
শনিবার বেলা ১২টা নাগাদ আচমকাই মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজে আগুন লেগে যায়। অনুমান একতলার মেডিসিন বিভাগে আগুনটি লাগে। দ্রুত আগুন ছড়িয়ে পড়তে থাকে। আগুন লাগার অ্যালার্ম চালু হয়। দ্রুত আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে সব ওয়ার্ডে। ভয়ে হুড়মুড়িয়ে হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করেন চিকিৎসক, নার্স, রোগী ও হাসপাতাল কর্মীরা। একটি মাত্র সিঁড়ি বেয়ে নেমে আসতে গিয়ে বহু রোগী আহত হন। শুরু হয় প্রবল ধাক্কাধাক্কি। উদ্ধারে হাত লাগান রোগীর আত্মীয় থেকে স্থানীয় লোকজন। সবচেয়ে শোচনীয় পরিস্থিতি সদ্যোজাত শিশু ও মুমূর্ষু রোগীদের। কয়েকজন শিশুকে বার করে আনতে গেলে অসুস্থ হয়ে পড়ে তারা। সব শিশুকে বার করা সম্ভব হয়েছে কিনা তা এক ঘণ্টা পেরিয়ে যাওয়ার পরও নিশ্চিত হওয়া যায়নি। হাসপাতাল লাগোয়া গাছ বেয়েও কয়েকজন উঠে শিশুদের দ্রুত বার করার চেষ্টা করেন। কেউ কাউকে দেখছে না, ফলে বহু মুমূর্ষু রোগীকে আত্মীয়রাই হাসপাতাল থেকে বার করে আনার চেষ্টা করেন। অনেককে হাসপাতালের বাইরে এনে রাস্তায় শুইয়ে স্যালাইন দিতে দেখা গেছে। ধোঁয়ায় একজন আয়া ও এক রোগীর আত্মীয়ার মৃত্যু হয়। আগুনের ধোঁয়ায় বহু রোগী আরও অসুস্থ হয়ে পড়েন। অনেক মাকে হাসপাতালের বাইরে বার করে আনা হলেও তাঁদের আর্তনাদ করে কাঁদতে দেখা যায়। তাঁদের দাবি, তাঁদের বার করা হলেও সন্তানদের খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। হাসপাতালের সিঁড়ি দিয়ে হুড়োহুড়ি করে নামার সময় প্রবল ধাক্কাধাক্কিতে এদিন হাত ফস্কে পড়ে যায় দিন দশেকের একটি শিশু। তার মুখ দিয়ে রক্ত বার হতে শুরু করে। পরে তার মৃত্যু হয়। হাত ফস্কে পড়ে না গেলে হয়তো তার মৃত্যু হত না বলেই মনে করছেন চিকিৎসকেরা। হাসপাতালে ভর্তি শিশুদের বার করে আনা গেলেও ধোঁয়ার জন্য প্রায় ৫০টি শিশু অসুস্থ হয়ে পড়েছে। এদিকে ঘটনার পরই নড়েচড়ে বসে নবান্ন। মুখ্যমন্ত্রী নিজে চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যের নেতৃত্বে একটি বিশেষ দল গঠন করে দেন। যে দলে দমকল, স্বাস্থ্য ও পুলিশের পদস্থ আধিকারিকরা রয়েছেন। তাঁরা ঘটনাস্থলে গিয়ে তদন্ত করে দেখবেন। তারপর সেই রিপোর্ট জমা পড়বে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে। মুর্শিদাবাদ হাসপাতালের মর্মান্তিক অগ্নিকাণ্ডের পর দমকল, স্বাস্থ্য দফতরের আধিকারিকদের নিয়ে নবান্নে একটি বৈঠকও ডাকেন মুখ্যমন্ত্রী। সন্ধ্যার দিকে আগুন লাগার কারণ খতিয়ে দেখতে তদন্তভার সিআইডির হাতে তুলে দেওয়া হয়। এদিন মৃতদের পরিবার পিছু ২ লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ ঘোষণা করেছে রাজ্য সরকার।