National

প্রবল বিরোধিতা, হিংসার মধ্যেই মুক্ত পদ্মাবত, কি নিয়ে বিতর্ক? সিনেমা দেখার পর প্রশ্ন দর্শকদের

সব জল্পনার অবসান। অবশেষে মুক্তি পেল ভারতীয় সিনেমার ঐতিহাসিক বিতর্কের সাক্ষী পদ্মাবত। কিন্তু এদিন সিনেমা দেখে বার হওয়ার পর অধিকাংশ দর্শক ভয়ংকর বিভ্রান্ত। তাঁরা কিছুতেই উদ্ধার করতে পারছেন না এত বিতর্ক, এত হাঙ্গামা কিসের জন্য? কি এমন দেখানো হল এই সিনেমায়, যে তা কোনও ইতিহাস বিকৃতির আওতায় পড়ে? অন্তত এদিন রাজ্যের বিভিন্ন হল থেকে পদ্মাবত দেখে বার হওয়া দর্শকদের প্রতিক্রিয়া থেকে তেমনই উঠে এসেছে।

যদিও মুক্তি মিললেও বিতর্ক ও প্রতিরোধ পিছু ছাড়েনি পদ্মাবতের। গোয়া, রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ ও গুজরাটের মাল্টিপ্লেক্সগুলিতে পদ্মাবত প্রদর্শন বন্ধ রয়েছে। যা সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের অবমাননা বলে দাবি করে ইতিমধ্যেই আদালতের দ্বারস্থ সমাজকর্মী তেহসিন পুনাওয়ালা। অন্যদিকে করণী সেনার তাণ্ডব, স্কুল বাসে ভাঙচুর নিয়েও আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন তিনি।

বৃহস্পতিবার পদ্মাবত মুক্তির আগে বুধবার সকাল থেকেই উত্তাল ছিল গোবলয়ের বিভিন্ন এলাকা। গুরুগ্রামের একটি স্কুল বাসে পাথর বৃষ্টি করা হয়। স্কুল বাসের মধ্যে তখন আতঙ্কে চিৎকার করতে থাকে শিশুরা। সেই দৃশ্য ইতিমধ্যেই ছড়িয়ে পড়েছে ইন্টারনেটে। ফলে শিশুদের বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই স্কুলে পাঠাতে ভয় পেয়েছেন অভিভাবকরা। বৃহস্পতিবার ছবি মুক্তি পেলে কী পরিস্থিতি তৈরি হয়, সেসব সাত পাঁচ ভেবে দিল্লি ও হরিয়ানার অনেক স্কুলেই ছুটি ঘোষণা করে দেওয়া হয়। যেসব স্কুল খোলা ছিল সেখানে হাজিরার সংখ্যা ছিল কম। তারপরও যেসব বাচ্চা স্কুলে এসেছে তাদের স্কুল বাসে বা পুল কারে পাঠাতে ভয় পেয়েছেন অভিভাবকরা। নিজেরা তাদের স্কুলে নিয়ে এসেছেন। আবার দাঁড়িয়ে থেকে স্কুল থেকে ফিরিয়েও নিয়ে গেছেন।

পদ্মাবত মুক্তি পেলে তাঁরা জহরব্রত পালন করবেন বলে আগেই হুমকি দিয়েছিলেন রাজপুত নারীদের একাংশ। তাঁরা এদিন জহরব্রত পালন করতে চেয়ে অনুমতির আবেদন জানান রাষ্ট্রপতির কাছে।

করণী সেনা সহ বেশ কিছু রাজপুত সংগঠন হুঁশিয়ারি দিয়েছিল পদ্মাবত মুক্তি পেলে তাণ্ডব হবে। এদিন বেশ কিছু জায়গায় তা হয়েছেও। খোলা তরোয়াল হাতে আতঙ্কের পরিবেশ তৈরির চেষ্টা হয়েছে বিহারের মুজফ্ফরপুরে। রাস্তায় টায়ার জ্বালিয়ে প্রতিবাদে সামিল হন বিক্ষোভকারীরা। বারাণসীতে ১ ব্যক্তি গায়ে আগুন দিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করলে তাঁকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এদিকে দিল্লি-জয়পুর রোড এদিন অবরোধ করেন করণী সেনার সদস্যরা। চিতোরগড় দুর্গে প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে আগেই। এদিনও অনেক পর্যটক চিতোরগড়ের সামনে গিয়েও ভিতরে না ঢুকতে পারার জন্য আক্ষেপ করেন।

বিক্ষোভে আঁচ লেগেছে রাজস্থান, হরিয়ানা, উত্তরপ্রদেশ, গুজরাটেও। কয়েকটি জায়গায় পরিচালক সঞ্জয় লীলা বনশালি ও দীপিকা পাড়ুকোনের কুশপুতুল দাহ করা হয়। রাস্তায় আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন থেকে শুরু করে বিভিন্ন জায়গায় ট্রেন অবরোধ, গাড়িতে আগুন, বাস ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। দেশের অন্যান্য প্রান্তে পদ্মাবত মুক্তি পেলেও মাল্টিপ্লেক্স বা সিনেমা হলে পুলিশি নিরাপত্তা ছিল চোখে পড়ার মতন। এমনকি দর্শকাসনের পাশেও বিভিন্ন কোণায় পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছিল।

কলকাতা সহ গোটা রাজ্যেও এদিন মুক্তি পেয়েছে পদ্মাবত। শহরের মাল্টিপ্লেক্স থেকে বিভিন্ন সিনেমা হল। সর্বত্রই সকাল থেকে নজরে পড়েছে পুলিশি তৎপরতা। সিনেমা হলে কোনও গণ্ডগোল পাকানোর চেষ্টা যে বরদাস্ত করা হবে না তা আগেই পরিস্কার করে দিয়েছিল রাজ্য পুলিশ। তবে এ রাজ্যে এদিন পদ্মাবত প্রদর্শন নিয়ে কোনও সমস্যা হয়নি।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *