Sports

রাতের রং সবুজ মেরুন, রুদ্ধশ্বাস ম্যাচে জিতে আইএসএল চ্যাম্পিয়ন মোহনবাগান

আইএসএল ফাইনালের রাত সবুজ মেরুনের। রাতে জয় পাওয়ার পর বৃষ্টি ভেজা কলকাতায় শুরু হয়ে যায় আতসবাজিতে জয়ের উদযাপন। গোয়াতেও সবুজ মেরুনের আনন্দ উৎসব।

দীর্ঘ প্রতীক্ষার সমাপ্তি। আইএসএল চ্যাম্পিয়ন হল এটিকে মোহনবাগান। রুদ্ধশ্বাস ম্যাচে বেঙ্গালুরু এফসি-কে হারিয়ে এই ট্রফি জিতে নিল তারা। মোহনবাগানের ঘরে ট্রফির হাত ধরে জয় বাংলার ফুটবল প্রেমেরও।

শনিবার সন্ধেয় গোয়ার ফাতোরদা স্টেডিয়ামে খেলা শুরুর পর থেকে বেঙ্গালুরুর পায়ে বল থাকছিল বেশি। কিন্তু পাল্টা আক্রমণে উঠছিল মোহনবাগানও। ১৪ মিনিটের মাথায় বক্সের মধ্যে বলে হাত ছুঁইয়ে রয় কৃষ্ণা মোহনবাগানের জন্য একটি পেনাল্টি এনে দেন।

পেনাল্টি নিতে এসে অব্যর্থ এবং বুলেটের মত শটে গোল করেন দিমিত্রি পেট্রাটোস। কিন্তু এরপর পাল্টা আক্রমণ হানতে থাকে বেঙ্গালুরু। গোল শোধের জন্য মরিয়া আক্রমণে আসা রয় কৃষ্ণাকে প্রথমার্ধের খেলার শেষ মুহুর্তে বক্সের মধ্যেই ফাউল করেন মোহনবাগানের শুভাশিস। ফলে পেনাল্টি পায় বেঙ্গালুরু। সুনীল ছেত্রীর শৈল্পিক শটে জালে জড়ায় বল।

প্রথমার্ধ ১-১ গোলে শেষ হওয়ার পর দ্বিতীয়ার্ধে রয় কৃষ্ণা ৭৮ মিনিটের মাথায় গোল করে খেলার মোড় ঘুরিয়ে দেন। বেঙ্গালুরু এগিয়ে যায় ১ গোলে। খেলা তখন মিনিট ১৫ বাকি। ওই সময়টুকু মোহনবাগানকে ঠেকিয়ে রাখা ছিল কাজ। কিন্তু কিয়ান নাসিরি পরিবর্ত খেলোয়াড় হিসাবে মাঠে নামার পরে তাঁকে বক্সের মধ্যেই পিছন থেকে ফাউল করেন পাবলো পেরেজ।

খেলার ৮৫ মিনিটের মধ্যেই কিয়ানের হাত ধরে ফের পেনাল্টি পায় মোহনবাগান। এবারও সেই অস্ট্রেলিয়ার প্রাক্তন বিশ্বকাপার দিমিত্রি পেট্রাটোসের অব্যর্থ শটে গোল পায় সবুজ মেরুন। সমতা ফেরে খেলায়।

মূল পর্বের খেলা ২-২-তে শেষ হওয়ার পর এক্সট্রা টাইমে গড়ায় খেলা। বেঙ্গালুরুর রয় কৃষ্ণা একটা সুবর্ণ সুযোগ এই সময় নষ্ট করেন। তবে এছাড়া উল্লেখযোগ্য তেমন কিছুই হয়নি। খেলা এরপর গড়ায় টাইব্রেকারে।

টাইব্রেকারের রুদ্ধশ্বাস মুহুর্তে প্রথমে বেঙ্গালুরুর হয়ে গোল করেন অ্যালান কোস্টা। মোহনবাগানের হয়ে সমতা ফেরান পেট্রাটোস। ফের বেঙ্গালুরুর রয় কৃষ্ণা গোল করেন। সমতা ফেরান লিস্টন কোলাসো। তৃতীয় শটে বেঙ্গালুরুর রামিরেজের শট আটকে দেন এটিকে-র গোলকিপার বিশাল কায়েথ। এখানেই কার্যত ম্যাচের মোড় ঘোরে।

এরপর মোহনবাগানের হয়ে সহজেই গোল করেন কিয়ান নাসিরি। চতুর্থ শটে অবশ্য সুনীল ছেত্রীর ভুল হয়নি। বেঙ্গালুরু গোল পায়। চতুর্থ বারও মোহনবাগানের মনবীরের নেওয়া শট জালে জড়ায়। ফলে পঞ্চম শটে বেঙ্গালুরুকে গোল করতেই হত।

কিন্তু পাবলো পেরেজ ক্রস বারের ওপর দিয়ে বল উড়িয়ে দেন। এখানেই শেষ হয় বেঙ্গালুরুর লড়াই। গোটা মোহনবাগান দলটা তখন মাঠে আনন্দে আত্মহারা। সমর্থকেরাও গ্যালারিতে কিভাবে আনন্দ করবেন ভেবে পাচ্ছেন না।

অন্যদিকে বেঙ্গালুরুর খেলোয়াড়দের মুখে তখন হতাশার একরাশ যন্ত্রণা। কলকাতা সহ বাংলা জুড়েই তখন আতসবাজি পুড়তে শুরু করেছে। হিরো আইএসএল-এর এবারের চ্যাম্পিয়ন মোহনবাগান। এটা ভেবেই আনন্দে আত্মহারা বাংলার মানুষ। গোয়ায় তখন রাত রঙিন হয় সবুজ মেরুন রঙে।

প্রসঙ্গত সুনীল ছেত্রী, রয় কৃষ্ণা, জাভি হার্নান্ডেজের বেঙ্গালুরু এফসি আইএসএল লিগ টেবিলে মন্থর শুরু করে তারপর একবার যে সেই ঘুরে দাঁড়ায়, তারপর আর পিছন ফিরে তাকায়নি। জয়ের পর জয় দিয়ে টেবিলের তলা থেকে উপরে উঠে এসে তারা শেষ করে লিগের চতুর্থ স্থানে।

মোহনবাগান অন্যদিকে শেষ করে তৃতীয় স্থানে। সেমিফাইনালে বেঙ্গালুরু হারায় লিগ টেবিলের শীর্ষ থাকা মুম্বই এফসি-কে। মোহনবাগান হারায় লিগ টেবিলের ২ নম্বরে থাকা হায়দরাবাদকে। তারপর ফাইনালে শেষ হাসি হাসল মোহনবাগান।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *