World

রাতারাতি উধাও হয়ে যান মানুষ, অদ্ভুত প্রথার পিছনে রয়েছে করুণ কাহিনি

ভোরের প্রথম আলো প্রতিদিন একইভাবে সকলের মনে নতুন আশা, উদ্দীপনার সঞ্চার করেনা। বরং এমনও মানুষ আছেন যাঁরা আলো ফোটার আগেই উধাও হয়ে যান চেনা গণ্ডি থেকে।

মানুষ যে সবসময় জীবনে সফল হন এমন তো নয়। কিছু মানুষের জীবনে ব্যর্থতা পিছু ছাড়ে না। কেউ ব্যর্থ হন কর্মক্ষেত্রে। কেউ ঋণ নিয়ে তা মেটাতে না পেরে ব্যর্থ। কারও আবার সংসারজীবন সুখের নয়। কোনওভাবেই পরিবারের সঙ্গে তাঁর সংঘাত থামে না।

কেউ আবার বুঝতে পারেন তাঁকে কেউ চাইছেন না। এভাবে নানা কারণে ব্যর্থ মানুষরা কোনও একদিন কাউকে কিছু জানতে না দিয়ে কার্যত উবে যান। রাতের অন্ধকারে হারিয়ে যান চেনা গণ্ডি, পরিচিত কোণা থেকে। তাঁরা কোথায় হারিয়ে গেলেন তা তাঁদের পরিবারও জানতে পারেনা। ব্যর্থতার কারণে এই হারিয়ে যাওয়াই জাপানে জোহাৎসু নামে পরিচিত।

জাপানে প্রতিবছর প্রায় ১ লক্ষের ওপর মানুষ স্বেচ্ছায় নিজের পরিচিত পরিবেশ থেকে নিখোঁজ হয়ে যান। কেউ মাত্রাতিরিক্ত ঋণের বোঝা থেকে মুক্তি পেতে আবার কেউ বা পারিবারিক অশান্তি থেকে বাঁচতে নিজেকে লুকিয়ে ফেলার ইচ্ছায় জোহাৎসু হয়ে যান।

জাপানি ভাষায় জোহাৎসু-র অর্থ হঠাৎ করে উবে যাওয়া। সবার অলক্ষ্যে পরিবার বা চাকরি ছেড়ে মানুষগুলি কোনও নির্জন বা অচেনা জায়গায় একা থাকতে শুরু করেন।

সেখানে নতুন করে কিছু কাজ করেন। জীবন কাটাতে থাকেন পরিচিতদের থেকে অনেক দূরে। যেখানে তাঁদের কেউ চেনেন না। এমনকি মানুষগুলি এই ভয়েও থাকেন পাছে কেউ তাঁদের চিনে না ফেলেন!

এইভাবে স্বেচ্ছায় হারিয়ে যেতে চাওয়া মানুষগুলিকে সহায়তা প্রদান করে একধরনের সংস্থা। এদের বলা হয় নাইট মুভারস। এরা জোহাৎসু-দের বিষয়ে সম্পূর্ণ গোপনীয়তা বজায় রাখে।

ইচ্ছুক জোহাৎসু-দের সাথে এরা ফোনের মাধ্যমে যোগাযোগ করে। জোহাৎসুদের অন্যত্র থাকার বন্দোবস্ত থেকে কাজের ব্যবস্থা করে দেওয়া, সবই এই নাইট মুভারসদের দায়িত্ব। তারা এজন্য পারিশ্রমিকও নেয়।

৯০-এর দশকে জাপানে প্রবল অর্থনৈতিক ধস নেমেছিল। তখন বহু মানুষ সেই অচলাবস্থা থেকে মুক্তি পেতে এভাবে স্বেচ্ছায় নিখোঁজ হওয়ার রাস্তা খুঁজতে থাকেন। তখন হাতরি নামের এক ব্যক্তি প্রথম এই ধরনের একটি সংস্থা তৈরি করে হতাশাগ্রস্ত মানুষগুলিকে সাহায্য করেন।

জাপান এমন একটি দেশ যেখানে দুর্ঘটনা বা অপরাধমূলক কারণ না ঘটলে কোনও ব্যক্তির গোপনীয়তাতে হস্তক্ষেপ করা হয়না। তাই জোহাৎসুরা নিশ্চিন্তে এটিএম অবধি ব্যবহার করতে পারেন।

তবে জোহাৎসুরা যে সবসময় এভাবে লুকিয়েই সব চাপ থেকে মুক্ত হন তা নয়। বরং অনেকসময় উল্টোটাও ঘটে। তাঁরা এভাবে একা থাকতে থাকতে একাকীত্বের শিকার হয়ে পড়েন।

Show Full Article

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *