Entertainment

চোখের জলে গান স্যালুটে পঞ্চভূতে বিলীন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়

কেওড়াতলা মহাশ্মশানে শেষকৃত্য সম্পন্ন হল কিংবদন্তী অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের। রাজ্যসরকারের তরফে দেওয়া হল গান স্যালুট। প্রিয় নায়ককে চোখের জলে চিরবিদায় জানালেন সকলে।

কলকাতা : শুক্রবার থেকেই চিকিৎসায় সাড়া দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছিলেন তিনি। শনিবার তা আরও খারাপ হয়। চিকিৎসকেরা রাতেই পরিবারের সকলকে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করেন।

চিকিৎসকেরা হাল ছেড়েই দিয়েছিলেন। রবিবার পরিবারের সকলে সকালেই হাসপাতালে হাজির হয়ে যান। অবশেষে সব উৎকণ্ঠা কাটিয়ে চিকিৎসকেরা জানান দুপুর সওয়া ১২টায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়।


পড়ুন আকর্ষণীয় খবর, ডাউনলোড নীলকণ্ঠ.in অ্যাপ

সৌমিত্রবাবাবুর মৃত্যুর খবর পেয়ে হাজির হন মুখ্যমন্ত্রী। সৌমিত্রবাবুর মেয়ে পৌলমী বসুর সঙ্গে কথা বলেন। পরে জানানো হয় সৌমিত্রবাবুর মরদেহ কোথায় কখন নিয়ে যাওয়া হবে।

বেলভিউ থেকে দুপুরে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের দেহ বার করে আনার পর তা কাচের গাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয় তাঁর গলফগ্রিনের বাসভবনে। সেখানে কিছুটা সময় রাখার পর তাঁর কর্মস্থান টেকনিশিয়ানস স্টুডিওতে নিয়ে যাওয়া হয় দেহ। সেখানেও চলচ্চিত্র জগতের অনেকে শেষ শ্রদ্ধা জানান।

Soumitra Chatterjee
ফাইল : সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, ছবি – আইএএনএস

তারপর সেখান থেকে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের দেহ বিকেলে নিয়ে যাওয়া হয় রবীন্দ্র সদনে। সেখানে তাঁর দেহ সকলের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য শায়িত রাখা হয়। চলচ্চিত্র জগত তো বটেই, তাছাড়াও বিভিন্ন জগতের মানুষ থেকে সাধারণ মানুষ শেষ বারের জন্য দেখে যান তাঁদের প্রিয় অভিনেতাকে।

রবীন্দ্র সদন থেকে সন্ধেয় বার করা হয় দেহ। তারপর শেষযাত্রায় সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের দেহ কাচের গাড়িতে শুইয়ে অন্যরা পায়ে হেঁটে রওনা দেন কেওড়াতলা মহাশ্মশানের উদ্দেশে।

শেষযাত্রায় পা মেলান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু সহ অনেক নেতা মন্ত্রী। সঙ্গে পা মেলান দেব, রাজ চক্রবর্তী সহ চলচ্চিত্র জগতের অনেকে।

সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের শেষযাত্রায় এই করোনা পরিস্থিতিতেও বহু মানুষও হাজির হন। তাঁদের অনেকের হাতে ছিল সৌমিত্রবাবুর বিভিন্ন বয়সের ছবি। গলায় ছিল গান। চলছিল কবিতা পাঠ।

কৌশিক সেন সৌমিত্রবাবুর লেখা কবিতাগুলি পাঠ করছিলেন। রবীন্দ্র সঙ্গীতের সুরে সুরে শেষ যাত্রা এগিয়ে চলে। চারিদিকে বাড়িতে বাড়িতে তখন দীপাবলির রোশনাই। তারমধ্যেই যেন রাজপথ জুড়ে ছিল বিষাদের সুর।

যাত্রাপথে যত বাড়ি রয়েছে তার প্রতিটি বারান্দা, ছাদ, জানালা ছিল কানায় কানায় ভর্তি। অনেকে রাস্তায় বাতি নিয়ে দাঁড়িয়ে শেষ বিদায় জানান তাঁদের অন্যতম প্রিয় নায়ককে।

কেওড়াতলা মহাশ্মশানে সন্ধে সাড়ে ৬টা নাগাদ পৌঁছয় শেষযাত্রা। সেখানে সৌমিত্রবাবুর দেহ শায়িত রেখে ব্যবস্থা হয় তাঁকে রাজ্যসরকারের তরফে গান স্যালুট জানানোর। এই গান স্যালুটেই চিরবিদায় জানানো হয় সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়কে।

অনেকের চোখেই তখন জল। সেই চোখের জলেই চিরবিদায় জানানো হল বাংলা চলচ্চিত্র সহ বাংলা সংস্কৃতির এক বলিষ্ঠ স্তম্ভ সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়কে। পঞ্চভূতে বিলীন হয়ে গেল একটা যুগ, একটা ইতিহাস।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *