বাংলার একমাত্র মুখোশ গ্রাম, এখানে মুখোশের আড়ালে লুকিয়ে থাকে অন্য গল্প
দেশজুড়ে যতরকমের শিল্প রয়েছে তারমধ্যে হস্তশিল্প সবসময়েই মানুষকে আলাদা করে টানে। প্রযুক্তি যতই উন্নত হোক না কেন মানুষের হাতের কাজের কোনও বিকল্প হয়না।
মৌসুমি গুহ মান্না, পুরুলিয়া : ছোট্ট একটা গ্রাম। যেখানে প্রতিটি ঘরেই চারদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকে রং, তুলি, কাগজ, মাটি, কাপড়ের মত বিভিন্ন উপকরণ। গ্রামের প্রতিটি ঘরেই বিভিন্ন বয়সের মানুষ রংয়ের ছোঁয়ায় জন্ম দেন নানা চেহারার মুখোশের। গ্রামে একটি সংগ্রহশালাও রয়েছে। যেখানে গেলে জানা যাবে মুখোশের ইতিহাস।
গ্রামের বাসিন্দারা প্রকৃতপক্ষে স্বভাবশিল্পী। জন্ম থেকেই এঁরা শিল্পের কাজ দেখে বড় হয়েছেন। সময়ের সাথে নিজেরাও হাতে তুলে নিয়েছেন রং, তুলি। প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে রূপ দিয়ে চলেছেন বিভিন্ন মুখোশের। এটিই পশ্চিমবঙ্গের একমাত্র মুখোশ গ্রাম।
পুরুলিয়ার চড়িদা। সকলের কাছে যে জায়গা ‘মুখোশ গ্রাম’ বলেই পরিচিত। যে গ্রামের ৩৫০টি পরিবারের প্রায় প্রত্যেক সদস্যই মুখোশ শিল্পের সঙ্গে যুক্ত। ১৫০ বছর আগে বাঘমুণ্ডির রাজা মদনমোহন সিংদেও বর্ধমান জেলা থেকে যে সূত্রধর কারিগরদের নিয়ে এসেছিলেন তাঁদের বংশধরেরাই এখনও এই কাজ করেন।
একেবারে গোড়ার দিকে শিল্পীরা শুধু ছৌনাচের জন্যই মুখোশ তৈরি করতেন। ঘর সাজানোর জন্য বা ঠাকুরের মুখের আদলে মুখোশ তখন তৈরি হতনা। কিন্তু শুধু ছৌ শিল্পীদের জন্য কাজ করে তেমন আয় না হওয়ায় তাঁরা নতুন নতুন মুখোশ বানাতে শুরু করেন।
মুখোশ শিল্পী কাবেরী দত্ত জানান, তিনি নিজে হাতে মুখোশ তৈরি করেন। প্রায় ১২ বছর আগে পয়লা বৈশাখের দিন তাঁর শ্বশুরমশাই তাঁদের পারিবারিক দোকানটি শুরু করেছিলেন। বর্তমানে কাবেরীদেবীর ছেলেই এই দোকান চালান। এখানে ৩০ টাকা থেকে ২৫০০ টাকা পর্যন্ত মূল্যের মুখোশ পাওয়া যায়।

মুখোশ তৈরির উপকরণ সাধারণ হলেও বানানোর কাজটি যথেষ্ট পরিশ্রমের এবং সময়সাপেক্ষ। একেকটি মুখোশ বানাতে ৮ থেকে ১০ দিন সময় লাগে। উৎপাদন খরচও ভালই হয়। কিন্তু সেই অনুপাতে দাম পাওয়া যায়না। তবে যুগের সাথে তাল মিলিয়ে মুখোশের দাম মেটাতে অনলাইন পেমেন্ট বা বিদেশে মুখোশ পাঠানোর ব্যবস্থাও চালু রয়েছে।
যুগ বদলালেও মুখোশ বিক্রির তেমন বাড়বাড়ন্ত নেই। এখানকার শিল্পীরা বছরের একটি নির্দিষ্ট সময়ে রাজ্যের কয়েকটি মেলায় অংশ নিলেও সেভাবে লাভের মুখ দেখতে পান না। তাই নতুন প্রজন্মের অনেকেই বিকল্প পেশা বেছে নিচ্ছেন। সরকারি সহায়তা না পেলে হয়তো একসময় এই মুখোশ শিল্প হারিয়েই যাবে।













