Health

ব্যাধিবিনাশ ও আরোগ্য লাভের মহৌষধ

চরকসংহিতায় এর উল্লেখ পাওয়া যায়। অসুখে নয়, সুখে থাকার সহজ উপায়, রোগ হলে তখন প্রতিকার করার থেকে যাতে রোগ হতে না পারে, তার চেষ্টা করা উচিৎ।

বসন্তকালে খয়েরি লালচে কচি নিম (Azadirachta) পাতা খাওয়ার রেওয়াজ প্রাচীনকাল থেকে আজ অবধি সমানে চলে আসছে। চরকসংহিতায়, শিশুর জন্মমুহুর্তেই নিমপাতা ব্যবহারের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

প্রসবগৃহের বাতাস শুদ্ধ রাখতে, সদ্যোজাত শিশুকে বিভিন্ন জীবাণুর সংক্রমণ থেকে রক্ষা করতে। ধাই মার দেহ, কাপড় জীবাণুমুক্ত রাখতে।


পড়ুন আকর্ষণীয় খবর, ডাউনলোড নীলকণ্ঠ.in অ্যাপ

আবার শবদাহ করার পর শ্মশান থেকে শবযাত্রীরা ফিরে এলে বাড়িতে প্রবেশ করার আগে আগুনে হাত সেঁকে, নিমপাতা দাঁতে কেটে তবে বাড়িতে প্রবেশ করতে হয়। এ প্রথা চলে আসছে আচার-বিধি অনুসারে।

বৈদিক সূত্রের একটি উপদেশ, নিম অশুভ দূর করে। আয়ুর্বেদ শাস্ত্রে কথিত আছে, নিম এক প্রধান ভেষজ এবং এর সর্বরোগহর ক্ষমতা আছে।

নিমের হাওয়া বহু রোগের প্রতিষেধক। বিশেষত বাড়ির দক্ষিণদিকে নিমগাছ থাকা ভাল। এতে বাড়ির লোকের স্বাস্থ্য ভাল থাকে।

বিশেষ করে বসন্তকালে আমাদের শরীরে প্রকৃতির নিয়মে রসাধিক্য বেশি ঘটে, আর অন্য সব ঋতুতে রসাধিক্য কম ঘটে, ফলে অনেক সময় এই সমস্ত রসবহ স্ত্রোতের পথ অবরুদ্ধ হয়ে বহু রোগের সৃষ্টি হয়।

এইসব ক্ষেত্রে প্রতিষেধক ও প্রতিরোধক দ্রব্য হল নিম। নিমের পাতা বসন্তরোগীর বিছানায় ছড়িয়ে দিলে রোগের যাতনা শীঘ্রই কমে আসে। তাই বসন্তে নিমের এত প্রয়োজন।

নিমের বিভিন্ন অংশ যেমন ফুল, বীজ, পাতা, ছাল ও কাঠ বিভিন্ন অনুপান সহযোগে সেবনে অজীর্ণ, জন্ডিস, লিভারের ব্যথায়, ব্লাড সুগারে, রাতকানা, ফোঁড়ায়, বমি, চোখ ঝাপসায়, শুকনো কাশিতে, রক্তদৃষ্টি, ঘুষঘুষে জ্বর, ক্রিমি, অরুচি, মুখে বা মাড়িতে ঘা, মাথাধরা, সর্দি-গর্মি, ম্যালেরিয়া, কুষ্ঠ, জন্ম নিরোধক, হাঁপানি, কোষ্ঠবদ্ধতা, অর্শ, পিত্তধিক্য, জননেন্দ্রিয়র দুর্বলতা, স্মৃতিশক্তির দুর্বলতা ও চুলের অকালপক্বতা রোধে কাজে আসে।

যেমন ব্লাড সুগারে দশটি নিমপাতা ও পাঁচটি গোলমরিচ সকালে খালি পেটে চিবিয়ে খেতে হয়। তবে এর সঙ্গে আহারের বিধিও মেনে চলতে হবে।

অসুখে নয়, সুখে থাকার সহজ উপায়, সব ঋতুতেই নিমপাতা খাওয়া ভাল। শাস্ত্রমতে বিশ্বাস, ভক্তি, নিয়ম না মানলে শান্তি হয় না। বার, তিথি, পর্বতিথি না মেনে খাদ্য খেলে রোগমাল্য তৈরি হয়।

সেজন্য রোগ হলে তখন প্রতিকার করার থেকে যাতে রোগ হতে না পারে, তার প্রতিকার সকালে খালি পেটে নিমপাতা খাওয়া। এটা যে কোন মারণ রোগের প্রতিষেধক।

রবিবার, শনিবার, মঙ্গলবার ও ষষ্ঠী তিথিতে নিম ভোজন নিষেধ। যাদের পিত্ত ধাত আছে তারা নিমপাতা অল্পমাত্রায় খাবেন। এমন কি মশা নিধনে মশা ধূপ নয়, ধুনোর সঙ্গে নিমপাতা পোড়ালে বেশি কার্যকরী। মশার দংশন থেকে নিস্তার পাওয়ার স্থায়ী ও ফলপ্রসূ উপায়।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *