২৫ বৈশাখের সকাল মানেই বাঙালি জীবনে এক অন্য ছোঁয়া। ঘুম ভাঙা চোখে সকালের প্রথম রবিকিরণটা এসে আছড়ে পড়লেই কোন সে মহাশূন্য থেকে ভেসে আসে এক অমোঘ সুর। সে সুর বাঙালির একান্ত আপনার। সে শব্দ অমৃত সমান। আপামর বাঙালির ভাবনার সবটুকু, আবেশের রেশটুকু আর অনুভূতির স্পর্শটুকু যেন এক মায়াবী মন্ত্রে মানুষের মনের কোণা থেকে চুরি করে নিয়ে গেছে এক ঈশ্বরের বরপুত্র। ক্ষুরধার লেখনিকে কলমের খোঁচা বলে জানি। কিন্তু হা ঈশ্বর এ কোন নক্ষত্র যে মানুষের একান্ত ব্যক্তিগত অব্যক্ত মুহুর্তগুলোকে নিজ মনে ধারণ করে তা লেখনি দিয়ে অবলীলায় ফাঁস করে দেন। সে কলমের শক্তি কী কোনও মাপকাঠিতে ওজন করা সম্ভব! অবাক হয়ে মানুষ ভাবে এ কথা তুমি কেমন করে জানলে হে গুনি! তোমায় কে বলে দিল আমার স্বপ্নের কথা? আমার ভালোলাগা। আমার কান্না। সকলের অলক্ষ্যে যে ভালবাসা চিরদিন কোনও এক নারীর অন্তরের গভীরে গোপনেই রয়ে গেল, মুখে এল না, তা তোমার কলম কেমন করে জানল বলতে পারো? আজি হতে শতবর্ষ পরেও বাঙালির অন্যতম গর্বের মানুষটা কোথাও যেন অক্লেশে বলে দিয়ে যাবেন শতবর্ষ পরেও তিনি আছেন। তিনি থাকবেন। যতদিন মানব সভ্যতা বিশ্ব জুড়ে বিরাজ করবে, ততদিন বাঙালি মননের শিকড়টা আঁকড়ে ধরে থাকবেন তিনি। প্রজন্মের পর প্রজন্মকে ঋদ্ধ করে, অবাক করে হে মহাজীবন তোমার এ নিঃশব্দ অঙ্গিকার চিরদিন ঋণ হয়ে থাকবে। যার সুদ বাড়ে ঠিকই, কিন্তু কোনওদিন শোধ হয়না। সেই বাঙালির আপনার রবি ঠাকুরের ১৫৬ তম জন্মবার্ষিকীতে এদিন সকাল থেকই জোড়াসাঁকো ছিল রবিময়। ভোর থেকেই বাঙালি ভিড় জমিয়েছিলেন বাংলা সংস্কৃতির প্রণম্য ভূমিতে। বাঙালির ভাবনার গর্ভগৃহে। বৈশাখী সকালে ভানুর সিংহবিক্রম উপেক্ষা করেই এদিন বঙ্গবাসী নাচে, গানে মেতে উঠেছিলেন এই রক্ত মাংসের ঈশ্বরের জন্মদিবসের উৎসবে। শুধু জোড়াসাঁকো নয়, রাজ্যের অলি, গলি, ক্লাব, পাড়া সর্বত্রই রবিস্মরণ পালিত হয়েছে নিজের মত করে। যে মাটি এমন এক সন্তানের জন্ম দিয়েছে তাকে শতকোটি প্রণাম। হে রবি তোমার জন্মবার্ষিকীতে বাংলায় আজ খুশির বাঁধন বাধ ভেঙেছে। কত আনন্দ, কত উৎসব। এসবই তো তোমার জন্য। তোমাকে স্মরণ করে তোমাকে উপহার। আজ প্রভাতে তোমার সুরে কেন জানিনা চোখের কোণা ভরে উঠল জলে। আনন্দে ভারি হয়ে এল চোখের পাতা। তারপর সেটাই নিজের অজান্তে গড়িয়ে পড়ল গাল বেয়ে। হে মৃত্যুঞ্জয়, আজি এ শুভক্ষণে এই চোখের জলটুকুই না হয় তোমায় দিলাম উপহার!