State

বাজির নতুন ঠিকানা তাজপুর

জায়গাটার নাম তাজপুর। গত দু’সপ্তাহ ধরে এখানে প্রচুর মানুষের আনাগোনা। এক্কেবারে সাজোসাজো রব, আদর্শ মেলার পরিবেশ। নিশ্চয়ই এতক্ষণে দুয়ে দুয়ে চার হিসেব কষে ধরেই নিয়েছেন যে বঙ্গোপসাগরের তটে তাজপুর পর্যটন কেন্দ্রের কথা বলছি। এখানেই কিন্তু টুইস্ট। এই তাজপুর হুগলি জেলায় অবস্থিত। হুগলির ৩টি বাজি তৈরির তীর্থস্থান বেগমপুর, কালীপুর (ডানকুনি) ও হরিপালের দাপটের মাঝেই মাথাচাড়া দেওয়া বাজির এক নতুন আঁতুড়ঘর। এই জেলারই মহকুমা শহর শ্রীরামপুর থেকে বেগমপুরগামী ট্রেকারে ৪৫ মিনিট লাগে তাজপুর মাদ্রাসা। এখান থেকে হেঁটে ১০ মিনিটেই আপনি পৌঁছে যাবেন বাজির আখড়ায়। যদি রেলপথে আসতে চান তাহলে হাওড়া থেকে বর্ধমান কর্ড লোকাল ধরে বেগমপুর স্টেশনে পৌঁছতে সময় লাগবে ৩৫ মিনিট। স্টেশন থেকে নেমে ১০ মিনিট হাঁটলেই গন্তব্য আপনার সামনে।

বাজিপ্রেমী মানুষজন এখন আস্তে আস্তে ভিড় বাড়াচ্ছেন তাজপুরে। রেললাইনের দু’পাড় জুড়ে যেন কেবল বাজির সমুদ্র। বিক্রেতারা বাড়ির সামনেই ত্রিপল খাটিয়ে একটি খাটিয়া জোগাড় করে যে যার মত বসে পড়েছেন। এঁদের মধ্যে বেশ কিছু পরিবার আছে যারা নিজেরাই তাদের নিজস্ব কারখানায় বাজি তৈরি করে বাড়ির ভেতরেই বিক্রি করছে। সেরকমই এক বাজি বিক্রেতা হলেন মাধাই নাথ। শহরাঞ্চলে যাঁরা বাজি বিক্রির দোকান দেন তাঁরাই মূলত মাধাইবাবুর খদ্দের। তাছাড়া খুচরো বিক্রিও ভালোই হয়। সোরা, গন্ধক, ব্যারেটা প্রভৃতি অতি আবশ্যিক মাল-মশলার দামবৃদ্ধি ও ১৮ শতাংশ জিএসটির জোড়া ধাক্কা সত্ত্বেও তাজপুরের মানুষগুলি দাম সাধ্যের মধ্যে রেখে গুণমান বজায় রাখার আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছেন। মাটির তুবড়ির দাম ১২ এবং ১৫ টাকা। গতবারেই মানুষের মনে জায়গা করে নেওয়া জেনারেটর তুবড়ির দাম ১৫ টাকা প্রতি পিস। বন্দুক নামের এক নতুন আতসবাজি বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকায়।


পড়ুন আকর্ষণীয় খবর, ডাউনলোড নীলকণ্ঠ.in অ্যাপ

ক্রেতা-বিক্রেতার দরাদরি ও হাঁকডাকের মধ্যেই আলাপ হল বিশ্বজিতের সঙ্গে, ইনিও এক বাজি বিক্রেতা। এবার বাজারে নতুন আসা বেশ কিছু সামগ্রির সঙ্গে তিনি আলাপ করালেন। ডিম পাড়া মোরগের দাম মাত্র ৫৫ টাকা। সানসাইনের ককটেল বা সোজা কথায় আলোবাহারি ক্যাকলিন আতসবাজির দাম ২৫০ টাকা। অজন্তার ক্যাকলিন ডোমিনোর জন্য দিতে হবে ১৩০ টাকা। এটি তার বাহারি রঙে ভরিয়ে দেবে রাতের আকাশ। এবার অবাক হওয়ার পালা। মিঞা-বিবি বাজির খেলা চাক্ষুষ করতে হলে অতি অবশ্যই ১০০ টাকা খরচ করতে হবে। দোকানদারের দাবি রীতিমতো দাম্পত্য কলহের মতো মারপিট করে নাকি আলোর কারসাজি দেখাবে এই বাজি।

এইভাবেই প্রচারের আলোর বৃত্তের বাইরে থেকেও অস্তিত্বের লড়াই চালাচ্ছে তাজপুর। বেগমপুর, কালীপুর এবং হরিপাল নিঃসন্দেহে বাজির জন্য বিখ্যাত। তবে সেখান থেকে বাজি কিনে যে ক্রেতাদের ঠিক মন ভরছে না তা খোদ ক্রেতাদেরই স্বীকারোক্তি। তাই বাজি বাজারের ক্ষেত্রে এবার বিকল্প হতেই পারে তাজপুর। তাজপুরে বাজি কিনতে আসা ক্রেতাদের কথায়, ‘ন্যায্য মূল্যে বাজির সঠিক গুণমান’, এটাই নাকি তাজপুরের ‘তাজ’।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *