State

আলাদা ঘর নেই, বটগাছে চড়ে নিজেদের কোয়ারেন্টিন করলেন ৭ শ্রমিক

যে গ্রামে তাঁদের বাস সে গ্রামে সবই ছোট ছোট কুঁড়ে ঘর। মাটি দিয়ে লেপা চারটি কোনওক্রমে তৈরি দেওয়াল। মাথায় খড়ের ছাউনি। সে ঘরেই পরিবারের সকলের একসঙ্গে বাস। আলাদা ঘর বলে কিছু নেই। পুরুলিয়ার সেই বাঙ্গিদিহা গ্রামের ৭ বাসিন্দা শ্রমিকের কাজ করেন চেন্নাইতে। তাঁরা গত রবিবার খড়গপুরে ফেরেন। সেখানে তাঁদের থার্মাল স্ক্রিনিং হয়। কিছু পাওয়া যায়নি ঠিকই। তবে তাঁদের ১৪ দিন আলাদা থাকার পরামর্শ দেন চিকিৎসকেরা।

ওই ৭ শ্রমিক এরপর গ্রামে ফিরে আসেন। কিন্তু ঘর বলতে তো একটা কুঁড়ে। সেখানেই গোটা পরিবারের বাস। তাই তাঁরা স্থির করেন গ্রামের ধারের বট গাছেই তাঁরা ১৪টা দিন নিজেদের কোয়ারেন্টিন করে রাখবেন। সেইমত গাছের ডালে ডালে বাঁধা হয় খাট। মশা, মাছি বা অন্য কোনও কীটপতঙ্গ থেকে বাঁচতে প্রতিটি খাটে খাটানো হয় মশারি। এরপর গাছে চড়ে থেকেই শুরু হয় দিনযাপন।

তাঁদের রান্না করা খাবারও দিতে মানা করেন এই ৭ জন। তাই তাঁদের পরিবারের তরফে চাল, ডাল, সবজি বট গাছের নিচে রেখে যাওয়া হত। তাঁরা তারপর নিচে নেমে রান্না করে খেয়ে ফের উঠে যেতেন গাছে। নিজের নিজের খাটে শুয়ে বিশ্রাম নিতেন। রাতে যাতে তাঁদের কাছের জঙ্গল থেকে কোনও জীবজন্তু এসে সমস্যার সৃষ্টি করতে না পারে সেজন্য গ্রামবাসীরাই পালা করে রাতভর পাহারা দেওয়ার বন্দোবস্ত করেন।

এভাবেই চলছিল। গত শনিবার এই খবর পৌঁছয় স্থানীয় প্রশাসনের কাছে। প্রশাসনের কর্তারা সেখানে হাজির হন। নেমে আসতে বলেন ওই ৭ শ্রমিককে। তারপর তাঁদের গ্রামে ফিরে নিজেদের একটু আলাদা রাখতে বলেন। এই ঘটনা কিন্তু ভারতবাসীর জন্য একটা উদাহরণ তৈরি করল।

যদি প্রত্যন্ত গ্রামের বাসিন্দা ৭ শ্রমিক করোনা ভাইরাসের মোকাবিলায় সরকারের দেওয়া নির্দেশ অক্ষরে অক্ষরে পালন করে তাঁদের পরিবার ও গ্রামের স্বার্থে এভাবে গাছে চড়ে দিন গুজরান করতে পারেন। তাহলে ভারতের কিছু মানুষ এখনও কেন বুঝতে পারছেন না নিজেদের ঘরবন্দি রাখার গুরুত্ব? কেন তাঁরা এখনও রাস্তায় বার হচ্ছেন অকারণে? সে প্রশ্ন কিন্তু উঠছে। — সংবাদ সংস্থার সাহায্য নিয়ে লেখা

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *