরে স্থাপিত মূর্তিটি গণেশের। প্রাচীনত্বের ছাপ এর সারা অঙ্গে। এটির পাশেই ধবধবে সাদা গণেশের আর একটি বিগ্রহ। মন্দির চত্বরের ডানদিকেই একটি টিনের ছাউনি। এর নিচে অনেকটা জায়গা জুড়ে বেশ কয়েকটা যজ্ঞকুণ্ড।
এটির বিপরীতের মন্দিরটি শক্তি মন্দির নামেই অভিহিত। ভিতরে একটি ত্রিশূল পোঁতা। এরই সামনে উত্তরকাশীর বিশ্বনাথ মন্দির। উখিমঠ বা কেদারনাথের মন্দিরের আদলে নির্মিত এটি। কয়েক ধাপ সিঁড়ি ভেঙে উঠে এলাম উপরে। ছোট্ট দরজা। মাথা নিচু করেই ঢুকতে হল। প্রথমে পড়ল বিশ্বনাথের বাহন নন্দীর কালো পাথরের মূর্তি। এটি মন্দিরের প্রথম অংশে। এর পরের অংশেই শ্রীবিশ্বনাথ শিবলিঙ্গ। এক হাত আঙুল চারেক উচ্চতা। গোলাকার কালো শিবলিঙ্গটি বাঁ দিকে হেলানো। নিত্য পূজারির কথায়, এটি স্বয়ম্ভু লিঙ্গ। বর্তমানের মন্দিরটি নির্মিত হয়েছে প্রায় ৫৫০ বছর আগে। মন্দির ছেড়ে নেমে এলাম নিচে। এবার ডানদিকে কয়েক পা এগোতেই প্রথমে সাক্ষীগোপাল, পরে ঋষি মার্কণ্ডেয়র মন্দির। দুটি মন্দিরেই স্থাপিত দুটি ছোট ছোট শিবলিঙ্গ।
বিশ্বনাথ মন্দির থেকে বেরিয়ে একটু হেঁটে এলাম ভৈরবচকে, ভৈরব মন্দিরে। ছোট্ট মন্দির। ভিতরে স্থাপিত কালভৈরব শিবলিঙ্গ। কাশীক্ষেত্রে বিশ্বনাথের দ্বারপালের মতো এখানকার দ্বারপাল স্বয়ং কালভৈরব। কাশীর বিশ্বনাথসহ সমস্ত দেবদেবীর সমাবেশ এই তপোভূমি উত্তরকাশীতে। উত্তরকাশীর বিশ্বনাথ দর্শনে কাশীর বিশ্বনাথ দর্শনেরই ফললাভ হয় বলে পূজারি জানিয়েছেন।
ফিরে আসার পথে ভাবছি অতীতের কথা। ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দে সিপাহি বিদ্রোহের অন্যতম নায়ক ছিলেন স্বাধীনতা সংগ্রামী নানা ফড়নবিশ। একসময় তিনি আত্মগোপন করেছিলেন এই উত্তরকাশীতেই। কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধের আগে ও পরে এখানে যাতায়াত করতেন পাণ্ডবেরা। বারণাবতের জতুগৃহ দাহ উত্তকাশীতেই হয়েছিল বলে অনেকের ধারণা।