Story

অন্য পুজো

একাদশীর ভোরে হরিচরণের সঙ্গে দ্রুত পায়ে স্টেশনে ঢোকে কাশী। আনন্দে ডগমগ তার চোখমুখ। পায়ের ছন্দেও যেন ঘরে ফেরার তীব্র টান।

ছলছলে চোখ মেলে ঠায় দাঁড়িয়েছিল ওরা। জ্যাঠতুতো-খুড়তুতো ভাই। কাশীনাথ আর বিশ্বনাথ। দশের কোঠার আশেপাশে বয়স। পরনে রংচটা হাফপ্যান্ট। গায়ে সস্তা ছিটের জামা একজনের। অন্যজনের হলুদ গেঞ্জি।

শিয়ালদা স্টেশনের জনসমুদ্রে তখন জোয়ারভাটা চলছে। পঞ্চমীর শেষ দুপুর। একেকটা দৈত্যের মতো ট্রেনের গেট থেকে বেরচ্ছে পালে পালে মানুষ। আর থইথই করে উঠছে সারা এলাকা। সকলের বাইরে যাওয়ার প্রবল তাড়না। সেই তাড়ায় একে অন্যের ওপর হুমড়ি খেয়ে পড়ছে। এমনকি হোঁচট খেয়ে মাটিতে পড়ার মুখে কোনও মতে টাল সামলে নিচ্ছে কেউ। কিছুক্ষণ পরে আবার ফাঁকা সুনসান চারদিক।


চোখ ওদের ভিড়ের ওপর থাকলেও কান কিন্তু পেতে রেখেছে বাপ-কাকার ঢাকের দিকে। কাশীর বাবা হরিচরণ আর বিশুর বাবা ষষ্ঠীচরণ পিঠোপিঠি দু’ভাই। বাপ-কাকারা ঢাকে বোল তুললে ছেলেরা হাতে তুলে নিচ্ছিল ছোট্ট কাঁসি। তালে তাল মিলিয়ে সুর তুলছিল কাঁই না না, কাঁই না না… ।

মুর্শিদাবাদের কান্দির প্রত্যন্ত গ্রামের ছেলে হরিচরণ প্রথম পা রেখেছিল শহর কলকাতায়। পাশের গ্রামের বিষ্টু ঢাকির সঙ্গে কাঁসরের জোগানদার হয়ে। সেই শুরু। পরে তো বিষ্টুর কাছে ঢাক বাজানোর পাঠ নেয়। তারও পরে ঢাকের অধিকার। তবে সে সব যৌবনে পা রেখে।


বিষয়ী মানুষ হরিচরণ। দলভারী করতে ভাই ষষ্ঠীচরণকেও পরে দলে ভিড়িয়ে নেয়। রোজগার বাড়ে বেশ কিছুটা। এবার পুজোর তোড়জোড় শুরু হতে হরিচরণ নতুন বুদ্ধি যোগায়, ছেলেদের সঙ্গে নিলে কেমন হয়! কাঁসর পেটাবে।

গত বছর পর্যন্ত গ্রামের অভাবী বাচ্চা ছেলেকে সঙ্গে নিয়েছিল কাঁসর বাজাতে। শহর থেকে ফিরে তাদের বাপ-মায়ের হাতে তুলে দিয়েছে রোজগারের কিছু টাকা। তাই নিজেদের ছেলেরা সঙ্গে থাকলে ঘরের টাকা পুরোটাই ঘরে থাকে। কাউকে ভাগ দিতে হয় না।

নুন আনতে পান্তা ফুরনো সংসার তাদের। ষষ্ঠীচরণেরও মনে ধরে দাদার প্রস্তাব। কিন্তু দু’বউয়ের মুখ ভার হয়ে যায় কথাটা পাড়তেই।

সংসারের হালহকিকত ওরাও যে জানে না তা নয়। জমিজিরেও নেই যে চাষ করে খাবে। পঞ্চায়েত অফিস হাঁটাহাঁটি করে, পার্টির মিটিং-মিছিলে যোগ দিলে হয়তো একশো দিনের কাজ মেলে। তবে নামেই গাল ভরা একশো দিন। বছরভর মাস খানেকও কাজ জোটে কিনা সন্দেহ। বাকি সময় তাই সংসার সামাল দেয় স্বামী-স্ত্রী বেত বুনে, বা অন্যের জমিতে জন খেটে। এজন্য পুজোর কটা দিন মরদ ঢাক বাজালে মেলে বাড়তি রোজগার। পরের কমাস নিশ্চিন্দি।

