ভিলেনের গাড়ি এসে সপাটে ধাক্কা মারল হিরোকে। হিরো ছিটকে পড়ল পাহাড়ি রাস্তার ধারে ঘন জঙ্গল ঘেরা খাদে। অট্টহাসি হাসল ভিলেন। হিরো খতম! পরিবার থেকে হিরোইন, সকলেই ধরে নিল হিরো মারা গেছে। চোখের জল, হা-হুতাস। এদিকে হিরোর দেহে প্রাণ দেখে তাঁকে শুশ্রুষা করে বাঁচিয়ে তুললেন স্থানীয় আদিবাসীরা। হিরো সুস্থ হলেন বটে, কিন্তু হারিয়ে গেল তাঁর পূর্ব স্মৃতি। সব ব্ল্যাঙ্ক! এরপর কেটে গেছে পাঁচ বছর। হঠাৎই একদিন ফের ভবঘুরে হয়ে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়ান হিরোকে ধাক্কা মারল একটি গাড়ি। ছিটকে পড়লেন হিরো। মাথা ফেটে গড়িয়ে পড়ল রক্ত। হাসপাতালে যখন তাঁর জ্ঞান ফিরল তখনই ম্যাজিক। হিরোর সব মনে পড়ে গেল। সে ছুটে গেল তার হারিয়ে যাওয়া পরিবারের কাছে। সিনেমার পর্দার চেনা গল্প তারিয়ে তারিয়ে উপভোগ করার পর অনেক দর্শকই হল থেকে বেরিয়ে গাঁজাখুড়ি গল্প বলে হাসতে হাসতে বাড়ি ফিরে যান। কিন্তু সেই সিনেমার সেই তথাকথিত গাঁজাখুড়ি গল্পটাই যদি বাস্তবে ঘটে! চমকে যাবেন বৈকি! বলবেন এও হয়! হ্যাঁ, এও হয়। হয় নয়, বলা ভাল হয়েছে। দূরে কোথাও নয়, উত্তরাখণ্ডের দেরাদুনে। সাত বছর আগে ভারতীয় সেনাবাহিনীর এক সৈনিক ধরমবীর সিং দেরাদুনের চাকরাতা রোডে সেনার গাড়ি চালাচ্ছিলেন। আচমকাই ঘটে দুর্ঘটনা। গাড়ি থেকে পাশের গভীর খাদে ছিটকে পড়েন তিনি। তারপর থেকে তাঁকে আর খুঁজে পাওয়া যায়নি। ২০০৯ সালে এই ঘটনার পর সেনাবাহিনী অনেক চেষ্টা করেছে তাঁকে খোঁজার। কিন্তু ফল হয়নি। তিন বছর পর ২০১২ সালে নিয়ম মেনেই তাঁকে মৃত ঘোষণা করে সেনা। তখন থেকে খাতায় কলমে মৃত ধরমবীর। মা, বাবা, স্ত্রী, সন্তানের কান্নাও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে একসময়ে শুকিয়ে যায়। ধরমবীরকে ছাড়াই জীবনে বাঁচার জন্য মনকে শক্ত করেন তাঁরা। এদিকে ছেলের শোকে মদ্যপান শুরু করেন ধরমবীরের বাবা ভারতীয় সেনার অবসরপ্রাপ্ত সুবেদার কৈলাস যাদব। সূত্রের খবর, গত সপ্তাহে গভীর রাতে হঠাৎই আলোয়ারের কাছে ভিতেদা গ্রামে ধরমবীরের বাড়ির দরজায় টোকা পড়ে। মদ্যপ অবস্থায় কৈলাস যাদব দরজা খুলে স্তম্ভিত হয়ে যান। স্বয়ং তাঁর ছেলে সামনে দাঁড়িয়ে। ঠিক দেখছেন তো! নাকি ছেলের ভূত! ঘোর কাটান ছেলেই। ধরমবীর বোঝান তিনি ফিরে এসেছেন। এরপর গোটা পরিবারের চোখের জল বাধ মানেনি। ধরমবীরের স্ত্রী মনোজ দেবী জানান, সব শেষ জেনেও তাঁর মনের কোণায় কোথাও একটা বিশ্বাস ছিল যে তিনি তাঁর স্বামীকে ফের দেখতে পাবেন। ঈশ্বর তাঁর সেই ইচ্ছা পূরণ করেছেন। বর্তমানে চিকিৎসাধীন ধরমবীর। তাঁর পরিবারের তরফে জানান হয়েছে, ধরমবীর তাঁদের জানিয়েছেন ২০০৯-এর সেই দুর্ঘটনার পর কী ঘটেছিল, কিভাবে তিনি বাঁচলেন, এতদিন কি করলেন, সেসব কিছুই তাঁর মনে নেই। শুধু মনে আছে গত সপ্তাহে তিনি হরিদ্বারে ভিক্ষা করছিলেন। সেইসময়ে একটি বাইক এসে তাঁকে ধাক্কা মারে। পরে রক্তাক্ত ও অচৈতন্য ধরমবীরকে ওই বাইক আরোহীই হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে জ্ঞান ফিরলে ধরমবীরের পূর্ব স্মৃতি ফিরে আসে। তাঁর সব মনে পড়ে যায়। এরপর সুস্থ হলে ওই বাইক আরোহীই তাঁকে পাঁচশোটা টাকা দেন। সেই টাকায় ট্রেনের টিকিট কেটে ধরমবীর ফিরে আসেন তাঁর নিজের গ্রামে। তাঁর পরিবারের কাছে। আপাতত আলোয়ারবাসীর আলোচনার খোরাক হয়ে দাঁড়িয়েছে ধরমবীরের এই আশ্চর্য প্রত্যাবর্তনের কাহিনি।
Read Next
National
April 15, 2024
মানে বুঝতে ভুল, ট্রেন হয়ে গেল ঘাতক এক্সপ্রেস
National
April 14, 2024
মাসিকের সময় ১৫ বছর ধরে ছুটি দিচ্ছে এই সংস্থা
National
April 13, 2024
মাছ ধরা বন্ধ, বাড়তে পারে মাছের দাম
April 18, 2024
এবার বর্ষায় বৃষ্টির পূর্বাভাস মৌসম ভবনের, খাদ্যের দাম নিয়ে পূর্বাভাস অর্থনীতিবিদদের
April 15, 2024
মানে বুঝতে ভুল, ট্রেন হয়ে গেল ঘাতক এক্সপ্রেস
April 14, 2024
মাসিকের সময় ১৫ বছর ধরে ছুটি দিচ্ছে এই সংস্থা
April 13, 2024
মাছ ধরা বন্ধ, বাড়তে পারে মাছের দাম
Related Articles
Comments