State

পেটের দায়ে শুরু হল রং তুলির অন্য টান, বাংলার গ্রাম পেল বিশ্বজোড়া পরিচিতি

বাংলার প্রাচীন শিল্পকলার মধ্যে অন্যতম হল পট্টচিত্র বা পটচিত্র। পট শিল্পীরা পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকলেও একটি বিশেষ গ্রামে তাঁরা বংশপরম্পরায় বাস করেন।

মৌসুমি গুহ মান্না, কলকাতা : সে এক সময় ছিল। যখন না ছিল ফোন আর না ছিল দ্রুত যোগাযোগের কোনও ব্যবস্থা। বাংলার প্রত্যন্ত গ্রামগুলিতে তখন মানুষকে সচেতন করারও কোনও মাধ্যম ছিলনা। আর অনুন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে মানুষ তখন রোজগার করতে খুব বেশি শহরে যেতেও পারতেন না।

সেখানেই অনন্য ভূমিকা পালন করেছেন পশ্চিম মেদিনীপুরের পিংলার নয়া গ্রামের পটচিত্র শিল্পীরা। পিংলার নয়া গ্রাম পটচিত্র গ্রাম হিসাবে বিখ্যাত। যেখানে প্রায় ৪০০-র বেশি পটচিত্র শিল্পী বাস করেন। প্রত্যেকেই নিজের নামের সঙ্গে ‘চিত্রশিল্পী’ শব্দটি জুড়ে দেন।

একসময় আর্থিক দুরবস্থার কারণে বিকল্প আয়ের সন্ধান করতে গিয়েই কাগজ কিংবা কাপড়ের উপর বিভিন্ন ধরনের ছবি আঁকতে শুরু করেন এই শিল্পীরা। মূলত ভেষজ রং দিয়ে আঁকা এই ছবিগুলিকে বলা হয় পটচিত্র।

পটচিত্রে পৌরাণিক গাথা থেকে শুরু করে মানুষের সামাজিক, রাজনৈতিক, ধর্মীয় জীবনের রোজনামচা তুলে ধরা হয়। পটচিত্রের ছবিগুলির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে তৈরি হয় মানানসই গান। গ্রামে ঘুরে ঘুরে গান বেঁধে পটচিত্রের কাহিনি বর্ণনা করে উপার্জনের নতুন রাস্তাও তৈরি হয়।

সময়ের সঙ্গে পটচিত্রের ধরণ বদলেছে। এখন পৌরাণিক কাহিনির সঙ্গে বিভিন্ন আধুনিক ছবিও শিল্পীরা আঁকেন। যুগের সাথে তাল মিলিয়ে কাঠ, মাটি, কাচ এবং ধাতুর তৈরি বাসনপত্র থেকে ঘর সাজানোর জিনিসপত্রেও শিল্পীরা নিজেদের কর্মদক্ষতা ও শিল্পের ছাপ রাখেন। রাজ্যের বিভিন্ন মেলা তো বটেই ভিন রাজ্যের নানা প্রদর্শনীতেও শিল্পীরা অংশ নেন। এই পটশিল্পীদের কাছে পাওয়া যায় ৫০ থেকে ২০০০ টাকা দামের জিনিসপত্র।

এখন হাসিনা চিত্রকর, ফুলেশ্বরী এবং সালেমার মত শিল্পীদের হাতের কাজ সহজেই ক্রেতারা দেখতে পান। ক্রেতাদের চাহিদা অনুযায়ী শিল্পীরা অনলাইনে কিংবা হাতে হাতে জিনিস ডেলিভারি করেন।

অন্যান্য রাজ্য, এমনকি বিদেশেও তাঁদের কাজের প্রবল চাহিদা রয়েছে। একসময় নিদারুণ দারিদ্র থেকে বেরিয়ে আসার জন্য যে পটচিত্রকে গ্রামের শিল্পীরা আয়ের পথ হিসাবে বেছে নিয়েছিলেন আজ সেটাই তাঁদেরকে বিশ্বের দরবারে জায়গা করে দিয়েছে।

Show Full Article

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *