Mythology

ভগবান শঙ্করের আদেশে মা বাঁচালেন সন্তানকে, ঘটল অদ্ভুত ঘটনা

মা খুব ভক্তিমতী ছিলেন। নিত্যপুজোয় তাঁর নিষ্ঠার কোনও অভাব ছিলনা। ভগবান শঙ্করের প্রতিই ছিল তাঁর অগাধ বিশ্বাস ভক্তি। একদিন ভগবান স্বপ্ন দিলেন।

সিঁড়ি ভেঙ্গে উঠতে যাব, চোখ পড়ল কয়েকজন সাধুবাবা বসে আছেন। সিঁড়িতে নয়, নিচে-পাশে। তাঁদের মধ্যে একটু আলাদাভাবে আলাদা মেজাজে একজন বসে আছেন পাথরে হেলান দিয়ে। দেখে বেশ ভাল লাগল। এগিয়ে গেলাম তাঁর দিকে। দেখলাম এক টুকরো কাপড় দিয়ে ঢেকে রেখেছেন ওই জায়গাটুকু। যেন না পড়ার ইচ্ছেটা ছিল বেশি। গায়ের রং ময়লা বলতে যা তাই–ই। তবে তাঁকে বেশ উজ্জ্বল করে রেখেছে ভস্ম। একেবারে আপাদমস্তক।

দাঁড়ালে জটা প্রায় পা পর্যন্ত হবে বলেই মনে হল। চোখদুটো যেন জবা, গাঁজা খাওয়া চোখ। মুখের গড়ন চাপা হলেও নাকটা বেশ খাড়া। গালভর্তি দাড়ি। কাঁচায় পাকায় বেশ মানানসই। উচ্চতার আন্দাজ করতে পাড়লাম না। তবে লম্বা নিঃসন্দেহে। দোহারা চেহারা। বয়স আন্দাজ ৬০/৬৫ হবে। পাশে লাউ-এর খোলা দিয়ে তৈরি একটা কালো কুচকুচে পাত্র। একেবারেই ছোট্ট একটা ঝোলা। কম্বল টম্বল কিছু দেখলাম না। দেখলাম লম্বা একটা চিমটে। পাথরের গায়ে হেলান দিয়ে রাখা আছে।


ভাবতে অবাক লাগে তপোবন ভারতের সাধুদের কথা। প্রচণ্ড শীতের হাত থেকে রক্ষা পেতে কত আয়োজন নিয়ে এসেছি আমরা। অথচ এই সাধুবাবা সামান্য একটা নেংটি পরে চিমটে হাতে এসেছেন অমরনাথ দর্শনে। দেহাত্মবোধ যেন ঘুচেই গেছে।

এগিয়ে গেলাম আরও কাছে। প্রণাম করে বসলাম মুখোমুখি হয়ে। মিনিট পাঁচসাত কেটে গেল চুপচাপ। একটা কথাও বললেন না সাধুবাবা। আমিই শুরু করলাম,


– বাবা আপকা ডেরা কাঁহা?

কথার কোনও উত্তর দিলেন না। কেটে গেল আরও কয়েক মিনিট। হাবভাবে বুঝে গেলাম, সাধুবাবা কথা বলতে অনিচ্ছুক। তবুও বসে রইলাম চুপ করে। আরও কিছুটা সময় কেটে গেল। বললাম,

– বাবা, আপ বিড়ি পিতে?

গাম্ভীর্যের প্রলেপ মাখানো সারা মুখে। স্থির দৃষ্টি। ভ্রুক্ষেপ নেই কোনও দিকেই। তবে বিড়ি খাওয়ার ব্যাপারে সম্মতি জানিয়েও মুখে বললেন,

– ম্যায় গাঁজা পিতা।

একটা বিড়ি ধরিয়ে হাতে দিলাম। মুখে দিয়ে টানলেন। কোনও কথা নেই মুখে। এইভাবে কেটে গেল আরও অনেকটা সময়। সাধুবাবা একটু অন্যমনস্ক হলেন। আমি আবার সেই একই প্রশ্ন করলাম,

– বাবা, আপকা ডেরা?

বেশ গম্ভীরসুরেই উত্তর দিলেন চোখবুজে,

– নর্মদা। ওখানে থাকি, তবে ডেরা নেই কোথাও।

উত্তর পেতেই জিজ্ঞাসা করলাম,

– আপকা ঘর কাঁহা থা?

চোখদুটো খুলে আমার চোখের উপর চোখ রেখে বললেন,

– পতা নেহি।

কথাটা শুনতে কেমন লাগল। ‘পতা নেহি’। তাই প্রশ্নটা একটু ঘুরিয়ে করলাম অন্যভাবে,

– বাবা আপ ঘর ছোড়া কিঁউ?

কোনও উত্তর নেই। আমিও ছাড়ার পাত্র নই। বসে রইলাম। সাধুবাবার বিড়ি শেষ। মোটেই পাত্তা দিচ্ছে না আমাকে। পাশ দিয়ে চলে যাওয়া অমরনাথ যাত্রীদের দিকে মাঝে মাঝে এক একবার তাকাচ্ছেন আবার চোখ বুঝে ফেলছেন। এরমধ্যে আমার সঙ্গীরা সবাই চলে গেছে অমরনাথ গুহায়। সাধুবাবার ভাব বুঝে এবার প্রসঙ্গ পাল্টে বললাম,

– আপকা সম্প্রদায় ক্যা হ্যায়?

একটু প্রসন্ন চিত্তে উত্তর দিলেন,

– ম্যায় তো বেটা গিরি সম্প্রদায়কা নাগা সাধু হুঁ।

এতক্ষণে একটু তৃপ্তি পেলাম কথা বলাতে। জিজ্ঞাসা করলাম,

– আপ কভি মানস কৈলাস মে গয়ে হ্যায়?

বুকের উপর এসে পড়া একটা জটা পিছনে সরাতে সরাতে বললেন,

– হাঁ বাচ্চা, দো বার গয়া হু।

কথা একবার যখন শুরু হয়েছে তখন কথা হবে অনেক। বললাম,

– মরুতীর্থ হিংলাজ মে কভি?

মাথা নাড়িয়েও মুখে বললেন,

– উঁহা ভি দো বার। বহুত খতরনক রাস্তা হ্যায়।

একটু বাগে পেয়েছি মনে করে জানতে চাইলাম,

– আপ অমরনাথ কিতনি বার আয়ে হ্যায়?

ধীর ও শান্ত কণ্ঠে উত্তর দিলেন সাধুবাবা,

– ম্যায় ছাব্বিশবার অমরনাথ আয়া হুঁ, অউর যিতনা দিন জিউঙ্গা উতনা হি দিন আতা রহুঙ্গা।

সাধুসঙ্গের সময় সাধুদের নিজের আয়ত্তে এনে কথা বলাতে আমার একমাত্র উপকরণ বিড়ি। অর্থ দিয়ে নয়, বিড়ি দিয়ে কথা শুরু করে, বিড়ির যোগান দিয়ে মনের কথা জেনে, বিড়িতেই শেষ করেছি সাধুজীবনের শেষ কথা শুনে। অনেকের কাছে শুনেছি, সাধুরা নাকি কথা বলতে চায় না। কথাটা মোটেই ঠিক কথা নয়। কেউই তার ব্যাঙ্কে কত টাকা সঞ্চিত আছে, হঠাৎ জিজ্ঞাসা করলে বলবে না, এ কথা সত্য। কথায় কথায় বলবে তখনই, পরিবেশ, পরিস্থিতি ও আন্তরিকতার সৃষ্টি হলে। আমি সেইভাবেই জেনেছি সাধুজীবনের কথা। আবার একটা বিড়ি ধরিয়ে দিলাম সাধুবাবার হাতে। ঘুরে ফিরে এলাম সেই আগের প্রশ্নে,

– বাবা, আপ ঘর ছোড়া কিঁউ?

এবারও বললেন বেশ প্রসন্নমনে,

– ম্যায়নে তো বেটা ঘর নেহি ছোড়া, হামকো ছোড়ওয়া দিয়া।

সাধুবাবা ঘর ছাড়েননি, ছাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। কথাটা শুনে কেমন যেন একটা খটকা লাগল। কৌতূহলও বেড়ে গেল। জিজ্ঞাসা করলাম,

– ক্যায়সে?

উত্তর না দিয়ে চুপ করে রইলেন মিনিটখানেক। তারপর সাধুবাবা শুরু করলেন গৃহত্যাগের কাহিনি। চোখদুটো একেবারেই স্থির। লক্ষ্য আমার চোখের দিকে।

– বেটা, আমার দেশ আর ঘর কোথায় ছিল, আমার বাবা মা কে, কোথায় ছিল, আমি কি জাত, কোথায় আমার জন্ম, সে সব কিছুই জানি না আমি। আমার গুরুজির মুখে যেটুকু শুনেছি সেটুকুই বলছি তোকে। এসব কথা জানার জন্য তাঁর কাছে কখনও কৌতূহল প্রকাশ করিনি, আজও নেই।

এটুকু বলে চুপ করে রইলেন। চোখদুটোও যেন বুজে এল আপনা থেকে। মুখে ভাবের কোনও পরিবর্তন হল, এমন কিছু মনে হল না। তবে কথাগুলো শুনে একটা ভাবনা এল আমার মনে, তাহলে কি সাধুবাবার মা বাবার ঠিক নেই! আর কিছু ভাববার অবকাশ দিলেন না সাধুবাবা,

– বাচ্চা, সাধুর কাছে এসেছিস সাধুর কথা শুনতে। ‘লেকিন পুরা বাত না শুন কর এয়সা শোচনা ভি পাপ হ্যায়।’

কথাটা শুনে একেবারে থতমত খেয়ে গেলাম। মনের চুরি। ধরা পড়ে গেছি। তাই পায়ে হাত দিয়ে বললাম,

– বাবা, আমার মানসিক অপরাধ আপনি ক্ষমা করে দিন।

মুখে কিছু বললেন না। হাসিমুখে হাতটা অভয়সূচক করে মাথাটা নাড়লেন। তারপর আবার শুরু করলেন তাঁর অতীত জীবনকথা,

– বেটা, আমার মায়ের সন্তান জন্মের পরেই মারা যেত। এইভাবে শুধু একটা নয়, চার চারটে সন্তান মারা যায়। ফলে মায়ের মনটা একেবারে ভেঙ্গে পড়ে। সন্তান অন্তত একটা চাই-ই। গুরুজির মুখে শুনেছি, মা আমার খুব ভক্তিমতী ছিলেন। নিত্যপুজোয় তাঁর নিষ্ঠার কোনও অভাব ছিল না। ভগবান শঙ্করের প্রতিই ছিল তাঁর অগাধ বিশ্বাস ভক্তি।

একটু থামলেন। বেদনাময় ঘটনা অথচ ভস্মমাখা মুখ নির্লিপ্ত। সুখ দুঃখের কোনও অভিব্যক্তিই নেই মুখখানায়। কেমন যেন ফ্যালফ্যাল করে তাকালেন সাধুবাবা। তবে এ দৃষ্টিতে মনে হল না কাউকে লক্ষ্য করে বা কারও দিকে তাকালেন। তাকাতে হয় তাই তাকানো, এমন একটা চোখের ভাব। কোনও কথা বললাম না। উদাসীনভাবেই বললেন,

– এইভাবে একের পর এক সন্তান হয়ে মারা যাওয়ায় শোকাতুরা মা একদিন মানত করলেন, ‘হে ভগবান শঙ্কর করুণাময়, এবার যদি আমার সন্তান বাঁচে, তাহলে তাকে কোনও সাধুর হাতে অর্পণ করে দিয়ে আসব। একটি দীর্ঘায়ু সন্তান দাও প্রভু।’

সাধুবাবা করুণভাবে তাকালেন আমার মুখের দিকে। কেমন যেন একটা বেদনার ভাব ফুটে উঠল চোখদুটোয়। মুখ থেকে কোনও কথা সরল না আমার। চেয়ে রইলাম সাধুবাবার মুখের দিকে। তিনি বলে চললেন,

– মায়ের আকুল প্রার্থনা শুনলেন ভগবান শঙ্কর। মায়ের গর্ভে এলাম আমি। জন্ম হল আমার। জন্মের দেড়বছর পরের কথা। একদিন ভগবান শঙ্কর স্বপ্ন দিলেন মাকে, ‘কথা ছিল সন্তানকে সাধুর হাতে তুলে দেয়ার, এখনও দিসনি। এ সন্তানও কিন্তু তাহলে আর প্রাণে বাঁচবে না।’

মুখমণ্ডলটা আরও করুণ, আরও বিবর্ণ হয়ে গেল সাধুবাবার। একইভাবে বসে রইলাম আমি। হঠাৎ উচ্চস্বরে বলে উঠলেন, ‘ভগবান শঙ্কর কি জয়’। মনে হল মনের নিরস দুর্বলতাকে ঝেড়ে ফেললেন তিনি। বললেন,

– এরপর মা আমার প্রাণ আর তাঁর কথা রক্ষা করলেন। সমস্ত মায়া পরিত্যাগ করে মমতাময়ী মা আমাকে তুলে দিয়ে আসলেন জুনাগড়ের পাহাড়ে অবস্থানরত গিরি সম্প্রদায়ের এক সাধুবাবার হাতে। তখন আমার বয়েস দেড়বছর। বেটা, এসব কথা শুনেছি আমার গুরুজির মুখে।

ভাবলাম, সারাজীবন নির্লিপ্ত জীবনযাপন করলেন যে মানুষটি, তাঁর মধ্যেও এত বেদনা। মহামায়ার কি বন্ধনসূত্র! যাকে কখনও চোখেই দেখেননি, যার এতটুকু স্নেহ মায়া ভালবাসার স্বাদ যিনি গ্রহণ করেননি কখনও, যার রূপ স্বপ্নেও কল্পনা করতে পারবেন না যিনি, তার মুখেও বেদনার ছাপ! এ বেদনা কি মায়ার বন্ধনের না অনাস্বাদিত মায়ের বাহু বন্ধনের?

কপালে হাতদুটো ঠেকিয়ে নমস্কার করে বললেন,

– বেটা, সেই সাধুবাবাই আমার গুরুজি মহারাজ। তিনিই আমাকে কোলেপিঠে করে মানুষ করেছেন। তিনিই আমার সব। মা বাবা আত্মীয় স্বজন সব তিনিই। গুরুজি এখনও জীবিত আছেন। তার বয়স এখন ১৫০ বছর। আর বেটা, সেই থেকেই চলছে আমার অটুট ব্রহ্মচর্যের জীবন।

এ কথার পর আমরা উভয়েই কিছুক্ষণ বসে রইলাম চুপ করে। নিজেরই খুব খারাপ লাগছে অতীতের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়ার জন্যে। তাই সাধুবাবার মনটাকে হালকা করতে প্রসঙ্গ পালটে দিলাম,

– আচ্ছা বাবা, শুনেছি সাধুসঙ্গের ফল হয় তৎক্ষণাৎ আর তীর্থের ফল বিলম্বে পাওয়া যায়, এর কারণ কি? এ ব্যাপারে আপনার কি কিছু জানা আছে?

ঘাড় নাড়লেন সাধুবাবা। একটা বিড়ি ধরিয়ে হাতে দিতে বললেন,

– হাঁ বেটা, এ কথা ঠিক। কেন জানিস? প্রকৃত সাধুসন্ন্যাসী যারা, তাদের নিরবচ্ছিন্ন সাধনভজন বা তপস্যার প্রভাবে দেহের ভিতরে একটা তেজ বা শক্তির সৃষ্টি হয়। ফলে দেহ থেকে বিচ্ছুরিত হয় এক প্রকার স্নিগ্ধজ্যোতিঃ। এটা সাধারণ মানুষ খালি চোখে দেখতে পায় না। যাদের জ্ঞাননেত্র খুলে গেছে তারাই শুধু দেখতে পায়।

এবার ধর কেউ হয়ত সাধুসঙ্গ করছে। সঙ্গের সময় সাধুর দেহের ওই জ্যোতিঃ বিদ্যুতের মতো প্রবিষ্ট হতে থাকে সঙ্গীর দেহে। ফলে আনন্দের একটা হিল্লোল বয়ে যায় তার দেহমনে। ক্রমাগত সাধুসঙ্গ করতে থাকলে রিপুর তাড়না আর প্রভাবও কমে যায়। মানসিক আনন্দ আর প্রশান্তি বাড়তে থাকে। এর জন্যই বলে সাধুসঙ্গের ফল তৎক্ষণাৎ হয়।

বিড়িটা নিভে গেছে, ফেলে দিয়ে সাধুবাবা আর একটা চাইলেন। চট করে ধরিয়ে দিলাম। ঠান্ডায় বিড়িগুলো কেমন যেন মিইয়ে গেছে। ভাল করে জ্বলে না। বিড়ির আগুনে জোর দেয়ার জন্য বারকয়েক ফুকফুক করে টেনে তারপর লম্বা একটা টান দিয়ে বললেন,

– এই জ্যোতিঃ বেটা সব মানুষেরই সত্ত্ব রজো আর তমো, যার ভিতরে যে গুণ বেশি, তার ভিতর থেকে সেই জ্যোতিঃই বিচ্ছুরিত হয়। যেকোনও তপস্বী বা সাধুসন্ন্যাসীদের জ্যোতিঃ প্রধানত সত্ত্বগুণাশ্রিত। সাধনভজন বিমুখ ও অসৎ ব্যক্তিদের জ্যোতিঃ সম্পূর্ণ তমোগুণাশ্রিত। অতিমাত্রায় উৎকৃষ্ট ভোগীদের জ্যোতিঃ রজোগুণী। যারজন্যই তো মানুষের দেহমন ও চিন্তা কলুষিত অসৎসঙ্গে। আসলে বেটা ওই তমোগুণী জ্যোতিঃই ক্রিয়া করে দেহমনের উপর। তাই অনেক মানুষই ভাল বা খারাপ হয়ে যায় সৎ বা অসৎসঙ্গের গুণে।

এবার চারদিকে একবার চোখ ঘুরিয়ে দেখে নিলেন সাধুবাবা। এক ভদ্রমহিলা দশটা পয়সা সাধুবাবার কোলের কাছে ছুঁড়ে দিয়ে চলে গেলেন। এতে তিনি একটু মুচকি হাসি হাসলেন। তারপর আবার শুরু করলেন,

– বেটা, তীর্থক্ষেত্রে ক্রমাগত সাধুসন্ন্যাসীদের সমাগমে তাদের এই জ্যোতিঃ ভূমিতে প্রবিষ্ট হয়ে তেজোপূর্ণ ও পবিত্র করে তোলে তীর্থভূমিকে। ফলে তীর্থ গেলে সেই ভূমির প্রভাব তীর্থযাত্রীদের মনকে করে তোলে আনন্দময়। আর বেটা, তীর্থ ও তার মাহাত্ম্যকথা যে যত বেশি ভাববে, তত বেশি পবিত্র ও নির্মল হবে তার মন। তীর্থ সম্পর্কে শুদ্ধ ও নির্বিচার ভাবনাই ফল বৃদ্ধি করে তীর্থদর্শনের আর তা নির্ভর করে ওই ভাবনার উপরে। সেটা বিলম্বেই হয়েই থাকে।

এবার আমাকে উঠতে হবে। মনটা চঞ্চল হয়ে উঠেছে। দেখছি সঙ্গীরা সব ফিরে আসছে অমরনাথ দর্শন করে। অনেকটা সময় কেটে গেল এখানে। তাই মূল প্রশ্ন যেটা আমার অন্তরে সাধু দেখলেই ঘুরপাক খায়, সেটাই একেবারে সোজাসুজি করে বসলাম,

– আচ্ছা বাবা, আপনি তো জন্মের পর অজ্ঞান অবস্থা থেকেই জীবনের এতগুলো বছর কাটিয়ে এলেন এ পথে কিন্তু ভগবানের অস্তিত্ব আছে, এমন উপলব্ধি বা দর্শন কি কিছু হল?

কথাটা শুনে তাকালেন আমার মুখের দিকে। তাকিয়ে রইলেন বেশ কয়েক মুহুর্ত। কি ভাবলেন জানি না। তারপর এক অসম্ভব আত্মপ্রত্যয়ের সুরে বললেন,

– ‘শালা শুয়ার কা বাচ্চা ভগবান উসকা মা*** **। শালা হামকো দেখ কর ডরসে ভাগতা। ম্যায় ভগবান হুঁ। ইয়ে সংসার মেরা হ্যায়। যাও যাও বাচ্চা, আপনা আপনা কাম কারো, আপনি আত্মা কা ভজন কারো সদা, আনন্দ মে রহো।’

কথাগুলো এক নিঃশ্বাসে বলেই মুখখানা অন্যদিকে এমনভাবে ঘোরালেন, যাতে মনে হল আর কথা বলায় তার আপত্তি আছে। এমনিতেই আমাকে উঠতে হবে তাই আর কথা বাড়ালাম না। প্রণাম করলাম পায়ে হাত দিয়ে। সাধুবাবা তার দু হাত আমার মাথায় স্পর্শ করে আশীর্বাদ করলেন। আমি উঠে পড়লাম।

Show Full Article

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button