Festive Mood

চৈত্র সংক্রান্তিতে ‘ভাই ছাতু’, হারাতে বসা এক পুরাতনি প্রথা

উড়তে থাকা ছাতুর ঝড় আর মেঠো পথের ধুলো ঢেকে দেয় পুরাতন বছরের শেষ সূর্যকে। বাংলা বর্ষপঞ্জির শেষ দিনে নতুন বছরকে স্বাগত জানানোর প্রস্তুতি শুরু হয় বাংলায়।

আজ চৈত্র সংক্রান্তি। বসন্তের শেষ দিনে আপামর বাংলার মানুষ মেতে উঠেছেন চৈত্র সংক্রান্তি পার্বণে। কেউ কেউ এই পার্বণকে বলে থাকেন ‘ভাই ছাতু’ উৎসব। অনেক পরিবারে এদিন ভাইয়ের মঙ্গল কামনায় নিষ্ঠা ও ভক্তি সহকারে পালন করা হয় ‘ভাই ছাতু’ উৎসব। এ যেন এক অকাল ভাইফোঁটা।

এই উৎসবের অন্যতম আকর্ষণ হল ছাতু। ভাই ছাতুতে প্রধানত ব্যবহার হয় যবের ছাতু। এদিন ঠাকুর ঘরে প্রদীপ, ধূপ জ্বালিয়ে প্রথমে ভাইয়ের কপালে ফুল দিয়ে একবার চন্দনের তিলক কেটে দেন বোনেরা। তারপর ভাইয়ের হাতে পরপর তিনবার তুলে দেওয়া হয় টক দই, তেঁতুল জল, স্বাদমত চিনি আর নুন দিয়ে মাখা যবের ছাতুর মণ্ড।

বাড়ির বাকি সদস্যরাও বঞ্চিত হন না। তাঁদেরকেও এদিন খেতে হয় ছাতুর মণ্ড। তবে সেই ছাতুর স্বাদ হয় একটু আলাদা। মণ্ডের স্বাদ বাড়াতে তাতে যোগ করা হয় মুড়ি, চিঁড়ে, মুড়কি, টক দই, চিনি আর নুনের আনুপাতিক মিশ্রণ। কেউ কেউ আবার ছাতুর সাথে পরিমাণমত জল মিশিয়ে গুড়, কলা, দুধ, আম ইত্যাদি সহযোগেও ভোজন সারেন।

Bengali Festivals

ভাইফোঁটার মতই এই উৎসবে ভাই-বোন একে অপরের হাতে উপহার তুলে দেন। এরপর সারাদিন চলে হৈ-হুল্লোড়। এদিন কিন্তু ভাইফোঁটার দিনের মত আমিষ খাবার খাওয়া একেবারে মানা। সবটাই হতে হবে নিরামিষ। দুপুর বা রাতে নিরামিষ পাতে বিশেষ করে জায়গা পায় কাঁচা আমের নানা পদ ও তেঁতোর পদ।

গ্রামবাংলায় চৈত্র সংক্রান্তির দিন যেসব পরিবারে ছাতু সংক্রান্তি পালনের রীতি চলে আসছে, সেসব পরিবারের মহিলারা কোনও জলাশয়ের ধারে দাঁড়িয়ে কুলোর বাতাস দিয়ে ছাতুর ধুলো উড়িয়ে একসঙ্গে বলে ওঠেন, শত্রুর মুখে দিয়া ছাই, ছাতু উড়াইয়া ঘরে যাই। সেই উড়তে থাকা ছাতুর ঝড় আর মেঠো পথের ধুলো ঢেকে দেয় পুরাতন বছরের শেষ সূর্যকে। এভাবেই বাংলা বর্ষপঞ্জির শেষ দিনে নতুন বছরকে স্বাগত জানানোর প্রস্তুতি শুরু হয়ে যায় এপার ওপার দুই বাংলাতেই।

যদিও খুব কম সংখ্যক পরিবারেই আজও নিষ্ঠা সহকারে ভাই ছাতুর নিয়মকানুন মেনে চলা হয়। বাকি এই সনাতনি বঙ্গপ্রথা ক্রমশ হারিয়ে যাচ্ছে কালের গর্ভে।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *