Sports

রুদ্ধশ্বাস ম্যাচে শেষ বলে জয় ভারতের, মন জিতল বাংলাদেশ

বল বাকি মাত্র ১টি। জিততে হলে রানও বাকি ১, ১ বলে ১ রান করতে হবে ভারতকে। ফিল্ডিং তখন ঘিরে নিয়েছে কেদার যাদবকে। দর্শকদের সকলেই তখন ইষ্টনাম জপছেন। উত্তেজনায় দমবন্ধ হয়ে যাওয়ার যোগাড়। সেই সময়ে লেগের দিকে বল ঠেলে ১ রান নেন কেদার যাদব। ভারত জিতে নেয় এশিয়া কাপ। ২২৩ রানে‌র লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে একটা একদিনের ম্যাচ যে এতটা টানটান হতে পারে তা এযাবতকালে দেখা যায়নি। এত কম টোটাল। রান উঠছে মন্থর গতিতে। এশিয়া কাপের ফাইনালের এমন এক ম্যাচ কিন্তু শুরু থেকেই দর্শকদের টানটান উত্তেজনা উপহার দিল। যা দেখতেই দর্শকরা মাঠে ছুটে যান। টিভির পর্দায় চোখ রাখেন। এদিন ভারত শেষ বলে রান নিয়ে জিতলেও ভারতের মত এমন একটা ব্যাল্যান্সড টিমকে যেভাবে বাংলাদেশ খাদের কিনারা পর্যন্ত টেনে নিয়ে গেছে তার তারিফ এখন মুখে মুখে ঘুরছে।

এশিয়া কাপের ফাইনালে গতবারেও ভারত বাংলাদেশই মুখোমুখি হয়েছিল। এবারও তাই। এবার দুবাইতে প্রবল গরমে টস জিতে প্রথমে ফিল্ডিং করার সিদ্ধান্ত নেন রোহিত শর্মা। ব্যাট করতে নেমে বাংলাদেশের লিটন দাস এদিন ঝোড়ো ব্যাটিং শুরু করেন। কোনও ভারতীয় বোলারই তাঁর ব্যাটে লাগাম পরাতে সক্ষম হননি। ভুবনেশ্বর কুমার, বুমরাহর মত বোলারও মার খেয়েছেন। লিটন দাসে পরাক্রমে ক্রমশ বাংলাদেশ শক্ত ভিতের ওপর খেলা দাঁড় করাতে থাকে। দুর্দান্ত একটা শুরু পায় বাংলাদেশের ইনিংস। সঙ্গে যোগ্য সঙ্গত দিতে থাকেন মেহেদি হাসান মিরাজ। ৫০ ওভারের ম্যাচে এমন শুরু কিন্তু জয়ের ইঙ্গিত বহন করে। ১২০ রানের দলগত স্কোরে প্রথম উইকেট পরে মেহেদির। ৩২ রান করেন তিনি।


আকর্ষণীয় খবর পড়তে ডাউনলোড করুন নীলকণ্ঠ.in অ্যাপ

এই পর্যন্ত সব ঠিকঠাক ছিল। এরপরই আচমকা বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানদের আয়ারাম গয়ারাম শুরু হয়। একের পর এক ইমরুল কায়েশ (২), মুশফিকুর রহিম (৫), মহম্মদ মিঠুন (২), মাহমুদুল্লাহ (৪) আউট হয়ে প্যাভিলিয়নে ফেরেন। যে ম্যাচে জাঁকিয়ে বসেছিল বাংলাদেশ, সেই ম্যাচ ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে চলে আসে ভারতের পক্ষে। ১৫১ রানের মাথায় ৫ উইকেট হারানো বাংলাদেশের এবার হাল ধরার চেষ্টা করেন লিটন দাস ও সৌম্য সরকার। লিটনের ঝোড়ো ব্যাট শতরান পূর্ণ করে। অবশেষে দলগত ১৮৮ রানের মাথায় লিটন দাস ১১৭ বলে ১২১ রানের একটা দুরন্ত ইনিংস উপহার দিয়ে আউট হন। এরপর ফের শুরু হয় বাংলাদেশে ভাঙন। একদিকে সৌম্য সরকার লড়লেও অন্যদিক থেকে উইকেট পড়তে থাকে। অধিনায়ক মাশরাফি মর্তুজা (৭), নাজমুল ইসলাম (৭) আউট হওয়ার পর ৩৩ রান করে ফেরেন সৌম্য সরকারও। শেষে ০ করে আউট হন রুবেল হাসান। ৪৮.৩ ওভারে বাংলাদেশের ইনিংস শেষ হয় ২২২ রান করে।

২২৩ রান করলে জিতবে। সহজ লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ভারত ভালই শুরু করে। রোহিত-শিখর জুটি নিজস্ব ছন্দেই রান তুলতে থাকে। এই অবস্থায় ১৫ রান করে সহজ ক্যাচ তুলে ফেরেন শিখর। অবশ্য ভারতের যা ব্যাটিং লাইনআপ তাতে তাদের আতঙ্কের কোনও কারণ ছিলনা। কিন্তু ব্যাট হাতে নেমে মাত্র ২ রানেই ফেরেন রাইডু। ম্যাচের হাল ধরেন রোহিত শর্মা ও দীনেশ কার্তিক। এই অবস্থায় রুবেলকে ছক্কা হাঁকাতে গিয়ে মুঠোবন্দি হয়ে ফেরেন রোহিত শর্মা (৪৮)। এবার মহেন্দ্র সিং ধোনি ও কার্তিক ম্যাচের হাল ধরেন। এই অবস্থা থেকে ক্রমশ খেলায় ফের জাঁকিয়ে বসে বাংলাদেশ। বাংলাদেশি বোলারদের দুরন্ত বোলিংয়ে রান একেবারেই উঠছিলনা। মেডেন ওভার হচ্ছিল। কখনও এক ওভারে রান উঠছিল ১ অথবা ২। অবশ্য তখন যা পরিস্থিতি তাতে ধোনি বা কার্তিকের কেউ আউট হওয়া মানে ভারত আরও ভয়ংকর চাপে পড়ে যাওয়া। ফলে তাঁরা ধৈর্যের পরীক্ষা দেন। বড় রান তাড়া করতে না হওয়ায় চাপ তখনও ঘাড়ের ওপর চেপে বসেনি। কিন্তু চাপ বাড়ছিল। হাত খোলেন ধোনি। কিছুটা চালিয়ে খেলার চেষ্টাও করেন। অবশেষে ১৩৭ রানের দলগত স্কোরে এলবিডব্লিউ হয়ে ফেরেন কার্তিক (৩৭)। কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ রানটা করে দিয়ে যান। ধোনির সঙ্গে জুটি বাঁধেন কেদার যাদব। নেমেই চালিয়ে খেলে একটা ছক্কা হাঁকান। ধোনি কেদার জুটি রান তুললেও ১৬০ রানের দলগত টোটালে ফেরেন ধোনি (৩৬)। নামেন জাদেজা। জাদেজা ও কেদার হাল ধরলেও কিছু পরে পায়ে টান ধরায় মাঠের বাইরে যান কেদার যাদব। নামেন ভুবনেশ্বর কুমার। ভুবি-কেদার জুটি কিন্তু রান তুলতে থাকে। কিন্তু ম্যাচ বার করা তখনও কঠিনই ছিল। লড়াই করেই বার করতে হত ম্যাচ। তাই করছিলেন জাদেজা-ভুবি। ম্যাচ এঁরাই বার করে নিতে পারতেন। কিন্তু পরপর জাদেজা (২৩) ও ভুবনেশ্বর (২১) আউট হয়ে ফের ম্যাচ কঠিন করে তোলেন। এবার সুস্থ হয়ে মাঠে ফেরেন কেদার। অন্যদিকে কুলদীপ। ক্রমশ ম্যাচ টানটান অবস্থায় চলে যায়। শেষ ওভারে ৬ বলে ৬ রান করতে হবে। এই অবস্থায় রান আর বল এক সঙ্গে হাত মিলিয়ে চলতে থাকে। এক বল বাকি থাকতে ম্যাচ টাই অবস্থায় আসে। অর্থাৎ শেষ বলে ভারত রান করলে জিতবে। নয়তো ম্যাচ গড়াবে সুপার ওভারে। রান রুখতে পুরো ফিল্ডিং শক্তি কেদার যাদবের চারপাশে ভরে দেন মাশরাফি। দর্শকদের তখন হৃদপিণ্ডের শব্দ তাঁরা নিজেরাও শুনতে পাচ্ছেন। গোটা মাঠ স্তব্ধ। রুদ্ধশ্বাস অপেক্ষায়। শেষ বলটা মাহমুদুল্লাহ করেন লেগের দিকে। কেদার সুযোগ পেয়ে যান। লেগের দিকে ঠেলে একটা রান অনায়াসে এসে যায়। শেষ বলে রান করে জেতে ভারত। উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়ে ভারতীয় শিবির ও সমর্থকেরা। একেবারে তীরে এসে তরী ডোবায় বাংলাদেশ ক্রিকেটার থেকে সমর্থকদের মধ্যে তখন চরম হতাশা।

ফাইনালে এমন টানটান লড়াইয়ের পর ভারতীয় শিবির আনন্দে ভেসে গেলেও বাংলাদেশ কিন্তু মন জয় করে গেল। দল হারলেও ম্যান অফ দ্যা ম্যাচও হয়েছেন বাংলাদেশের লিটন দাস। আপাতত এশিয়া কাপ নিয়ে দেশে ফেরার পরই ফের ভারতীয় দল পাড়ি জমাবে ওয়েস্ট ইন্ডিজে।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *