Festive Mood

কোন দেবতার আরাধনায় কেন ছট পুজো করা হয়, পুজোর সঠিক নিয়মাবলী

ভারত ছাড়াও একাধিক দেশে ছট পুজোর প্রচলন আছে। জাপান, নিউজিল্যান্ড, মালয়েশিয়া, ফিজি, পাপুয়া নিউ গিনির মত দেশসমূহে এই পুজোর চল দীর্ঘদিনের।

কার্ত্তিক মাসের শুক্ল ষষ্ঠী। বৈদিক যুগ থেকে এই দিনেই সূর্যদেবতার পুজো চলে আসছে। ছট পুজো হল আসলে সূর্য পুজো। তাহলে নাম কেন ছট পুজো? আসলে ছয় কথাটাকে নেপাল বা উত্তর ভারতের অনেকে ছট বলে থাকেন। পুজোটি ষষ্ঠীর দিন হয়, সেখান থেকেই ছট শব্দের উৎপত্তি। আর তা থেকেই ছট পুজো।

ত্রেতাযুগে শ্রীরামচন্দ্র ও সীতাদেবী শুক্ল ষষ্ঠীর দিনেই সূর্যদেবের আরাধনা করেছিলেন। আবার দ্বাপরে সূর্যপুত্র কর্ণ অঙ্গদেশের রাজা ছিলেন। তিনিও সূর্যদেবের পুজো করেন। অঙ্গদেশ এখন বিহারের ভাগলপুর হিসেবে চিহ্নিত। পুরাণেও উল্লেখ আছে ছট পুজোর।


ভারতের উত্তরাখণ্ড, বিহার, উত্তরপ্রদেশ, ঝাড়খণ্ড, মধ্যপ্রদেশ ও নেপালে ছট পুজো হয় প্রধানতম উৎসবের মেজাজে। ভারত ছাড়াও পূর্ব ও দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার একাধিক দেশ ও অস্ট্রেলিয়ায় ছট পুজোর প্রচলন আছে। জাপান, নিউজিল্যান্ড, মালয়েশিয়া, ফিজি, পাপুয়া নিউ গিনির মত দক্ষিণ পূর্ব এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় দেশসমূহে এই পুজোর চল দীর্ঘদিনের।

Chhath
ফাইল : ছট পুজো

যাঁরা ছট পুজো করে থাকেন, তাঁরা ভাইফোঁটার পর থেকেই টানা নিরামিষ খান। এই নিরামিষে পেঁয়াজ রসুনও জায়গা পায় না। পুজোর দু’দিন আগে লাউয়ের যেকোনও পদ খেতে হয়। পুজোর ঠিক আগের দিন ‘খারনা’ নামের একটি নিয়ম পালিত হয়। এই সময় সূর্যদেবের উদ্দেশ্যে পায়েস, লুচি, কলা অর্পণ করা হয়। নিঃশব্দ ঘরে এই পুজো হয়ে থাকে। পুজোর শেষে প্রসাদ সকলে ভাগ করে খান। ব্যস এই পর্যন্তই। এরপর চলে নির্জলা উপবাস।


ছট পুজোর দিন সূর্যাস্তের সময় পড়ন্ত সূর্যকে উদ্দেশ্য করে নদীতে কোমর জলে নেমে পুজো সারেন ভক্তরা। সূর্যদেবের উদ্দেশ্যে এই পুজো বলে, সূর্য ওঠার মুহুর্ত ও সূর্য ডোবার মধ্যে শেষ করতে হয় পুজো। এ পুজোর বিশেষত্ব হল এ পুজোয় না লাগে কোনও মূর্তি, না লাগে কোনও পুরোহিত। হিন্দুদের পুজোর রীতিতে এমন জিনিস বড় একটা চোখে পড়েনা।

ছট পুজোর ডালাতে থাকে হলুদ গাছ, আম পল্লব, নারকেল, কলার কাঁদি, বিভিন্ন ফল, ঠেকুয়া ও খাস্তা টিকরি। নদীর ঘাটে বসে একমনে সূর্যদেবের আরাধনা করার পর নামতে হয় কোমর জলে। নদীর বুকে দাঁড়িয়ে পুজোর ডালা সূর্যদেবের উদ্দেশ্যে অর্পণ করে, ধূপ ধুনো দেখিয়ে হয় আরতি। অবশেষে পরিবারের সকলের নাম করে একটা একটা করে প্রদীপ ভাসিয়ে দেওয়া হয় নদীর বুকে। এটাই এই পুজোর নিয়মরীতি। ডালার প্রসাদ বাড়িতে নিয়ে যান সকলে।

বাড়ি ফেরার পরও কিন্তু উপোস ভাঙা হয় না। পরের দিন ভোরে আরও একবার সূর্য পুজোর জন্য ঘাটে যেতে হয়। যাঁরা মানত করেন তাঁরা বাড়ি থেকে ঘাট পর্যন্ত দণ্ডি কাটেন। এই পুজো বেশ দুরূহ। গোটা একটা দিন নির্জলা উপবাস থাকা সবার জন্য মুখের কথা নয়। এমনকি দণ্ডি কাটাও বেশ কষ্টকর। অত্যন্ত নিষ্ঠার সঙ্গে পালিত হয় ছট পুজো। ছট পুজোর শেষ দিনে ‘মৎস্যমুখী’ অনুষ্ঠান হয় অনেক পরিবারে।

পৌরাণিক মতে ছট পুজো একাধারে সূর্যদেব, মা অন্নপূর্ণা ও গঙ্গাদেবীর পুজো। এ পুজোর পিছনে একটি সামাজিক কারণও আছে। বৃষ্টি না হলে প্রখর তাপে মাঠ শুকিয়ে যেত। ফসল হত না। সেজন্য সূর্যদেবকে তুষ্ট করতেই এই পুজোর শুরু বলে একটি কাহিনি প্রচলিত আছে। সূর্যদেব তুষ্ট হলে মাঠঘাট, খালবিল শুকবে না। মাঠে ফসল ফলবে। অনেকের বিশ্বাস, ছট পুজো করলে সূর্যদেবের প্রত্যক্ষ উপস্থিতি জীবনে বিঘ্ননাশ করে, দুঃখনাশ করে, সুখ ও অর্থ-বৈভব আনে।

সূর্যের কিরণে এই জগৎ আলোকিত। পৃথিবীতে প্রাণের সঞ্চার সূর্যালোকের জন্যই। সূর্যদেবের উদ্দেশ্যে কার্ত্তিকের ছ’ দিনব্যাপী উৎসব ছট পুজো সারা বিশ্বে পালিত হয় তাঁকে তুষ্ট রেখে জগৎ সংসারের সার্বিক মঙ্গলের কামনায়।

Show Full Article

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button