Sports

বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের হারিয়ে বিরাট জয়, দাপট দেখানো শুরু ভারতের

৩৫৩ রান তাড়া করতে নেমে যেভাবে শুরু করা উচিত ছিল তা কিছুটা হলেও করেছিল অস্ট্রেলিয়া। কিন্তু রান তোলার ক্ষেত্রে উইকেট ধরে রেখে যে ধারাবাহিকতা দেখানোর দরকার ছিল তা অস্ট্রেলিয়া দেখাতে পারল না। ফলে ভারতের মাপা বোলিংয়ের সামনে ক্রমশ জবাবি রান রেট চড়েছে। যা চাপ বাড়াতে থেকেছে অজিদের ওপর। চাপ থেকে বড় রান তোলার জন্য ঝুঁকির শট নিতেই হয়েছে ব্যাটসম্যানদের। আর তাতেই উইকেট পড়েছে একের পর এক। হয়তো স্ট্র্যাটেজি এটাই ছিল। আর সেখানেই সফল হল ভারত। গতবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের হারিয়ে বিশ্বকাপে নিজেদের প্রবল দাপট দেখানো শুরু করে দিলেন বিরাটরা। অন্যদিকে এবারের বিশ্বকাপে এই প্রথম হারের মুখ দেখল অস্ট্রেলিয়া।

টস জিতে দ্যা ওভালে প্রথমে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেন বিরাট কোহলি। ব্যাট করতে নেমে কিছুটা ধীরে শুরু করেন রোহিত শর্মা ও শিখর ধাওয়ান। আজিদের বিরুদ্ধে খেলতে নামার আগে যে যথেষ্ট হোমওয়ার্ক ভারত করেছিল তা এদিন শুরু থেকে তাদের ছন্দ দেখে পরিস্কার। ধীরে শুরু আসলে ব্যাটসম্যানকে সেট করে দেয়। পিচের চরিত্র, বোলারদের ধরন সবই বুঝে নিতে পারেন তাঁরা। প্রথম ১০ ওভারে তেমন বিশাল রান না উঠলেও তারপর থেকে ক্রমশ হাত খোলেন দুজনে। শিখর অবশ্য শুরু থেকে বল পিছু রানের পথে ছিলেন। কিন্তু রোহিত অনেক ডট বল দিয়ে ফেলেন। তবে রোহিত তারপর যে ধোলাই শুরু করেন তা ওই ডট বলের দুঃখ ভুলিয়ে দেয়।

রোহিত যখন ৫৭ রান করে ফেরেন তখন ভারতের স্কোর ১২৭। ওপেনিং জুটি একদম ঠিকঠাক একটা সূত্রপাত দিয়ে যায়। এরপর শিখর ধাওয়ান বিধ্বংসী চেহারা নেন। রোহিত শর্মা ব্যক্তিগত ২ রানের মাথায় ক্যাচ দিয়েছিলেন। যা ফস্কায় অজিরা। তার মাসুল তাদের দিতে হয়েছে। কিন্তু শিখরের এদিনের শতরানের ইনিংস ছিল একদম ঝকঝকে। বিরাটের সঙ্গে তাঁর জুটি ভারতকে আরও মজবুত জায়গায় পৌঁছে দেয়। ১১৭ রান করে ফেরেন শিখর। ভারতের রান তখন ২২০। শিখরের পরে একটা ঝোড়ো ইনিংস খেলে ফেরেন হার্দিক। ২৭ বল খেলে ৪৮ রান করেন তিনি। ভারত পৌঁছে যায় ৩০০-র ঘরে। এরপর বিরাটের সঙ্গে জুটি বাঁধেন ধোনি। খেলেন মাত্র ১৪টি বল। কিন্তু স্লগ ওভারে তিনি দেখিয়ে দিয়ে যান এখনও ধোনির দেওয়ার আছে ক্রিকেটকে। ১৪ বলে ২৭ রান করেন তিনি। বিরাট কোহলি আউট হন খেলা শেষ হওয়ার আগের বলে। তিনি করেন ৮২ রান। কেএল রাহুল অপরাজিত থেকে করেন ১১ রান। ভারত ইনিংস শেষ করে ৩৫২ রান করে।

৩৫৩ রানের টার্গেট অজিদের জন্য সহজ ছিল না। অজিদের বলে নয়, কোনও দলের পক্ষে প্রথমে ব্যাট করে ৩৫৩ তোলা যতটা সহজ, সেই রান তাড়া করা অতটা সোজা নয়। তারপরেও অজিরা রীতিমত লড়াই দেওয়ার নমুনা তৈরি করে। শুরুতে‌ ফিঞ্চ ও ওয়ার্নার জুটি ভাল শুরু দেয়। ফিঞ্চ ৩৬ রান করে ফেরার পর স্মিথ-ওয়ার্নার জুটি ভারতের কপালে ভাঁজ তৈরির অবস্থা তৈরি করে। ৫৬ রান করে ফেরেন ওয়ার্নার। যদিও অনেকগুলো বল তিনি নষ্ট করে ফেলেন। বড় রান তাড়া করতে নেমে যেটা অন্য ব্যাটসম্যানদের ওপর চাপ বাড়িয়ে দেয়। সেটাই হয়। স্মিথ ও খোওয়াজা চাপের মুখে খেলতে শুরু করেন। আর চাপমুক্তির জন্য ভাল রানও আসতে থাকে এঁদের ব্যাট থেকে। খোওয়াজা ৪২ রানে ফেরার পর ম্যাক্সওয়েল নেমে থেকে চালিয়ে খেলতে শুরু করেন। যদিও উপায় ছিল না। কারণ জবাবি রান রেট তখন পৌঁছে গেছে ওভার পিছু ১১ রানের ওপর। আর এখানেই স্মিথকে ফেরান ভুবনেশ্বর কুমার। ৬৯ রান করে স্মিথ ফেরার পর ওই ওভারেই ০ রান করে ফেরেন স্টোইনিজ। চাপে পড়ে যায় অস্ট্রেলিয়া। নামেন অ্যালেক্স ক্যারি। আর ঠিক তারপরই প্যাভিলিয়নে ফেরেন ম্যাক্সওয়েল। ২৮ রান করে ফেরেন তিনি। অজি মিডল অর্ডারে ধস নামে।

ক্যারি কিন্তু দারুণ ব্যাট করেন। তিনি একদিক থেকে রান তুলতে থাকলেও অন্যদিক থেকে অজিদের উইকেট পতন অব্যাহত ছিল। নাথান কুল্টারনাইল ফেরেন ৪ রান করে। কামিন্স ফেরেন ৮ রান করে। এর মাঝে ক্যারি কিন্তু মেরে চলেন। ৩ রানে আউট হন স্টার্ক। এরপর ক্যারির লড়াইয়েও কোনও কাজ হয়নি। কারণ প্রয়োজনীয় রানে পৌঁছনো কার্যত অসম্ভব ছিল অজিদের। ম্যাচের শেষ বলে অজিদের শেষ উইকেটটিও পড়ে যায়। কেবল ৫৫ রান করে অপরাজিত থাকেন ক্যারি। ভারত জেতে ৩৬ রানে। ম্যাচের সেরা হন শিখর ধাওয়ান। বিশ্বকাপে ভারত এখনও পর্যন্ত ২টি ম্যাচ খেলে ২টিতেই জয়ী হয়েছে। তাদের পরের খেলা নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে। খেলা হবে বৃহস্পতিবার।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *