Kolkata

পারিবারিক দুর্গাপুজোয় কী এবার ইতি, বাড়ি ছেড়ে হতাশায় নন্দী পরিবার

বউবাজারের ট্রাম লাইনের ওপরই বাস নন্দী পরিবারের। বহু বছর ধরেই বাপ-ঠাকুরদার ৩ তলা বাড়িটিতে তাঁদের নিশ্চিন্ত বসবাস। বাড়িতে প্রতিষ্ঠিত শালগ্রাম শিলা রয়েছে। নিত্য পুজো হয়। নিয়ম করে। নিখুঁত নিয়মে পুজো এ বাড়ির রীতি। এ বাড়িতে দুর্গাপুজোও হয়ে আসছে বহুদিন। পারিবারিক পুজোকে কেন্দ্র করে বাড়ি দুর্গাপুজোর আগে থেকেই আত্মীয় পরিজনে মেতে ওঠেন। সেই নন্দী পরিবারের বাড়িতেও একটি ফাটল ধরেছে। গত মঙ্গলবার বিকেলে তাঁদের ওই বাড়ি ফাঁকা করে দিতে বলা হয়। বিকেলে ঘরে ঘরে তালা মেরে তাঁরা বেরিয়ে পড়েন ভিটে ছেড়ে। তাঁদের স্থান হয়েছে চাঁদনির কাছে একটি হোটেলে। গোটা পরিবার সেখানেই। বাড়ির কর্তা সত্তরোর্ধ মানুষটি এভাবে ভিটে ছেড়ে চলে আসতে হওয়াটা মেনে নিতে পারছেন না মন থেকে। যেমন হয়েছে এলাকার অন্য বাসিন্দাদের সঙ্গেও।

নন্দী পরিবারের এই বিশাল বাড়ির বয়স প্রায় ২০০ বছর। বাড়িটি দেখলেই বোঝা যায় ব্রিটিশ স্থাপত্যের ছোঁয়া স্পষ্ট। গোল বারান্দার বাড়ি এ শহরের বুকে এখন দূরবীন দিয়ে খুঁজতে হয়। আসলে বউবাজার এলাকাটিই কলকাতার ইতিহাসের সঙ্গে যুক্ত। প্রতিটি বাড়ি যেন ইতিহাসের এক একটি পাতা। অনেক পরিবারেরই বনেদিয়ানা নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখে না। এখানে যাঁদের বাড়ি ভেঙে পড়েছে তাঁদের অনেককেই নন্দী পরিবার ভাল করে চেনে। আত্মীয়সম বলা যেতে পারে। ফলে মনের কোণায় একটা আতঙ্ক কাজ করেই চলেছে। তাঁদের বাড়িটিরও এমন দশা হবে না তো? এমন নানা চিন্তায় হোটেলের ঘরে দু চোখের পাতা এক হতে চাইছে না সকলের। বাড়িতে অনেক জিনিসপত্র রয়েছে। সেগুলির বয়সও নেহাত কম নয়। ফলে আভিজাত্যের পাশাপাশি সেগুলির দামও অপরিসীম। বাড়ির অনেককিছু ব্যবহার্য জিনিস রয়েছে। বাড়ির নিচে সুরক্ষাকর্মী মোতায়েন থাকলেও একটা চিন্তা সেসব নিয়েও রয়েছে।


পড়ুন আকর্ষণীয় খবর, ডাউনলোড নীলকণ্ঠ.in অ্যাপ

বাড়িতে শালগ্রাম শিলা রয়েছে। তাঁর নিত্য পুজোর জন্য আবেদন জানিয়ে অবশ্য কাজ হয়েছে। তাঁদের একটিবারের জন্য ঠাকুরমশাইকে নিয়ে বাড়িতে ঢুকতে দিচ্ছে পুলিশ। তবে পুজো সেরেই বেরিয়ে আসতে হচ্ছে। অন্য অনেক পরিবারের সেই সুযোগটুকুও নেই। সেদিক থেকে তাঁরা কিছুটা হলেও ভাগ্যবান। তবে সামনেই দুর্গাপুজো হওয়ায় সেই চিন্তাও কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে নন্দী পরিবারকে। এবার কী তবে পুজো বন্ধ করতে হবে? তেমন আশঙ্কা তো রয়েছেই। আর তা আঁচ করতে পেরে মন ভাল নেই গোটা পরিবারের। হোটেলে থেকে প্রতিদিন একবার করে বাড়ির সামনে ঘুরে আসা হয়েছে কাজ। চোখের দেখা। ও টুকুই শান্তি। মন পড়ে আছে বাড়ির আনাচে কানাচে। কবে সেখানে ফিরবেন? জানেন না তাঁরা। যেমন জানে না বউবাজারের অনেক পরিবারই।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *