কীভাবে এল ভ্যালেন্টাইনস ডে
আজকের যুগের ‘ভ্যালেন্টাইনস ডে’-র সাথে অদ্ভুত মিল উৎসবটির। ভালবাসার মানুষকে চিরজীবনের জন্য বাহুডোরে বাঁধাতেই প্রেমের সার্থকতা।
![Valentines Day](https://www.nilkantho.in/wp-content/uploads/2018/02/valentines-day.jpg)
আজ থেকে বহু বছর আগে প্রেমের আতরের জন্ম হয়েছিল রোমে, এক বিশেষ রোমান উৎসবের আকারে। সেই উৎসবের নাম ‘লুপেরকালিয়া’। রোমের কৃষি দেবতা ফনাসকে উৎসর্গ করে ১৫ ফেব্রুয়ারি তারিখে আয়োজন করা হত এক বিশেষ উৎসবের। সেই উৎসবে এক বিশেষ প্রথা মেনে চলতে হত রোমের যুব প্রজন্মকে।
প্রথা অনুসারে একটি বাক্সের ভিতরে রাখা থাকত একাধিক কাগজের টুকরো। তার মধ্য থেকে একটিমাত্র কাগজ বেছে নিতেন একেকজন যুবক। একেকটি কাগজে লেখা থাকত একেকজন মেয়ের নাম। যার হাতে যে মেয়ের নাম পড়ত, সেই নারী হয়ে উঠতেন সেই পুরুষের নৃত্যসঙ্গীনী। অনেকসময় নাচের ‘পার্টনার’ হয়ে উঠতেন একে অপরের জীবনসঙ্গী।
আজকের যুগের ‘ভ্যালেন্টাইনস ডে’-র সাথে এইখানেই অদ্ভুত মিল রোমের উৎসবটির। ভালবাসার মানুষকে চিরজীবনের জন্য বাহুডোরে বাঁধাতেই প্রেমের সার্থকতা। তার জন্যই তো এত আয়োজন, এত উপাচারের ব্যবস্থা।
‘উইল ইউ বি মাই ভ্যালেন্টাইন’? এই প্রশ্নের আবেদন তো চিরকালীন। আর সেই চিরকালীন শাশ্বত প্রেমের সৌরভ যেন মিশে ছিল ‘লুপেরকালিয়া’ উৎসবেও।
খ্রিষ্ট ধর্মের উদ্ভবের আগে অবধি রোমের এই আনুষ্ঠানিক প্রথাই মর্যাদা পেয়ে আসছিল প্রেমের দিবস হিসেবে। পঞ্চম শতকের শেষভাগে পোপ গেলাসিয়াস ১৪ ফেব্রুয়ারি দিনটিকে ঘোষণা করেন ‘ভ্যালেন্টাইনস ডে’ হিসেবে। তারপর থেকেই গোটা বিশ্বে হুহু করে জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন ভ্যালেন্টাইন এবং তাঁর স্মৃতিধন্য এই দিন।
অবশ্য প্রেম দিবসের স্পষ্ট ধারণার জন্মের পিছনে পোপ গেলাসিয়াস নন, বিশেষ ভূমিকা রয়েছে ইংরাজি সাহিত্যের জনক কবি জিওফ্রে চসারের। অন্তত ইতিহাস সেই দাবি করে।
![Geoffrey Chaucer](https://www.nilkantho.in/wp-content/uploads/2018/02/geoffrey-chaucer.jpg)
১৩৭৫ সালে ‘পার্লামেন্ট অফ ফাউলস’ নামে একটি কবিতা লেখেন চসার। সেই কবিতায় মানুষের নিবিড় মিলন ও প্রেমের উদযাপনের কোনও উল্লেখ সেভাবে পাওয়া যায়না ঠিকই, কিন্তু প্রেমে কাতর ফাউল পাখির যোগ্য সঙ্গী বা সঙ্গিনীর খোঁজের গল্পের মধ্য দিয়ে প্রেমের মুহুর্ত পালনের আভাস দিয়ে দেন কবি।
ফেব্রুয়ারির ১৪ তারিখেই পরিযায়ী পাখি ফাউল মনের মানুষের সন্ধানে এসে পৌঁছয় ইংল্যান্ডে। কারণ, ওই দিন যে ‘সেন্ট ভ্যালেন্টাইনস ডে’। সেকথা খোদ কাগজে কলমে লিখে গেছেন চসার। তাঁর কথা তো আর ফেলে দেওয়া যায় না।
অতঃপর, আজ থেকে ৬৪৩ বছর আগে জন্ম নিল এক নতুন দিবস। সেই দিবস প্রেমের খোঁজের ইতিহাস বহন করে চলেছে আজও। সেই ইতিহাস বহু ভাঙা গড়ার খেলা দেখতে দেখতে আজও ‘ভ্যালেন্টাইনস ডে’ নামে অমলিন কোটি কোটি প্রেমিক হৃদয়ের প্রকোষ্ঠে।