বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভাঙাকে কেন্দ্র করে বুধবার সকাল থেকেই বিভিন্ন জায়গায় ধিক্কার শুরু হয়েছিল। বামেরা ধিক্কার মিছিল বার করে। তৃণমূলও বিভিন্ন জায়গায় প্রতিবাদ ও ধিক্কার কর্মসূচি পালন করে। তবে সবচেয়ে বড় ধিক্কার মিছিলটি করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বেলেঘাটার গান্ধী ভবন থেকে শুরু করে মিছিল শেষ হয় শ্যামবাজার পাঁচ মাথার মোড়ে। বিকেলে মিছিল শুরু হয় বেলেঘাটা থেকে। তখনই কাতারে কাতারে মানুষ ভিড় করেছিলেন রাস্তার দুধারে। অনেকে মিছিলে পাও মেলান। মিছিল যত এগিয়েছে ততই তা বহরে বেড়েছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ছিলেন মিছিলের সর্বাগ্রে। ছিলেন তৃণমূলের অন্য অনেক নেতা। অনেকের বুকেই ঝোলানো ছিল মনীষীদের ছবির ফ্লেক্স।
বুধবার শহরের যে অংশে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মিছিল করেন তা কলকাতা উত্তর কেন্দ্রের অন্তর্গত। তবে এদিনের মিছিলকে রাজনৈতিক প্রচার বলতে নারাজ ছিল তৃণমূল নেতৃত্ব। বরং এটা ছিল সম্পূর্ণই বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভাঙার প্রতিবাদে মিছিল। যে মূর্তি ভাঙার জন্য আগেই বিজেপিকে দায়ী করেছে তৃণমূল নেতৃত্ব। অমিত শাহের রোড শো চলাকালীন বিজেপি কর্মীরা বিদ্যাসাগর কলেজে হামলা চালিয়ে বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভাঙে বলে অভিযোগ। যদিও বুধবার পাল্টা বিজেপি দাবি করে তারা নয়, মূর্তি ভেঙেছে তৃণমূলই। এই তরজার মাঝেই কিন্তু এদিন মূর্তি ভাঙার প্রতিবাদে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মিছিল ক্রমশ শেষ বিকেলের আলোয় এগোতে থাকে বেলেঘাটা হয়ে ফুলবাগান হয়ে কাঁকুড়গাছি হয়ে মানিকতলার দিকে।
গরমকে উপেক্ষা করে অগণিত মানুষ এই মিছিলে অংশ নেন। বিকেলেই বন্ধ হয়ে যায় মধ্যে কলকাতার বিস্তীর্ণ এলাকার যান চলাচল। রাজপথ চলে যায় ধিক্কার মিছিলের দখলে। মানিকতলা হয়ে বিবেকানন্দ রোড হয়ে মিছিল যখন বিবেকানন্দের বাড়ির সামনে পৌঁছয় তখন সন্ধে হয়ে গেছে। বিবেকানন্দের মূর্তিতে এদিন মালা দিয়ে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করেন মমতা। তারপর ফের পা মেলান। দুপাশে দাঁড়ানো বহু মানুষের সঙ্গে হাত মেলান তিনি। হাসিমুখে হাত নাড়েন। এগিয়ে চলে মিছিল। বিধান সরণি হয়ে শ্যামবাজারের দিকে।
মিছিলের সামনে ২টি মাটাডোরের একটিতে ছিলেন লেখক, সাহিত্যিক, নাট্য ব্যক্তিত্বেরা। দেখা মিলেছে আবুল বাশার, জয় গোস্বামী, দেবেশ চট্টোপাধ্যায়, নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ির মত ব্যক্তিত্বদের। অন্যটিতে ছিলেন অভিনেতা-অভিনেত্রীরা। যারমধ্যে দেখা মিলেছে জুন মালিয়া, অরিন্দম শীল প্রমুখের। আর ছিলেন রাস্তার দুধার জুড়ে বহু মানুষ। ছাদ, বারান্দা, জানালা ছিল মানুষের মুখে পূর্ণ।
শ্যামবাজার পাঁচ মাথার মোড়ে এদিন মিছিল যখন শেষ হয় তখন ঘড়ির কাঁটা ৭টার ঘর পার করেছে। তখন শ্যামবাজারে কাতারে কাতারে মানুষের ভিড়। অনেক বাস ঠায় দাঁড়িয়ে। এগোনোর জায়গা নেই। অফিস ফেরত মানুষজন এরফলে বেজায় সমস্যায় পড়েন। তবে বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভাঙার প্রতিবাদে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মিছিল কিন্তু এদিন কার্যতই সফল।