Sports

পাকিস্তানকে গোহারান হারাল ভারত, অটুট রইল বিশ্বকাপে পাকবধের রেকর্ড

বিশ্বকাপে ভারতকে হারানো স্বপ্নই রয়ে গেল পাকিস্তানের। ম্যাঞ্চেস্টারের ওল্ড ট্রাফোর্ড স্টেডিয়ামে রবিবার ভারত-পাকিস্তান ম্যাচের পারদটা উঠেছিল ঠিকই। তবে তা খেলা শুরুর আগে পর্যন্ত। খেলা শুরু হওয়ার পর থেকে যেভাবে ভারত দাপট দেখাতে শুরু করে তাতে পাক সমর্থকদের হতাশা বাড়তে থাকে। আর তা যে নিছকই সাময়িক ছিল না তা বোঝা যায় ম্যাচে ভারতের দাপটে শাসন দেখে। এদিন কার্যত পাকিস্তানকে কোনও বিভাগেই দাঁড়াতে দেয়নি ভারত। সবকিছুর মধ্যে যদি পাকিস্তানের কোনও একজন খেলোয়াড় নজর কেড়ে থাকেন তবে তিনি মহম্মদ আমির। তাঁর বোলিংয়ের মান কিছুটা হলেও এদিন বিপাকে ফেলে ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের। এর বাইরে পাকিস্তানের পুরোটাই ছিল ফ্লপ শো। না বোলিং, না ফিল্ডিং, না ব্যাটিং, কোনও বিভাগেই ভারতের ধারে কাছে আসতে পারেনি সরফরাজের দল। বৃষ্টির জন্য খেলা ডাকওয়ার্থ-লুইস পদ্ধতি পর্যন্তও গড়ায়। অবশ্য তাতে ৮৯ রানে হারে পাকিস্তান। ফলে ১৯৯২ সালে বিশ্বকাপে ভারত-পাকিস্তান প্রথম মুখোমুখি হওয়া থেকে শুরু করে ২০১৯ বিশ্বকাপে এখনও পর্যন্ত ৭ বার মুখোমুখিতে ৭ বারই ভারতের কাছে হারল পাকিস্তান।

টস জিতে এদিন প্রথমে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেন পাকিস্তানের অধিনায়ক সরফরাজ খান। আবহাওয়া রিপোর্ট বলছিল পরে বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। তাই প্রথমে বোলিং করার সিদ্ধান্ত নেয় পাকিস্তান। বিশেষজ্ঞদের মতে ভারত টস জিতলে হয়ত তারাও বোলিং করার সিদ্ধান্ত নিত। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ম্যাচ মানেই ভারতের জন্য বড় ম্যাচ। এই ম্যাচেই ওপেনিংয়ে ভারত তার সেট জুটি নামাতে পারল না। শিখর ধাওয়ানের চোট থাকায় রোহিত শর্মাকে নামতে হয় কেএল রাহুলকে সঙ্গে করে। এই ২ খেলোয়াড়ের মধ্যে ওপেনিং পার্টনারশিপ তেমন হয়নি। ফলে এঁদের মধ্যে যে তালমিল থাকার দরকার তার ঘাটতি এদিন রানিং বিটুইন দ্যা উইকেটস-এ ধরা পড়েছে। কপাল জোড়ে ২ বার বেঁচেছেন রোহিত। এর বাইরে ২ জনেই শুরু থেকে ধরে খেলে প্রথমে উইকেট হারানো থেকে বিরত রাখেন দলকে। সেইসঙ্গে নিজদের সেট হতে সময় দেন। তারপর দুর্বল বল পেলে প্রহারের রাস্তায় হাঁটেন। পাকিস্তানের স্ট্রাইক বোলার মহম্মদ আমিরকে বুঝে খেলেন। ফলে ২ জনের পার্টনারশিপ ভারতকে শক্ত ভিতের ওপর দাঁড় করাতে থাকে।


রাহুল-রোহিত জুটি এদিন ১৩৬ রান দলের জন্য তুলে দেয়। ওয়াহাব রিয়াজের বলে এখানে ফেরেন রাহুল। ৭৮ বল খেলে ৫৬ রান করেন তিনি। এরপর রোহিত-বিরাট জুটি খেলা এগিয়ে নিয়ে যায়। রোহিত সেঞ্চুরি হাঁকান। অবশ্য তারপরও রোহিতের ব্যাট এদিন পাকিস্তানের জন্য আতঙ্ক হয়েছিল। ১১৩ বলে ১৪০ রান করেন রোহিত। যেখানে আউট হন সেখানে পিছনের দিকে চামচে শট মারার তাঁর দরকার হয়ত ছিলনা। তাই আউট হওয়ার পর নিজের ভুলের জন্য মাঠেই নিজেকে দোষারোপের ভঙ্গিতে ফেটে পড়েন তিনি। এদিন ৩টি ছক্কা ও ১৪টি চার হাঁকান রোহিত। বিরাট-রোহিত জুটি তোলে আরও ৯৮ রান। এরপর হার্দিক নামেন অনেক আশা নিয়ে। তাঁর কাছে থেকে কিছু জোরদার শট চাইছিল দল। রানের গতিটা একটু বাড়িয়ে নেওয়াটা ছিল লক্ষ্য। সেটা করেও যান হার্দিক। যদিও শুরু থেকে তাঁকে খুব স্বচ্ছন্দ লাগেনি। তবু ১৯ বলে ২৪ রানের একটা ইনিংস খেলে দিয়ে যান হার্দিক। নামেন ধোনি। কিন্তু বেশিক্ষণ ক্রিজে টিকতে পারেননি তিনি। মহম্মদ আমিরের বলে ক্যাচ দিয়ে ফেলেন ধোনি। করেন ১ রান।

কোহলির সঙ্গে এরপর জুটি বাঁধেন বিজয় শঙ্কর। বিরাট প্রহারের মেজাজে ছিলেন। রানও উঠতে থাকে। ওয়াহাব রিয়াজের একটি বলে বিজয় শঙ্করকে ক্যাচ আউট বলে জানিয়ে দেন আম্পায়ার। রিভিউ নেয় ভারত। রিভিউতে দেখা যায় আম্পায়ারের সিদ্ধান্ত ভুল ছিল। এই সিদ্ধান্ত হয় ৪৬.৪ ওভারে। আর সেই সিদ্ধান্ত জানানোর পরই বৃষ্টির জন্য ম্যাচ বন্ধ হয়। প্রায় ৪৫ মিনিট পর বৃষ্টি থামলে ফের শুরু হয় খেলা। তবে ওভার কাটা যায়নি। ৪৭.৪ ওভারে ৭৭ রানের মাথায় মহম্মদ আমিরের একটি বাউন্সারে হুক করতে গিয়ে দেখা যায় বল ধরা পড়ে উইকেট রক্ষক সরফরাজের হাতে। বিরাট আর ফিরে দেখেননি। সোজা প্যাভিলিয়নের দিকে পাড়ি দেন। কিন্তু পরে দেখা যায় বল বিরাটের ব্যাটেই লাগেনি। রিভিউ নিলে বিরাট আউট ছিলেন না। শেষে বিজয় শঙ্কর ও কেদার যাদব বড় শট মারার চেষ্টা করেন ঠিকই কিন্তু ততটা সফল হননি। ভারতের ইনিংস শেষ হয় ৩৩৬ রানে।


৩৩৭ রানের পাহাড় তাড়া করতে নেমে পাকিস্তান খুব ধীরে শুরু করে। হয়ত ক্রিজে সেট হয়ে তারপরই মারতে চাইছিল তারা। এদিকে ভারতের বুমরাহ ও ভুবনেশ্বর কুমার বিষাক্ত বোলিংও শুরু করেন। পঞ্চম ওভারে ৪ বল করার পর ভুবনেশ্বর কুমার পায়ে চোট পান। তাঁর হ্যামস্ট্রিং-এ চোট লাগে। ফলে মাঠ ছাড়তে হয় তাঁকে। অগত্যা ভুবনেশ্বরের ওভারের শেষ ২টি বল করার জন্য বিজয় শঙ্করকে ডাকেন ক্যাপ্টেন কোহলি। জীবনের প্রথম বিশ্বকাপের প্রথম বলটি করতে আসেন বিজয়। সেই বল গিয়ে লাগে ইমাম উল হক-এর পায়ে। এলবিডব্লিউ-র আপিল হয়। আম্পায়ার আঙুল তুলে দেন। এরপর মাঠে যে উচ্ছ্বাস বিরাটবাহিনী বিজয়কে ঘিরে দেখান তা হয়তো বিজয় শঙ্কর জীবনে কখনও ভুলতে পারবেন না। এই প্রাপ্তি জীবনের সেরা মুহুর্ত হয়ে হয়ত থাকবে তাঁর জন্য, বিশ্বকাপে প্রথম বলেই উইকেট পাওয়াও তাঁর জীবনে ইতিহাস হয়ে রয়ে গেল।

ইমাম উল হক ফেরার পর বাবার আজম ও ফকর জামান ক্রিজ কামড়ে লড়াই দিতে থাকেন। রান উঠতে থাকে। বিশাল রান না হলেও উইকেট হাতে থাকা পাকিস্তান লড়াইটা অন্তত দিচ্ছিল। এঁরা ২ জনে পাকিস্তানের স্কোর ১১৭ রান পর্যন্ত টেনে নিয়ে যান। আর এখানেই বাবর আজমকে বোল্ড করে ফেরান চায়নাম্যান কুলদীপ যাদব। বাবর করেন ৪৮ রান। ১১৭ রানে পাকিস্তান তখন ২ উইকেট। এই অবস্থা থেকে ১২৯ রানে পৌঁছতে পাকিস্তান আরও ৩টি উইকেট হারায়। পাকিস্তানের অন্যতম অভিজ্ঞ খেলোয়াড় শোয়েব মালিক ফেরেন ০ রান করে। প্রথম বলেই ফেরেন তিনি। হার্দিকের বল তাঁর ব্যাটে লেগে বেল উড়িয়ে দেয়। এছাড়া পাকিস্তানের সেট ব্যাটসম্যান ফকর জামানকেও ফেরান কুলদীপ। ৬২ রান করে কুলদীপের বলে চাহলের হাতে সহজ ক্যাচ তুলে ফিরতে হয় ফকরকে। পাকিস্তানের বড় ভরসা হাফিজও ফেরেন ৯ রান করে। ৫ উইকেট হারিয়ে পাকিস্তানের আর কিছুই করার ছিলনা। তবু লড়াই দিয়ে যান অধিনায়ক সরফরাজ ও ইমাদ ওয়াসিম। এঁরা রান তেমন তুলতে পারছিলেন না। তবে উইকেট পড়তে দিচ্ছিলেন না। কিন্তু সে লড়াইও বেশিক্ষণ টেকেনি। বিজয় শঙ্করের বলে বোল্ড হয়ে ফিরতে হয় সরফরাজকে। ইমাদ ও সাজাদ খান এরপর মরা ম্যাচে ব্যাট শুরু করলেও বৃষ্টি এসে যায়। খেলা বন্ধ করেন আম্পায়াররা। পাকিস্তান তখন ৩৫ ওভারে ৬ উইকেট হারিয়ে ১৬৬ রান।

প্রায় ১ ঘণ্টার কাছে খেলা বন্ধ থাকার পর বৃষ্টি থেমে যখন ফের খেলা শুরু হয় তখন ডাকওয়ার্থ-লুইস নিয়মে পাকিস্তানের জন্য ওভার কমে ৫০ থেকে ৪০ হয়ে যায়। ৪০ ওভারে টার্গেট দাঁড়ায় ৩০২। যা তখন আক্ষরিক অর্থেই অসম্ভব ছিল। ৩৫ ওভারে ১৬৬ করে ৬ উইকেট হারানো একটা দলের সামনে এমন টার্গেট মানে ম্যাচ এখানেই শেষ। খেলার কেবল নিয়মরক্ষা বাকি রইল। যদিও পুরো ৫০ ওভার খেলা হলেও ওই নিয়মরক্ষাই হত। ম্যাচ বার করা কার্যত অসম্ভব ছিল পাক টেলএন্ডারদের পক্ষে। তবু হারা ম্যাচে হারানোর কিছু না থাকায় মন খুলে ব্যাটিং করেন ইমাদ ওয়াসিম ও শাদাব খান। ৪০ ওভার পুরো করেন তাঁরা। যদিও মাঝে একটা সহজ ক্যাচ ফেলেন কেএল রাহুল। ইমাদ করেন ৪৬ রান। শাদাব করেন ২০ রান। পাকিস্তানের মূল ব্যাটসম্যানেরা যে জঘন্য খেলার নমুনা দেন। তারচেয়ে অন্তত এঁরা ভাল খেলেন। ম্যান অফ দ্যা ম্যাচ হন রোহিত শর্মা। ভারতের পরের খেলা আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে আগামী ২২ জুন।

Show Full Article

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button