এ মন্দিরে বালিকা জ্ঞানে পুজো পান মা কালী, মন্দির চত্বরে হেঁটে বেড়ান বলেই বিশ্বাস
এ মন্দির কলকাতার প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত। এখানে প্রতিদিন ভক্তের ঢল নামে। মন্দিরে মা পূজিতা হন বালিকা রূপে। এর পিছনে রয়েছে এক কাহিনি।
মৌসুমি গুহ মান্না, কলকাতা : বাংলার বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে রয়েছে অসংখ্য মন্দির। সেসব মন্দির নিয়ে জনশ্রুতিও কিছু কম নেই। এরই মধ্যে একটি মন্দিরের কাহিনি শুনলে অনেকেই অবাক হয়ে যান। কথিত আছে, এখানে মা কালী জীবন্ত। তাই অনেকে মায়ের এই মূর্তিকে জীবন্ত কালীও বলে থাকেন। ভক্তদের বিশ্বাস মা মন্দির জুড়ে হেঁটে বেড়ান আর ফিসফিস করে কথা বলেন।
মায়ের মহিমার কারণে কলকাতা সহ রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত এমনকি দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকেও মানুষ এখানে ছুটে আসেন। কলকাতার বিভিন্ন প্রান্ত এবং শহরতলী থেকে এখানে প্রতিদিন ভক্তদের ঢল নামে। আবার সুদূর অসম থেকেও সপরিবারে মানুষ ছুটে আসেন মায়ের দর্শনের আশায়।
উত্তর কলকাতাতেই রয়েছে মা শ্যামসুন্দরীর এই মন্দিরটি। মন্দিরের সেবায়েত জানান, মায়ের অলৌকিক মাহাত্ম্যকে ঘিরে একটি কাহিনি রয়েছে। মহালয়ার দিন মন্দিরের পুরোহিত দেবীর পুজোর জন্য বাজার করতে গিয়ে দেখেন বছর ৫ বয়সের একটি ছোট্ট মেয়ে মা কালীর মত সেজে চাল, কলা ভিক্ষা চাইছে। ক্ষুধার্ত মেয়েটি পুরোহিতের কাছেও ভিক্ষা চায়।
মেয়েটিকে ভিক্ষা দেওয়ার বদলে পুরোহিত তাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেন। পরামর্শ দেন ভিক্ষা না করে কাজ করে খেতে। এরপর মেয়েটি চলে যায় এবং পুরোহিতও পুজোর বাজার সেরে মন্দিরে ফিরে যান। মন্দিরের নিয়ম অনুযায়ী একমাত্র দীপান্বিতা অমাবস্যা ছাড়া বাকি অমাবস্যায় এখানে অন্ধকারে পুজো করা হয়। শুধুমাত্র ঘিয়ের প্রদীপ জ্বেলে মায়ের পুজো হয়।
মহালয়ার সেই রাতেও অন্ধকারেই দেবীর পুজো শুরু হয়েছিল। কিন্তু পুজো চলাকালীন পুরোহিতের মন যেন হঠাৎ বলে মহাদেবের ওপর মা নেই। পুরোহিত প্রথমে ভেবেছিলেন মায়ের রং কালো বলে হয়ত অন্ধকারে দেখা যাচ্ছেনা। এরপর পুরোহিত ঘিয়ের প্রদীপ নিয়ে সামনে গিয়ে দেখেন মা সত্যিই সেখানে নেই। কেবল শায়িত রয়েছেন মহাদেব।
এই অস্বাভাবিক ব্যাপার দেখে পুরোহিত ভয়ে পিছিয়ে আসেন। সেই সময় তাঁর মনে হয় কেউ যেন ছম ছম আওয়াজ করে পিছনে হেঁটে আসছেন। একটি ডান পা যেন ধপ করে মহাদেবের বুকের ওপর পড়ে। অন্ধকারের মধ্যেই দেবীর জায়গায় বাজারে দেখা সেই বালিকার মুখ ভেসে ওঠে। দেবী মানুষের কণ্ঠে চাল কলা খেতে চান এবং বলেন তিনি শুধু ধনীর মা নন, তিনি গরিবেরও মা। একমুঠো আতপ চাল ও একটি পাকা কলা দিয়ে পুজো পেলেই এখানে দেবী সন্তুষ্ট হন।
দেবী এখানে শিশুকন্যা রূপে পূজিতা হন। তাই এখানে অম্বুবাচি পালিত হয়না। দেবীকে আমিষ ভোগও দেওয়া হয়না। ভক্তদের বিশ্বাস শ্যামসুন্দরী মাকে ভক্তি ভরে পুজো দিলে মনোবাঞ্ছা পূরণ হয়। দেবীর স্বপ্নাদেশের কারণে এই মন্দির থেকে প্রসাদ না দিয়ে কোনও ভক্তকে ফেরানো হয়না।

