Sports

স্পেনকে হারিয়ে কোয়ার্টার ফাইনালে পৌঁছে ইতিহাস গড়ল রাশিয়া

খাতায় কলমে নাকি এবারের বিশ্বকাপে রাশিয়ার ফুটবল দল তাদের সর্বকালীন দুর্বল দল। সেই তথাকথিত দুর্বল দলই রাশিয়াকে বিশ্বকাপের ইতিহাসে প্রথম বারের জন্য পৌঁছে দিল কোয়ার্টার ফাইনালে। এর আগে বিশ্বকাপ খেললেও রাশিয়া কখনও কোয়ার্টার ফাইনালের মুখ দেখেনি। তার আগেই বিদায় নিয়েছে। এদিন রাশিয়া কোয়ার্টার ফাইনালে পৌঁছেছে ২০১০-এর বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন স্পেনকে হারিয়ে। খেলা গড়ায় টাইব্রেকার অবধি। আর সেখানেই মস্কোয় দেশের হাজার হাজার দর্শকের সামনে বাজিমাত করে রাশিয়া।

শেষ ষোলোর লড়াইয়ে এদিন মুখোমুখি হয় রাশিয়া ও স্পেন। ফুটবল বিশেষজ্ঞদের চোখে কিন্তু এগিয়ে ছিল স্পেন। খেলা শুরুর পরও সেটাই বোঝা যাচ্ছিল। বল দখলে রাশিয়াকে অনেকটাই পিছনে ফেলে দিয়েছিল স্প্যানিশ আর্মাডা। খেলার ১২ মিনিটের মাথায় রাশিয়ার সার্গেই ইগনাশেভিচকে ছুঁয়ে বল জড়িয়ে যায় তাদেরই গোলে। আত্মঘাতী গোল হিসাবেই পরিগণিত হয় এই গোল। স্পেন এগিয়ে যায় ১-০ ব্যবধানে। তারপর যে খেলা চলছিল তার গতি ছিল শ্লথ। মাঝ মাঠে দীর্ঘ সময় বল থাকছিল। আক্রমণ বা প্রতি আক্রমণে ছিলনা কোনও ধার। কোনও সেট পিস ছিলনা কর্নার ঘিরে। কেমন যেন একঘেয়ে লড়াই চলছিল ২ পক্ষে। এরমধ্যেই কর্নার থেকে নেওয়া একটি শটে হেড করে রাশিয়ার গোলের চেষ্টা আটকে যায় স্পেনের এক খেলোয়াড়ের হাতে। ইচ্ছাকৃত নয়। কিন্তু গোলমুখে বল হাতে লাগায় পেনাল্টি দেন রেফারি। এ নিয়ে তর্কও হয় বেশ কিছুক্ষণ। নেদারল্যান্ডসের রেফারিকে স্পেনের খেলোয়াড়েরা বোঝানোর চেষ্টা করেন এটা তাঁদের ইচ্ছাকৃত হ্যান্ডবল নয়। কিন্তু রেফারি নিজের অবস্থান বদলাননি। খেলার ৪১ মিনিটের মাথায় পেনাল্টি থেকে নিখুঁত শটে গোল করে খেলায় সমতা ফেরান রাশিয়ার আরতেম ডিজুবা।


পড়ুন আকর্ষণীয় খবর, ডাউনলোড নীলকণ্ঠ.in অ্যাপ

দ্বিতীয়ার্ধে স্পেন কিন্তু অনেকগুলি দুরন্ত সুযোগ তৈরি করে। বিশেষত খেলার ৬৫ মিনিটের মাথায় ইনিয়েস্তা মাঠে নামার পর স্পেনের খেলার ঝাঁঝ যেন একটু বেড়ে যায়। অন্যদিকে রাশিয়া দ্বিতীয়ার্ধে স্পেনের গোলে হানাই দেয়নি বলা যায়। তাদের অনেকটাই ক্লান্ত দেখিয়েছে মাঠে। কিন্তু রক্ষণটা সামলে রেখেছিল কোনওমতে। খেলার ৮৪ মিনিটের মাথায় স্পেনের ইনিয়েস্তার জোরাল শট ফিস্ট করেন রাশিয়ার গোলকিপার। সেই বলে ফের শট নেন স্পেনের আর এক খেলোয়াড়। কিন্তু তাও ফিস্ট করে বাঁচান গোলকিপার। প্রায় গোল হতে হতে বেঁচে যায়। এরপর ১-১ স্কোর নিয়ে খেলা গড়ায় অতিরিক্ত সময়ের লড়াইয়ে। এই অতিরিক্ত সময়ের ৩০ মিনিটেও কিন্তু এককথায় মাঠে একতরফা অ্যাডভান্টেজ ছিল স্পেনের। শুধু গোলটাই যা হচ্ছিলনা। অন্যদিকে মাটি কামড়ে রাশিয়া লড়ছিল রক্ষণ সামলে রেখে। রাশিয়ার খেলা দেখে মনে হচ্ছিল তারা মনে প্রাণে চাইছে খেলা টাইব্রেকারে গড়াক। হলও তাই। অতিরিক্ত সময়ের খেলায় পূর্ণ আধিপত্য রেখেও গোল করতে ব্যর্থ হয় স্পেন।

রাশিয়ার খেলা দেখে মনে হচ্ছিল তারা টাইব্রেকারে যেতে চাইছে। আর কেন তারা তা চাইছিল তা পরিস্কার হল সত্যিই খেলা টাইব্রেকারে গড়াতে। রাশিয়া যে অব্যর্থ পেনাল্টি মারতে কতটা হোমওয়ার্ক করেছে তা এদিনের খেলা থেকেই পরিস্কার। রাশিয়ার গোলকিপারেরও তুলনা হয়না। তাঁর সামনে ২ বার স্পেন টাইব্রেকারে গোল করতে ব্যর্থ হয়। অন্যদিকে ৪টে শটের একটাতেও গোল হাতছাড়া হয়নি রাশিয়ার। প্রথম ২টি করে শট ২ দলই গোল করে। স্পেনের তৃতীয় শট আটকে করে দেন রাশিয়ার গোলকিপার। কিন্তু তৃতীয় শটে রাশিয়া গোল করে এগিয়ে যায়। চতুর্থ শটে স্পেন গোল করে। রাশিয়াও গোল করে। স্পেনের পঞ্চম শটে ফের গোলকিপারের পায়ে লেগে বল উড়ে যায় গোলপোস্টের বাইরে। গোল বাঁচানোর পরই গোলকিপার বুঝতে পারেন তাঁরা এই মুহুর্তে ইতিহাসের পাতায় নাম লেখালেন। অন্যদিকে স্পেনের খেলোয়াড়দের চোখ তখন জল। তাঁরা জানেন রাশিয়ার পঞ্চম শট নেওয়ার দরকার নেই। এবারের মত বিশ্বকাপে স্পেনের দৌড় শেষ। ফিরতে হবে বাড়ি। রাশিয়া পৌঁছে গেছে বিশ্বকাপের শেষ আটে। রাশিয়ার মাটিতে দেশের হাজার হাজার দর্শকের সামনে রাশিয়ার এই ঐতিহাসিক মুহুর্ত রাশিয়ার খেলোয়াড়দের কাছে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *