একটু উষ্ণতার খোঁজে আজও হেমন্ত এলে মানুষের ভিড় জমে শহরের ফুটপাথে
শীতের দিনে একটু উষ্ণতার পরশ শরীরকে আরাম দেয়। সেই উষ্ণতাটুকু পাওয়ার আশায় এখনও হেমন্তে শীতের পদধ্বনি শুনলেই মানুষ ভিড় জমান তিলোত্তমার ফুটপাথে।
মৌসুমি গুহ মান্না, কলকাতা : হেমন্তের বেলা ছোট হতে হতে শীতের আগমনের সময় প্রায় হয়েই এল। আর শীত মানেই চারপাশে রঙিন মাফলার, শাল, স্কার্ফ, সোয়েটার, চাদরের মেলা। কলকাতায় শীত ক্ষণিকের অতিথি। তবে সেই কটা দিন চুটিয়ে উপভোগ করতে কার্পণ্য করেননা কলকাতাবাসী। প্রতিবছর তাই হাল ফ্যাশন, নতুন ডিজাইনের খোঁজে তাঁরা হাজির হন শীত পোশাকের বাজারে।
কলকাতার মানুষের সেই চাহিদার কথা মাথায় রেখে শীত আসার সঙ্গে সঙ্গেই রংবেরঙের পসরা সাজিয়ে শহর কলকাতার সমতলে হাজির হন পাহাড়ের মানুষজন। বাচ্চা থেকে বড় সকলের জন্যই নানারকম শীত পোশাকের সম্ভার নিয়ে তাঁরা প্রতিবছর হাজির ওয়েলিংটনের ফুটপাথের অস্থায়ী স্টলে। হিমাচল প্রদেশ, লাদাখ, সিকিম এবং দার্জিলিং থেকে তাঁরা বছরের পর বছর ধরে কলকাতায় আসেন। যদিও শহরবাসীর কাছে এ বাজার ভুটিয়া বাজার বলেই খ্যাত।
ফি বছর নভেম্বর মাস পড়তে না পড়তেই জমে ওঠে কলকাতার ওয়েলিংটন স্কোয়ারে পাহাড়ি মানুষদের এই গরম পোশাকের বাজার। যা চলে জানুয়ারি মাসের শেষ পর্যন্ত। অনলাইন কেনাকাটার রমরমার সঙ্গে পাল্লা দিয়েও টিকে রয়েছে এই বাজার। তবে এখানে জিনিসপত্রের দাম একেবারে বাঁধা। কোনও ছাড় পাওয়ার সম্ভাবনা থাকেনা। কোনও দরদাম এখানে করা যায়না।
বিগত প্রায় ২৫ বছর ধরে সিকিম থেকে কলকাতার এই অস্থায়ী বাজারে গরম পোশাকের পসরা নিয়ে হাজির হন কেলসাং। থাকা খাওয়ার অসুবিধার সঙ্গে এখন ক্রেতার সংখ্যাও কিছুটা কমেছে। তবু অনেক ক্রেতা সঠিক জিনিসের আশায় এখনও তাঁদের থেকেই শীত পোশাক কেনেন। একই কথা শোনালেন লাদাখের ইয়াসির এবং হিমাচল থেকে আসা গৌতম।
ওয়েলিংটনের এই শীত পোশাকের বাজারে ২০০ থেকে ২৭০০ টাকা অবধি মূল্যের জিনিস রয়েছে। বাচ্চাদের সোয়েটার ২০০ থেকে ২৫০ টাকার মধ্যেই পাওয়া যাচ্ছে। স্টোল এবং মাফলার পাওয়া যাচ্ছে ৩০০ থেকে ৪৫০ টাকার মধ্যে। মহিলাদের কার্ডিগান ৫০০ থেকে ৭৫০ টাকার মধ্যে পাওয়া যাচ্ছে। ছেলেদের সোয়েটারের দাম ৬০০ টাকা থেকে ১৪০০ টাকার মধ্যে ঘোরাফেরা করছে। মহিলাদের কাশ্মীরী কাজের জ্যাকেট এবং পশমিনার দাম রয়েছে ১৭০০ থেকে ২০০০ টাকার মধ্যে। এখানে ছেলেদের বিশেষ ধরনের হুডি পাওয়া যাচ্ছে যার হাতা আলাদা করা সম্ভব। এগুলির দাম একটু বেশি। ২৭০০ টাকার কাছে পড়ে যাচ্ছে দাম।
সকলের জন্যই সোয়েটার, টুপি, মোজা, হাতমোজা, জ্যাকেট তো রয়েছেই। এছাড়া মহিলাদের জন্য কাশ্মীরি কাজের রঙিন শাল, জ্যাকেট, কুর্তি থেকে পুরুষদের হুডি অবধি সবকিছুই পাওয়া যাচ্ছে এই শীত পোশাকের রঙিন বাজারে। তবে ডিজাইনে তেমন নতুনত্ব কিছু আসেনি। অর্থাৎ এবার নতুন কিছু নয়, যা অন্যান্য বছর পাওয়া যায় এবারও সেগুলিই পাওয়া যাচ্ছে।
বিক্রেতারা জানালেন গত কয়েক বছর ধরে জিনিসের দাম মোটামুটি একই রয়েছে। সপ্তাহান্তে এবং কাজের দিনের সন্ধেবেলায় বিক্রিবাটা বেশ ভালই হয়। এখনও বহু ক্রেতাই নিজের জন্য বা কাছের মানুষদের জন্য শীত পোশাক কেনার ক্ষেত্রে এই অস্থায়ী তথাকথিত ভুটিয়া বাজারকেই ভরসা করেন।
অফিস ফেরত বহু ক্রেতাই বাড়ি ফেরার পথে একবার ঢুঁ মারেন এখানে। পছন্দ করে যান। পরে পরিবারের সকলকে নিয়ে এসে কেনাকাটা করে যান। আবার অনেকে ভাল লাগলে কিনেও নেন।













