State

রশিতে টান পড়ার অপেক্ষায় রথবাড়ির রথ

মত পার্থক্য আছে কারা রথ শুরু করেছিলেন তা নিয়ে। তবুও এক সময় রথবাড়ি নামে পরিচিত মধ্যমগ্রামের দত্ত বাড়ি আজও রথযাত্রা উৎসব পালন করে চলেছে। মধ্যমগ্রামের রথযাত্রা উৎসব বলতে তাদের রথকেই বোঝায়। একে কেন্দ্র করেই ১০-১২ দিনের মেলা বসে মধ্যমগ্রামে। তাতে নামে মানুষের ঢল।

দত্তবাড়ির সদস্য কুমারেশ দত্ত জানালেন, ১৯৫২ সাল থেকে এই রথযাত্রা চলে আসছে। স্নানযাত্রা দিয়ে রথ উৎসবের প্রস্তুতি শুরু হয়। এদিনই রথটা একটু রং করে রাখা হয়। পরের কদিনে রথটিকে রথযাত্রার উপযুক্ত করে তোলা হয়। সোজা রথের দিন নিয়ম মেনে পুজো হয়। সাধারণত দুপুর ১২-১ নাগাদ পুজো শুরু হয়। ওই দিন কীর্তনও হয়। তবে জাঁকজমক বেশি হয় উল্টোরথে। এদিন পালা কীর্তন হয়। ভোগ বিতরণ চলে রাত ১০টা-১১টা পর্যন্ত।

কিন্তু উল্টোরথে কেন বেশি জাঁকজমক? কুমারেশবাবু জানালেন, আগে তাঁদের বাড়ি ছিল জগন্নাথের মাসীর বাড়ি। তাই প্রথম থেকেই উল্টোরথটা হয়ে আসছে। তাই জাঁকজমক বেশি। প্রথমদিকে সোজা রথটা হত মধ্যমগ্রামের বঙ্কিমপল্লীতে এক ঠাকুরমশাইয়ের বাড়ি থেকে। ঠাকুর ওখানেই থাকতেন। কিন্তু ঠাকুরমশাইয়ের মৃত্যুর পর ওনার ছেলে আর ভার বইতে পারছেন না বলে ঠাকুর দিয়ে যান দত্ত বাড়িতে। তখন থেকে সোজা রথটাও হচ্ছে। তবে সাদামাটাভাবে। অর্থনৈতিক সংস্থান সে রকম না থাকায় ২টো উৎসব সমানভাবে টানা সম্ভব হয় না। তিনি আরও জানান, রথ যখন শুরু হয় তখন মধ্যমগ্রাম কালীবাড়ি সহ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিরা যুক্ত ছিলেন। কালের নিয়মে আস্তে আস্তে দায়িত্ব নেওয়ার লোকের অভাব দেখা দেয়। এখন এটা শুধুই দত্তবাড়ির রথযাত্রা।

Ratha Yatra
চলছে শেষ মুহুর্তের প্রস্তুতি, ছবি – প্রিয়া মুখোপাধ্যায়

তবে মধ্যমগ্রাম কালীবাড়ি কমিটির তরফে সনজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় জানান যে প্রথম থেকেই এটা দত্তবাড়ির রথ। মধ্যমগ্রামের বঙ্কিমপল্লীর বাসিন্দা রণজিৎ দত্ত এই রথ চালু করেন। পরে তিনি অন্যত্র চলে যান। তাঁর ভাই বৈদ্যনাথ দত্ত তারপর থেকে রথের দায়িত্ব নেন। তাঁর বয়স হয়ে গিয়েছে। কিন্তু আজও দত্তবাড়িই এই রথযাত্রা উৎসব করে আসছে। এক সময় মধ্যমগ্রাম কালীবাড়ি চত্বর এখনকার মত ঘেরা ছিল না। রথটা কালীবাড়ির এলাকার মধ্যে থাকত। তাই অনেকে ভাবতেন কালীবাড়িও এই রথের সঙ্গে যুক্ত।

চালু হওয়া নিয়ে যতই মতপার্থক্য থাক, প্রতিবারের মতো এবারও সোজা রথের দুদিন আগে থেকেই মধ্যমগ্রামে মেলা বসতে শুরু করেছে। কিন্তু লোকজনের মানসিকতা অনেক বদলে গিয়েছে বলে জানালেন কুমারেশবাবু। একটু নস্টালজিক হয়ে তিনি বললেন, এক সময় মধ্যমগ্রামে রথবাড়ি নামে পরিচিত ছিল তাঁদের বাড়ি। এখন লোকসংখ্যা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সেই নাম লুপ্তপ্রায়। আগে এখনকার মতো প্লাস্টিকের ফুল পাওয়া যেত না। কাগজের ফুল দিয়ে রথ সাজানো হত। সেই কাগজের ফুল তৈরি করে দিতেন স্থানীয় বাসিন্দা দাদা-দিদিরা। কিন্তু এখন সে দিন গেছে। এখন আর কারও সে ভাবে সহযোগ চোখে পড়ে না। তবুও চলছে দত্ত বাড়ির রথ। — প্রতিবেদক – প্রিয়া মুখোপাধ্যায়

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *