Sports

রাশিয়াকে টাইব্রেকারে হারিয়ে সেমিফাইনালে ক্রোয়েশিয়া

নিজেদের শেষটুকু উজাড় করেও শেষরক্ষা হলনা। দেশের মাটিতে কোয়ার্টার ফাইনালে হেরে বিশ্বকাপের দৌড়ে ইতি টানল রাশিয়া। তবে ছাপ রেখে গেল। যে রাশিয়াকে খাতায় কলমে অত্যন্ত সাধারণ দল বলে বিশ্বকাপ শুরুর আগে কটাক্ষ করা হচ্ছিল, সেই রাশিয়া কিন্তু ক্রোয়েশিয়াকে এক ইঞ্চি জমি ছাড়েনি। লড়ে গেছে সমানে সমানে। হতে পারে গোটা খেলায় ক্রোয়েশিয়ার বল দখল বেশি ছিল। কিন্তু রাশিয়া একদম অন্য এক ঘরানার ফুটবল খেলে গেছে। তাদের রক্ষণ ছিল দেখার মতন। আক্রমণে যখনই গেছে তখনই ভয়ংকর হয়ে উঠেছেন চেরিশেভরা। তাই এদিন লজ্জার হার নয়। বীরের মতই দেশবাসীর সামনে বিশ্বকাপ থেকে বিদায় নিল আয়োজক দেশ রাশিয়া। গোটা রাশিয়া কাঁদল বটে, কিন্তু মনে মনে তাদের খেলার জন্য গর্বও বোধ করল। অন্যদিকে রাশিয়াকে হারিয়ে ক্রোয়েশিয়া পৌঁছে গেল সেমিফাইনালে। আগামী বুধবার সেমিফাইনালের লড়াইতে ক্রোয়েশিয়া মুখোমুখি হবে ইংল্যান্ডের।

শনিবার খেলার শুরু থেকেই রাশিয়ার রক্ষণ ছিল দুরন্ত। ক্রোয়েশিয়া বেশি আক্রমণ হানছিল। কিন্তু রাশিয়া যখনই ক্রোয়েশিয়ার গোলমুখে হানা দিয়েছে তা ভয়ংকর হয়ে উঠেছে। খেলার ৩০ মিনিটের মাথায় ক্রোয়েশিয়ার গোল লাইনের বাইরে বল রিসিভ করে চেরিশেভ একটা সামান্য ফাঁক দেখতে পান। সেই ফাঁক গলে বাঁ পায়ে বুলেটের মত শট করেন। সেই বল একেবারে বারের ধার ধরে ঢুকে যায় ক্রোয়েশিয়ার গোলে। গোলরক্ষক দেখলেন বল ঢুকছে। কিন্তু তাঁর দাঁড়িয়ে দেখা ছাড়া আর কিছুই করার ছিলনা। এ যেন জ্যামিতির মাপজোক করে নেওয়া শট। চেরিশেভের এই গোল কিন্তু বহু দিন বিশ্ব ফুটবল মনে রেখে দেবে। এই গোলের সুবাদে রাশিয়া ১-০ গোলে এগিয়ে যায়। খোঁচা খাওয়া বাঘের মত পাল্টা আক্রমণ শুরু করে ক্রোয়েশিয়া। ৩৮ মিনিটের মাথায় রাশিয়ার গোলমুখে একটি ভাসানো ক্রস থেকে দুর্দান্ত হেড করেন আন্দ্রেজ কামারিচ। বল সোজা ঢুকে যায় রাশিয়ার গোলে। মাত্র ৮ মিনিটের ব্যবধানে খেলায় সমতা ফেরায় ক্রোয়েশিয়া।


আকর্ষণীয় খবর পড়তে ডাউনলোড করুন নীলকণ্ঠ.in অ্যাপ

দ্বিতীয়ার্ধের ৫৯ মিনিটের মাথায় রাশিয়ার গোলমুখে জটলার মাঝে এক সময়ে ফাঁকা গোলের সামনে বল পেয়ে যান ক্রোয়েশিয়ার খেলোয়াড়। শটও নেন। কিন্তু সেই শট বারের কোণায় লেগে ফিরে আসে। বেঁচে যায় রাশিয়া। এরপর খেলায় তেমন কিছু হয়নি। ফল ১-১ থাকা খেলা গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে। ১০০ মিনিটের মাথায় কর্নার থেকে আসা ভাসানো বলে হেড করে ডোমাগোজ ভিজা ক্রোয়েশিয়াকে ২-১-এ এগিয়ে দেন। অতিরিক্ত সময়ের খেলা শেষ হওয়ার ঠিক ৫ মিনিট আগে রাশিয়া পেয়ে যায় সেট পিস মুভমেন্ট। সেই গোল মুখে ভাসানো বলে অব্যর্থ হেড। বল জালে। রাশিয়াকে সমতায় ফেরান মারিও ফিগুয়েরা ফার্নান্দেজ। ২-২ গোলেই শেষ হয় অতিরিক্ত সময়ের ৩০ মিনিটের খেলা। ফলাফলের লড়াই গড়ায় টাইব্রেকারে।

টাইব্রেকারে প্রথমে শট নিতে আসে রাশিয়া। প্রথম শটই সেভ করে দেন ক্রোয়েশিয়ার গোলরক্ষক। ক্রোয়েশিয়া কিন্তু তাদের প্রথম শটে গোল করতে ভুল করেনি। ফলাফল দাঁড়ায় রাশিয়া ০, ক্রোয়েশিয়া ১। দ্বিতীয় শটে রাশিয়া গোল করে। কিন্তু ক্রোয়েশিয়ার শট আটকে দেন রাশিয়ার গোলরক্ষক। সমতা ফেরে। ফলাফল দাঁড়ায় ১-১। তৃতীয় শট সপাটে বাইরে মারেন রাশিয়ার খেলোয়াড়। ক্রোয়েশিয়ার শট আবার আটকে দেন রাশিয়ার গোলরক্ষক। কিন্তু সেই বল আটকানোর পরও তা বারে লেগে গোলে ঢুকে যায়। ৩-২-তে এগিয়ে যায় ক্রোয়েশিয়া। চতুর্থ শটে রাশিয়া অবশ্য গোল করতে ভুল করেনি। ক্রোয়েশিয়াও রাশিয়ার জালে বল জড়ায়। পঞ্চম তথা শেষ শটের আগে ফল দাঁড়ায় ৪-৩। পঞ্চম শটে রাশিয়া গোল করে। শেষ শটে তখন গোল করতে পারলেই ক্রোয়েশিয়া সেমিফাইনালে। সেই শটে এতটুকু ভুল করেননি ক্রোয়েশিয়ার রাকিটিচ। বল জালে জড়াতেই উল্লাসে ফেটে পড়েন ক্রোয়েশিয়ার খেলোয়াড়েরা। ১৯৯৮ সালে প্রথমবার বিশ্বকাপে খেলতে এসেই বিশ্বকে চমকে দিয়েছিল ক্রোয়েশিয়া। পৌঁছে গিয়েছিল সেমিফাইনালে। তৃতীয় স্থান দখল করে শেষ করেছিল সেবারের বিশ্বকাপ। তারপর থেকে কিন্তু সেমিফাইনালের মুখ দেখেনি তারা। বিশ সাল বাদ ফের দেখল। পৌঁছে গেল বিশ্বকাপের শেষ চারে। অন্যদিকে গোটা রাশিয়ার চোখে তখন জল। মুখে একরাশ হতাশা। বিশ্বকাপে দৌড় শেষের হতাশা।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *