Kolkata

আগুনে দাম সবজির, দেখা যায়, কেনা যায় না

Published by
News Desk

রবিবার। বাতাসে হেমন্তের পরশ। ছুটির সকালে পরিমলবাবু লুচি, আলুর তরকারি আর চা সহযোগে জমিয়ে প্রাতরাশ সেরে বাজারের থলিটা ভাঁজ করে বগলে পাচার করলেন। তারপর চটিতে পা গলাতে গলাতে গিন্নিকে জিজ্ঞেস করলেন, হ্যাঁ গো শুনছো, বাজারের কি আনতে হবে? রান্নাঘর থেকে গিন্নির উত্তর ভেসে এল, আগের সপ্তাহে তো তেমন কিছু আনোনি। রান্নার আনাজপাতি তেমন কিছু নেই। যা আনাজপত্তর পাবে এনো। নইলে সারা সপ্তাহটা রাঁধবো কি?

রবিবার করে সপ্তাহের বাজার করা পরিমলবাবুর পুরনো অভ্যাস। বাজারের ফাঁকে এর তার সঙ্গে একটু আড্ডা। পাড়ার মোড়ে বুধোর চায়ের দোকানে এক ভাঁড় চা খেয়ে দুলকি চালে বেলা করেই বাজার নিয়ে ফেরেন পরিমলবাবু। দুহাতে থাকে দু’ব্যাগ ভর্তি কাঁচা বাজার, মাছ, মাংস সবই। গত সপ্তাহে পারিবারিক অনুষ্ঠানে বাইরে থাকায় বাজার যাওয়া হয়নি। পাড়ার দোকান থেকে চালানোর মত সামান্য কিছু বাজার, মাছ কিনে নিয়েছিলেন। ফলে এদিন বেশ জমিয়ে বাজার করার একটা পরিকল্পনা সাজিয়ে বাজারের দিকে হাঁটা লাগালেন ভোজনরসিক পরিমল সান্যাল।

নভেম্বরের মাঝামাঝি। বাজার শীতের আনাজের দখলে যাওয়ার কথা। অনেক দিন পর জমিয়ে শীতের আনাজ খাওয়ার একটা পরিকল্পনা মনের মধ্যে কিলবিল করছিল। বাজারে ঢুকে লাল গাজর, বিনস, ফুলকপি সবই নজরে পড়ল পরিমলবাবুর। অনেক দোকানই চেনা। একটার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেই ঝুড়ি টেনে গাজর বাছা শুরু করলেন পরিমলবাবু। কম করে হলেও হাফ কেজি তো নেনই। সেইমত ঝুড়িটা লাল গাজরে ভরে ওজনের জন্য এগিয়ে দিতে দিতে জিজ্ঞেস করেন গাজর কতয়ে দিচ্ছ শুনি? ৮০ টাকা কেজি। উত্তরটা শুনে চমকে উঠলেন পরিমলবাবু। নভেম্বরের মাঝে দাঁড়িয়ে লাল গাজরের এমন দাম তিনি আগে শুনেছেন কি? নাহ, মনে পড়ল না। ঝুড়িটা টেনে নিয়ে বেশ কিছু গাজর নামিয়ে রেখে বললেন, নাও, আজ আড়াইশোই দাও। বাজারওয়ালা মুচকি হেসে বলল, দাদা সবের দামই চড়া। পাইকারিতে আমরাই দাম শুনে চমকে যাচ্ছি।

এঁর দোকানে মোটামুটি সব আনাজই থাকে। ফলে নিজেই স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে দাম শোনাতে শুরু করলেন দোকানি। পটল ৮০ টাকা কেজি, টম্যাটো ৮০ টাকা কেজি, উচ্ছে ৮০ টাকা কেজি, ঢেঁড়স ৭০ টাকা কেজি, বিনস ৮০ টাকা কেজি, ক্যাপসিকাম ১২০ টাকা কেজি, ফুলকপি পিস ৩০ টাকা, পেঁপে ২০ টাকা কেজি, কাঁচালঙ্কা ১০০ টাকা কেজি, বেগুন ৫০ টাকা কেজি। এখানেই থামালেন পরিমলবাবু। আর শোনার মত মনের জোর তাঁর নেই। মধ্যবিত্ত বাজেটে চলা বাঙালির জন্য এটাই হজম করা কষ্টসাধ্য। কিন্তু বাড়িতে কিছু তো লাগবেই। অগত্যা কিনলেন বটে, তবে তা ওজনে নামমাত্র। ২টো থলি কেন এনেছিলেন তা ভেবে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে একটা থলির অর্ধেক ভরে আলু, পেঁয়াজের দোকানে হাজির হলেন পরিমলবাবু।

এতক্ষণে বাজারের ছেঁকায় হাত পুড়েছে তাঁর। সেইসঙ্গে দাম শোনার সহ্যশক্তিও অনেকটা অর্জন করে ফেলেছেন। বাজার যে চড়ছিল তা তিনি গত ১৫ দিন আগে এসে বুঝতে পারেননি এমন নয়। তাই টম্যাটো বা ক্যাপসির দাম তাঁকে অবাক করেনি। কিন্তু সব আনাজেরই এমন দশা যেন ছাপোষা পরিমল সান্যালকে একটু বেশিই ধাক্কা দিল। আনাজ তো আনাজ, এমনকি নটে শাকের বান্ডিলটা পর্যন্ত ১২ টাকা বলে শেষ পর্যন্ত ১০ টাকায় দিল শাকওয়ালা। নাঃ, ধনেপাতা কেনার সাহস তিনি আর দেখাননি। ধনেপাতার ২টো ডান্ডির দাম ৫ টাকা শুনে আর কথা বাড়াননি। মাছ, মাংস কিনে বাড়িমুখো হলেন মানিকতলা বাজারে বাজার করা পরিমল সান্যাল। একটু তাড়াতাড়িই বাড়ি ফিরলেন। তারপর বাজারের থলিটা রেখে স্ত্রীকে রান্নাঘরে গিয়ে বলে এলেন, আনাজ খুব সাবধানে হিসেব করে খরচ কোরো। আর হ্যাঁ, পেঁয়াজটাও। পেঁয়াজ ৫০ টাকা কেজি। দোকানদার বলল আরও নাকি বাড়বে!

Share
Published by
News Desk
Tags: Kolkata News

Recent Posts