বউয়ের মনোবেদনার কারণ হরিচরণও টের পায়। মায়ের আগমনে সারা বছরে একবারই তো গরিবগুরবোদের মুখে হাসি ফোটে। নিজেদের মতো করে। অথচ সেই পুজোর দিনগুলোয় কিনা ওদের ঘরের মানুষ থাকে বহু দূরে। কোন সে ভিন শহরে। বাড়তি রোজগারের ধান্দায়। ছেলেদের আঁকড়ে ধরে এতদিন তবু ওরা স্বামী-বিরহের দুঃখ ভুলত। এবার সেই কোলের ছেলেরাও পাড়ি দেবে ভিন দেশে! একাকীত্বের আঁধারে কীভাবে কাটবে পুজোর দিনগুলো!

কলকাতা যাওয়ার কথায় অবশ্য কাশী ও বিশু, দুজনে বেশ আমোদ পায়। এতদিন বাপ-কাকার মুখ থেকে শহরের সাত-পাঁচ গল্প শুনত। মজা পেত। এবার সে সব কিনা নিজেদের চোখে দেখতে পাবে। কম কথা!

মিড ডে মিলের খাবারের লোভে এখন দু’ভাই রোজ হত্যে দেয় গ্রামের ফ্রি আপার প্রাইমারি স্কুলে। কলকাতা যাওয়ার কথা শুনে স্কুলের বন্ধুদের মধ্যেও কদর বেড়ে যায় ওদের ঘিরে। সবার মুখে এক রা- কলকাতা থেকে কী আনবি আমার জন্যে? ওরা দেখেছে, ঢাক কাঁধে পুজোর পর যখন বাপ-দাদারা গাঁয়ে ফেরে, তখন তাদের হাতে থাকে হরেক রকম প্যাকেট-পুঁটলি। তা থেকে বেরোয় নতুন জামা, কাপড়, জুতো, সাজের বাহারি সব জিনিস।

ঢাকে কাঠি পড়তে চটকা ভাঙে দু’ভাইয়ের। বাবার কড়া নির্দেশ ছিল, আমরা ঢাকে বোল তুললি, তোরা সাথি সাথ কাঁসরে তাল মেলাবি। ওরা তাই শুরু করে দেয়, কাঁই না না, কাঁই না না…।

কাঁসর বাজাবার ফাঁকে বিশু ফিসফিস করে বলে ওঠে, ‘দাদা, বড় খিদে পায় রে’।

বাবাকে বলার সাহস নেই। দাদার কাছে তাই আর্জি মেলে ধরে ছোট ভাই। কাশীরও খিদে পাচ্ছে অনেকক্ষণ ধরে। পাবে নাই বা কেন! সেই কোন রাত থাকতে বাপ-কাকার হাত ধরে ওরা ঘর ছেড়েছে। নিশুতি আকাশ ভরে তখন ঝিকমিকে তারার মেলা। সুনসান পথঘাট। পথের কুকুরগুলো পর্যন্ত রাতভর দাপাদাপি করে ক্লান্তিতে লেজ গুটিয়ে ঘুমচ্ছিল।

পঞ্চায়েত অফিসের পাশ দিয়ে যাবার সময় মনটা ককিয়ে উঠেছিল দু’ভাইয়ের। অফিস ঘরের পাশের মাঠে পুজো প্যান্ডেলে রঙিন কাপড় জড়ানো হয়েছে। দুদিন আগে ওই প্যান্ডেলের বাঁশের কাঠামোয় চড়ে দলবল মিলে লুকোচুরি খেলেছে। গত বছরও পুজোর কটা দিন প্যান্ডেলের কোল ছেড়ে ওরা কখনও নড়েনি। ঘুমোবার সময়টুকু ছাড়া। এবার কোথায় পুজো দেখবে, কে জানে!

মেলা কাঁসর বাজাচ্ছিস ক্যানে-হরিচরণের চড়া বকুনিতে কাশীর হাত থেমে যায়।

বায়না হয়নি এখনও। কাশী অনুমান করে, বাবার মেজাজ চড়েছে। পেটের খিদে এখন মুখে আনা যাবে না।

সন্ধের অন্ধকার ক্রমে ঘন হয়ে আসে। বাতাসে শিরশিরে ঠান্ডার আমেজ। সকালে ট্রেনে কলকাতা রওনা হওয়ার সময় যেমন লাগছিল আর কি! খিদেটা ফিরে চাগাড় দেয়। ট্রেনে সেই কোন দুপুরবেলা মুড়ি আর আলুর তরকারি খেয়েছিল। তারপর থেকে তো শুধু বেড়ালছানার মতো পোঁটলাপুটলি, ঢাক নিয়ে স্টেশনের এ-মাথা থেকে সে-মাথা বসে-দাঁড়িয়ে কাটানো।

আবার ঢাকে কাঠি পড়েছে। তাড়াহুড়ো করে কাঁসর পেটাতে থাকে দু’ভাই। এবার লোক জড়ো হয়েছে বেশ ক’জন। কিছুক্ষণ পর বাজনা থামিয়ে হরিচরণই দরাদরি শুরু করে দেয়। শেষে ভাইয়ের সঙ্গে শলা সেরে হাঁক পাড়ে – ‘অ্যাই কাশী, চল আমার সঙ্গে। বিশু যাবে ওর বাপের সাথে’।

চোখ ছলছল করে ওঠে দু’ভাইয়ের। প্রথমবার শহরে পা রেখে কত রঙিন স্বপ্নের জাল বুনছিল। কিন্তু ভাইয়ের থেকে আলাদা থাকতে হবে শুনে সে জাল ছিঁড়ে ততক্ষণে ফর্দাফাঁই।

কাঁধে ঢাক তুলে নেয় ষষ্ঠীচরণ। বিশুর হাত ধরে হাঁটা দেয় দুজন লোকের সঙ্গে। এবার কাশীর পালা। হরিচরণ পিছু নেয় তিনজন অচেনা লোকের। তাদের অনুসরণ করে কাশী। ভারাক্রান্ত মনে। বাহারি আলোয় কিছুক্ষণ আগেও যে শহরটাকে উজ্জ্বল মনে হচ্ছিল তা যেন কেমন ফিকে হয়ে ভাসে কাশীর চোখে।

।।২।।

একাদশীর ভোরে হরিচরণের সঙ্গে দ্রুত পায়ে স্টেশনে ঢোকে কাশী। আনন্দে ডগমগ তার চোখমুখ। পায়ের ছন্দেও যেন ঘরে ফেরার তীব্র টান।

তখনও ভোরের আলো তেমন করে ফোটেনি। বাতাসে শীতের আমেজ বাড়িয়েছে উত্তুরে হাওয়া। পাঁচ দিনের ছুটি কাটিয়ে শিয়ালদা স্টেশনও যেন গায়ে জড়িয়ে নিয়েছে কুঁড়েমির চাদর।

ডালতলার চাটুজ্যে বাড়ি থেকে ওরা শেষ রাতে হাঁটাপথ ধরেছিল স্টেশনের। পাঁচদিনে কেমন একটা মমতায় জড়িয়ে পড়েছিল পরিবারের সকলের সঙ্গে। ভোর রাতে যখন বাড়ি থেকে পা বাড়ায় তখন ঘুম ভেঙে সদর দরজায় এসে দাঁড়িয়েছিল বাড়ির রাঙা ঠাকুমা আর মিষ্টি দিদিমণি।

স্টেশনে পা রেখে বাবার সঙ্গে কাশীরও দু’চোখ খুঁজছিল ছোট ভাই ও কাকাকে। ওর ছোট্ট বুকে কত কথা জমে আছে। এই পাঁচদিনের। কত উপহার দেখানো বাকি বিশুকে। কাল রাতেই তো গঙ্গার ঘাট থেকে বিসর্জন সেরে বাড়ি ফিরে কত আনন্দ, কোলাকুলি, প্রণাম, মিষ্টি খাওয়া। চেনা মুখগুলো কেমন অচেনা হয়ে উঠেছিল সিঁদুর খেলার পর।

আনন্দের হাট ভাঙতে রাত গভীর হয়। তারই মাঝে কাশীর চোখে পড়ে, বাবার হাতে টাকা তুলে দিচ্ছেন বাড়ির বড় কর্তা। গিন্নিমা দেন নতুন ধুতি, শাড়ি, জামা-প্যান্ট। রাঙা  ঠাকুমা নিজের হাতে তুলে দেন বড় প্লাস্টিক ব্যাগে মিষ্টির প্যাকেট। তখনও আসল চমকটা বাকি ছিল। বাড়ির ছোট মেয়ে মিষ্টি দিদিমণি কাশীর হাতে তুলে দেয় একটা বড় বাক্স। নরম গলায় বলে- চকোলেট আছে। বাড়ির সকলে মিলে খেয়ো।

ভাইকে প্রথম দেখাবে বলে চকোলেটের বাক্সটা নিজের পুঁটলিতে বেঁধে নিয়েছে কাশী। কিন্তু বিশু কই? এখনও যে এল না। পাশের সাত গাঁয়ের ঢাকিরা ততক্ষণে জড়ো হতে শুরু করেছে। দলবেঁধে সব গাঁয়ে ফিরবে। ভোরের আলোর তেজ ক্রমে আরও বাড়ে। একসময় সূর্যের সোনালি রোদও ছড়িয়ে পড়ে স্টেশনের বাইরের সারা চত্বরে।

উদ্বিগ্ন হরিচরণ আপন মনে বকে চলে – ‘দত্তাবাদ তো দূর লয়। বারোয়ারি পুজোয় গেছিস। দশমীতে ভাসান। পই পই করে বলে দিনু একাদশীর ভোর থাকতি ভোরের বাসে ইস্টিশন পোঁছাবি। তা লয়, এখনও লাট সাহেবের দেখা লাই’।

সময় দ্রুত গড়িয়ে চলে। ঢাকিরা এবার ছোট দলে ভেঙে পা বাড়ায়। ট্রেন ধরার তাড়া সকলের। কাশীদের মুখ শুকিয়ে আসে। তবে কি ভাইকে না নিয়েই গাঁয়ে ফিরবে বাপ!

উৎকণ্ঠা হরিচরণকেও ছুঁয়ে যায়। কিছুটা যেন উদভ্রান্ত দেখায়। ছেলেকে স্টেশনে বসিয়ে রেখে খুঁজতে বেরোয় বাইরের চত্বরে। কোনও বিপদে পড়েনি তো ওরা!

অনেকখানি উথালপাতাল সময় পেরিয়ে শেষে হরিচরণ স্টেশনে ঢোকে ভাইকে সঙ্গে নিয়ে। বিশুকে দেখে চমকে ওঠে কাশী। সারা গাঁয়ে কাঁথা জড়ানো। পা টেনে হাঁটে ভাই। পাঁচ দিনে একটা ঝড় বয়ে গেছে যেন ওদের ওপর দিয়ে। হাত ধরে কাছে টেনে নিতে গেলে চমকে ওঠে কাশী। বিশুর গা যে জ্বরে পুড়ে যাচ্ছে।

অসহায় রাগে গজরাতে থাকে হরিচরণ – ‘হায় হায় গো, ওরা মানুষ লয়। একরত্তি ছেলেটার জ্বর। একটুকু ওষুধপত্তি দেয় লাই’।

শ্লথ পায়ে ওরা এগোয় ট্রেন ধরতে। রাত নামার আগেই কান্দি ফিরতে হবে। ঘরের মানুষগুলো যে হাপিত্যেশ করে বসে আছে। টিকিট আগেই কেটে রেখেছিল হরিচরণ। হুইসল দিয়ে ট্রেন ছেড়ে দেয়। ভেতরে ভিড় কম থাকায় পায়ের কাছে ঢাক রেখে ওরা সিটেই হাত-পা ছড়িয়ে বসে। বিশুকে কাছে টেনে নেয় কাশী। গা তেতে পুড়ে আছে। কাঁথাটা যত্ন করে জড়িয়ে দেয় ভাইয়ের সারা শরীরে।

ট্রেনের দুলুনিতে বিশু ঘুমে ঢলে পড়ে। কাশীর কাঁধে মাথা রেখে। ভাইয়ের সঙ্গে হিসেবনিকেশ করতে গিয়ে হরিচরণ আবার ঝাঁঝিয়ে ওঠে – ‘এত কম টাকা ক্যানে? বায়না তো বেশি ছিল’।

ষষ্ঠীচরণ ক্লান্ত কণ্ঠে জবাব দেয় – ‘ছোটলোকের বেহদ্দি। চাঁদা নাকি কম উঠেছে। তাই কম দিলে’।

‘তুই কিছু বললুনি’ – চড়া গলায় জানতে চায় হরিচরণ।

এতক্ষণে ধৈর্যের বাঁধ ভাঙে ষষ্ঠীচরণের। পাঁচদিনের দুর্দশা মেলে ধরে – ‘ওরা কী মানুষ! মাঠের মাঝে প্যান্ডেল। রাতভর চলে মদ খেয়ে হল্লা। তার ওপর মশার কামড়। বাপ-ছেলে দু’চোখের পাতা এক করতে পারিনি। তারপর তো ছেলের ধুম জ্বর। নবমী থেকে…’

জ্বরের ঘোরে বিশু তখন বিড়বিড় করে – ‘বড়ো খিদে।…আর এট্টু খিচুড়ি দাওনি।…আর এট্টু…’।

ক্ষোভের সঙ্গে ষষ্ঠী বলে চলে – ‘দুবেলা পেট পুরে খেতেও পায়নি আমরা। ছেলেটা খিদের জন্যে কাঁদলে আমি মুড়ি কিনে দিইছি…’

কথা শুনে দু’চোখ জলে ভোরে ওঠে কাশীর। মনে পড়ে যায় ওদের পাঁচদিনের সুখস্মৃতি। প্রতিদিন যত্ন করে খেতে দিত চাটুজ্যে বাড়িতে। দুবেলা খাওয়ার সময় পালা করে তদারকি করত রাঙা ঠাকুমা ও মিষ্টি দিদিমণি। আক্ষেপ হয় ভাইয়ের জন্য – সবাই কেন চাটুজ্যে বাড়ির মানুষগুলোর মতো অমন ভালো হয় না!

সারা ট্রেন পথ নেতিয়ে থাকে বিশু। ক্লান্তিতে দু’চোখ জড়িয়ে আসে কাশীরও। তারই মাঝে আধো ঘুম ঘোরে শোনে বাপ-কাকার বকবকানি। পাঁচদিনের আগল যেন খুলে গেছে। ভাগাভাগি করে নেয় নিজেদের অভিজ্ঞতা।

মাঝে একবার ধড়মড়িয়ে জেগে ওঠে ওরা। স্টেশন থেকে কেনা হয়েছে পরোটা-তরকারি। চেটেপুটে তাই খায় সকলে। খিদের মুখে যেন অমৃত ঠেকে। ট্রেন এগিয়ে চলে নিজের ছন্দে। দুপুরের রোদ একসময় মরে আসে। ট্রেন থেকে নেমে ওরা গুঁতোগুঁতি করে চড়ে বসে বাসে। আবার ঘন্টাখানেক বাসের ঝাঁকুনি। শেষে হাঁটা।

পাকা রাস্তা ছেড়ে এবার মেঠো পথ। জমির আলপথ থেকে যখন ওরা গ্রামের তালগাছের মাথা দেখতে পায় ততক্ষণে সন্ধ্যা নামে ঘন হয়ে। বাসের মধ্যে ভাইয়ের হাতে চকোলেটের বাক্স ধরিয়ে দিয়েছিল কাশী। বুকের কাছে সেই বাক্স জড়িয়ে ধরে বিশু আলপথ ভেঙে এগিয়ে চলে। অন্ধকারের মধ্যেও কাশী টের পায়, দিদিমণির ভালবাসার উত্তাপ যেন বিশুর জ্বরের তাপকে ছাপিয়ে গেছে।

(চিত্রণ – সংযুক্তা)

Show Full Article

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button