Sports

ধাওয়ান ও পাণ্ডিয়ার মরিয়া লড়াইও হার বাঁচাতে পারল না

অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে প্রথম একদিনের ম্যাচে গোহারান হারল ভারত। জঘন্য ফিল্ডিংয়ের একটা বড় খেসারত দিতে হল তাদের। একমাত্র নজর কাড়ল পাণ্ডিয়া ও শিখর ধাওয়ানের ব্যাট।

সিডনি : অস্ট্রেলিয়া সফর হার দিয়ে শুরু করল ভারত। প্রথম একদিনের ম্যাচে কার্যত অজিদের সামনে দাঁড়াতেই পারল না ভারত। ব্যাটিং, বোলিং ও ফিল্ডিং, ৩ ক্ষেত্রেই বিরাট বাহিনীকে টেক্কা দিয়েছে অস্ট্রেলিয়া। এদিনও অজিরা দেখিয়ে দিল তাদের দেশের মাটিতে তাদের হারানো সহজ কথা নয়।

এদিন ম্যাচ শুরুর আগে ২ প্রয়াত ক্রিকেটার ফিল হিউজ ও ডিন জোন্সের স্মৃতির উদ্দেশ্যে কালো ব্যান্ড হাতে পরে শ্রদ্ধা জানান ২ দলের ক্রিকেটাররা। বর্ণবৈষম্যের বিরুদ্ধেও তাঁরা খালি পায়ে দাঁড়িয়ে তাঁদের নীরব প্রতিবাদ তুলে ধরেন।


আকর্ষণীয় খবর পড়তে ডাউনলোড করুন নীলকণ্ঠ.in অ্যাপ

এদিন সিডনির মাঠে সবচেয়ে নজর কেড়েছে দর্শকাসনে দর্শকদের ভিড়। যদিও সীমিত ছিল আসন। তবু দর্শকাসনে দর্শকদের দেখতে পাওয়া গেল বহু দিন পর। যা অবশ্যই খেলোয়াড়দের উৎসাহ বাড়িয়েছে।

টস জিতে এদিন প্রথমে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেয় অস্ট্রেলিয়া। ওপেন করতে নামেন অ্যারন ফিঞ্চ ও ডেভিড ওয়ার্নার। শুরু থেকেই দায়িত্বপূর্ণ ইনিংস খেলতে থাকেন ২ জনে। খেলা দেখে এটা পরিস্কার ছিল যে ভারতীয় বোলারদের নিয়ে হোমওয়ার্ক যথেষ্ট করে রেখেছে অস্ট্রেলিয়া।

অজি পিচে বুমরাহ, মহম্মদ সামি, চাহলদের বল কেমন হতে পারে তার একটা ধারণা ২ জনেরই রয়েছে। ফলে কাউকেই খেলতে এদিন বেগ পেতে হয়নি অজিদের। রান উঠতে থাকেন নিয়মিতভাবে।

ওপেনিং জুটি হিসাবে দলকে শক্ত ভিতের ওপর দাঁড় করানোর কাজটা করে ফেলেন ফিঞ্চ ও ওয়ার্নার। ২৮ তম ওভারে যখন অজিরা ১৫৬ রানে খেলছে তখন প্রথম উইকেট পড়ে। ৬৯ রানে ওয়ার্নারকে ফেরান সামি। ক্যাচ ধরা পড়ে উইকেটরক্ষক কেএল রাহুলের হাতে।

এরপর জুটি বাঁধেন ফিঞ্চ ও স্টিভ স্মিথ। এদিন ফিঞ্চ যখন দলের জন্য রানের গতি বাড়ানোর পাশাপাশি একদিক শক্ত হাতে ধরে রেখেছিলেন, তখন অন্যধারে কিছুটা হলেও চালিয়ে রানের গতি আরও বাড়িয়ে রাখছিলেন স্মিথ। পুরোটাই যেন আগে থেকে পরিকল্পিত।

এদিন ভারতীয় বোলাররা সকলেই প্রায় বড় রান দিয়েছেন। তবে যেটা জঘন্য হয়েছে তা হল ভারতীয় ফিল্ডিং। এত নিম্নমানের ফিল্ডিং করলে যে কোনও দল হারতে পারে। ক্যাচ ফস্কানো, পায়ের তলা দিয়ে বল গলে যাওয়া, হাত ফস্কে চার হওয়া, এদিন কী হয়নি।

ফিঞ্চ এদিন ফেরেন ১২৪ বলে ১১৪ রান করে। শতরানের এক শক্তপোক্ত ইনিংস খেলে যান তিনি। ফিঞ্চের পর অজিরা যখন বুঝতে পারেন যে একটু চালিয়ে খেলতে পারলে ৪০০ রানেও পৌঁছে যাওয়া যাবে তখন স্মিথ যেন আরও ভয়ংকর হয়ে ওঠেন।

স্টোইনিজ এদিন প্রথম বলে ফিরলেও ম্যাক্সওয়েল স্মিথকে দারুণ সঙ্গত দেন। যা অজি স্কোরকে টেনে নিয়ে যেতে থাকে। মাত্র ১৯ বলে ৪৫ রান করে ফেরেন ম্যাক্সওয়েল। লাবুশেন এরপর নেমে ২ রান করে ফেরেন। কিন্তু স্মিথের ব্যাট চলতেই থাকে। শতরান করেন তিনি। ১০৫ রানে তাঁকে ফেরান সামি। যদিও তখন খেলা শেষ হতে মাত্র ৩ বল বাকি। অবশেষে ৫০ ওভারে ৬ উইকেট হারিয়ে ৩৭৪ রান তোলে অস্ট্রেলিয়া।

পাহাড় প্রমাণ রানের স্কোর। তা তাড়া করতে মাঠে নামে শিখর ধাওয়ান ও মায়াঙ্ক আগরওয়ালের জুটি। এদিন অজিদের প্রথম ওভারটা ছিল যথেষ্ট আকর্ষণীয়। বিশ্বের ১ নম্বর বোলার মিচেল স্টার্ক-এর হাতে ছিল বল। স্টার্ক এক ওভারে ৩টি ওয়াইড বল করেন। ১টি নো বল করেন। একটি ওয়াইড বলে চারও হয়। এছাড়া ২টি ৪ ব্যাট থেকে আসে। সব মিলিয়ে ভারতীয়দের জন্য শুরুর ওভারটা ছিল যথেষ্ট ভাল। কিন্তু ক্রিকেটে প্রথমে ব্যাট করে বড় রান সীমিত ওভারের খেলায় তোলা যায়, কিন্তু তা তাড়া করা অত সহজ হয়না।

ছোট মাঠ হলেও তাই ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের মাথায় বিশাল রানের চ্যালেঞ্জটা ঘুরপাক খাচ্ছিল। ফলে রান তোলার একটা তাড়া ছিলই। যা করতে গিয়ে মায়াঙ্ক ২২ রান করে ফেরেন। তারপরই দশম ওভারে পরপর ফেরেন বিরাট কোহলি ও শ্রেয়স আইয়ার। ৩ জনের উইকেটই তুলে নেন হ্যাজেলউড। আর খেলার মোটামুটি ভবিষ্যৎ লিখে দেন। অজি পিচের বিষাক্ত বাউন্সারের শিকার হন শ্রেয়স।

আইপিএল এক খেলা। কিন্তু অজি পিচে অজিদের মুখোমুখি হয়ে তাদের বলে প্রহার করা অতও যে সহজ নয় তা হয়তো ভারতীয় নতুন তারকাদের কাছে অতটা পরিস্কার এখনও হয়নি।

৩ জন ফেরার পর কেএল রাহুলও বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি। নামেন হার্দিক পাণ্ডিয়া। হার্দিক ও শিখর ধাওয়ান জুটি এরপর যে ব্যাটিং করেন গোটা ম্যাচে ভারতের জন্য ওটাই একমাত্র প্রাপ্তি। বাকিটা পুরোই খেলেছে অজিরা।

হার্দিক তাঁর নিজস্ব মেজাজেই খেলা শুরু করেন। শিখর ধাওয়ান এক দায়িত্বপূর্ণ ব্যাটিং উপহার দেন। ২ জন খেলা অনেকটা টেনেও নিয়ে যান। একসময় যা পরিস্থিতি ছিল টি-২০ খেলা খেলোয়াড়দের জন্য সেই দেড়শো রান ১৭ ওভারে তোলাটা খুব কঠিন হতনা যদি ভারতের হাতে উইকেট থাকত।

কিন্তু এই পরিস্থিতিতে ধাওয়ান ৭৪ রান করে ফেরেন। ধাওয়ান ফেরার পর বোধহয় সেই লড়াইয়ের মানসিকতাটা হারিয়ে ফেলেন হার্দিক। ৯০ রানে ফেরেন তিনি। এরপর আর খেলার সেই অর্থে কিছু ছিলনা। এরপর রবীন্দর জাদেজা ২৫, নভদীপ সাইনি ২৯, সামি ১৩ রান করেন বটে, তবে তা অজিদের মোট রানের ধারে কাছে ভারতকে পৌঁছে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট ছিলনা। ৩০৮ রানে শেষ হয় ভারতের ইনিংস। ৩ ম্যাচের সিরিজের প্রথম ম্যাচ অস্ট্রেলিয়া ৬৬ রানে জিতে যায়।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *