সার দিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে হাতি, ঘোড়া, একইসঙ্গে এতকিছু দেখা যায় বাংলার একটি গ্রামে
হাতি আর ঘোড়াই ছিল আদি অনন্ত। তবে সময়ের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে আরও অনেক কিছু। যা বাংলার একটি গ্রামে পৌঁছলে অবশ্যই দেখতে পাওয়া যায়।
মৌসুমি গুহ মান্না, বাঁকুড়া : বাংলার মৃৎশিল্পের অন্যতম প্রাচীন ও শ্রেষ্ঠ নিদর্শন হল টেরাকোটার কাজ। শিল্পীদের দক্ষতা, শিল্পকলার নান্দনিকতা, দ্রব্যগুলির ব্যবহারিক মূল্য, সবদিক থেকেই বাংলার টেরাকোটা শিল্প অতুলনীয়। শিল্পসামগ্রিগুলির পরতে পরতে জড়িয়ে থাকে গ্রামবাংলার শিল্পীদের নৈপুণ্য ও শিল্পজ্ঞান।
পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জায়গায় টেরাকোটার কাজের নিদর্শন দেখতে পাওয়া যায়। যার মধ্যে মন্দিরনগরী বিষ্ণুপুর এবং হুগলীর দশঘরার স্থাপত্য অন্যতম। তবে মন্দির ও স্থাপত্যের সীমানা ছাড়িয়ে টেরাকোটা এখন ঢুকে পড়েছে বাড়ির ড্রয়িংরুমেও। সেই কাজে সাহায্য করেছে টেরাকোটা গ্রাম বা বাংলার টেরাকোটা হাব। প্রসঙ্গত টেরাকোটা শব্দটি ইতালিয়। টেরা এবং কোটা, এই ২ শব্দ মিলে হয়েছে টেরাকোটা। যার ইতালীয় ভাষায় অর্থ রান্না করা মাটি।
বাঁকুড়া জেলায় অবস্থিত সেই গ্রামের নাম পাঁচমুড়া। যেখানে একসময় শুধুমাত্র হাতি, ঘোড়াই তৈরি হত। তবে কয়েক বছর ধরে ক্রেতাদের চাহিদা অনুযায়ী দেবদেবীর মূর্তি, পুতুল, ঘর সাজানোর জিনিস, বাসনপত্র, এমনকি টেরাকোটার গয়নাও বানানো হচ্ছে। এখানকার শিল্পীরা অর্ডার অনুযায়ী বিভিন্ন বাড়িতেও টেরাকোটার দেওয়াল সজ্জার কাজ করেন।
পাঁচমুড়ার টেরাকোটা পেয়েছে জিআই ট্যাগ। এই গ্রামের প্রায় ৭৫টি পরিবার আজও বাংলার মৃৎশিল্পকে বাঁচিয়ে রেখেছে। পাঁচমুড়ার কুম্ভকাররা অন্যদের প্রশিক্ষণও দেন। প্রতিবছর নভেম্বর মাসে গ্রামে একটি টেরাকোটা উৎসবের আয়োজন হয়। যেখানে শিল্পীদের হাতের কাজ দেখার সুযোগ হয়। থাকে কর্মশালাও।
নারী পুরুষ একযোগে কাজ করে নরম মাটি থেকে হাতের চাপে বা ছাঁচের মাধ্যমে বিভিন্ন শিল্পসামগ্রি তৈরি করেন। এরপর শিল্পদ্রব্যের উপর সূক্ষ্ম ও নিখুঁত কারুকার্য করা হয়। সবশেষে সেগুলিকে আগুনে পুড়িয়ে শক্ত করলে কারুকার্যগুলি সুস্পষ্ট হয়। এই গঠনশৈলীই হল টেরাকোটার অদ্বিতীয় বৈশিষ্ট্য। অনেকসময় এই কাজে প্রাকৃতিক রংও ব্যবহার করা হয়।

রাজ্য সরকারি পুরস্কারপ্রাপ্ত শিল্পী ব্রজনাথ কুম্ভকার জানান, আগে প্রায় ৩০০ থেকে ৪০০ জন কারিগর এই টেরাকোটা শিল্পের সাথে যুক্ত ছিলেন। কিন্তু কয়েকটি মেলা বা প্রদর্শনী করে তেমন আয় হয়না। এমনকি সরকারি সহায়তাও সেভাবে পাওয়া যায়না। তাই বর্তমানে অনেকেই অন্য পেশা বেছে নিয়েছেন। তবে কি একদিন হারিয়েই যাবে বাংলার এই সুপ্রাচীন মৃৎশিল্প? আশঙ্কা থেকেই যায়।













