World

শুকিয়ে গেল সাড়ে ৫ কোটি বছর পুরনো সাগর, পড়ে রইল শুকনো মরুভূমি

পুকুর, হ্রদ এমনকি নদীর জলও কখনও কখনও শুকিয়ে যায়। কিন্তু আস্ত একটা সাগরের জল পুরো শুকিয়ে গেছে এমনটা কেউ কোনওদিন শুনেছেন কি? সেটাই কিন্তু বাস্তবে ঘটেছে।

ছিল বিশাল এক জলাভূমি, যার পরিচিতিই হয়ে গিয়েছিল সাগর বলে। মাত্র ৫০ বছরে সেই আস্ত সাগরের জল উবে গেছে। এর কারণ জানলে অবাক হয়ে যেতে হয়।

কাজাখস্তান ও উজবেকিস্তানের মধ্যে ৬৮ হাজার বর্গ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে ছিল আরল সাগর। ১৯৬০ সাল অবধিও এটি ছিল বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম হ্রদ।

এর বিশালতার কারণে একে সমুদ্র হিসাবে চিহ্নিত করা হত। হ্রদটির বয়স প্রায় সাড়ে ৫ কোটি বছর। একসময় উত্তর দিক থেকে সির দরিয়া এবং দক্ষিণ দিক থেকে আমু দরিয়া নামে ২টি নদীর জল এসে আরলের জলে মিশত।

গত ১০০ বছরে এই হ্রদের জল শুকিয়ে যেতে থাকে। এর জন্যে মূলত দায়ী করা হয় সোভিয়েত ইউনিয়নকে। ১৯১৮ সালে তারা তুলা শিল্প গড়ে তুলতে হ্রদের পার্শ্ববর্তী জমি ব্যবহার শুরু করে।

চাষের জমিতে জল দেওয়ার জন্য সোভিয়েত প্ৰশাসন সির ও আমু, এই ২ নদী থেকে জল নিতে থাকে। দক্ষ ইঞ্জিনিয়ারদের সাহায্যে সির দরিয়া ও আমু দরিয়ার জল টেনে এনে তুলো চাষের জমিতে সেচের কাজ করা হয়।

Aral Sea
মরুভূমিতে পরিণত হওয়া আরল সাগর, ছবি – সৌজন্যে – উইকিমিডিয়া কমনস

এরফলে আরল সাগরের দিকে বয়ে যাওয়া জলের পরিমাণ আস্তে আস্তে কমে যেতে থাকে। হ্রদটির সঙ্গে কোন সাগরের সংযোগ না থাকায় হ্রদের জল দিন দিন শুকিয়ে যায়।

জলের পরিমাণ কমে গিয়ে হ্রদে লবণের ঘনত্ব মাত্রাতিরিক্তভাবে বেড়ে যায়। জলজ প্রাণিদের ওপরও এর বিরূপ প্রভাব পড়ে। আবহাওয়ায় পরিবর্তন এসে ঝড়বৃষ্টির পরিমাণ বেড়ে যায়। বিভিন্ন গবেষণাগার ও কারখানার বর্জ্য পড়েও এই জল নষ্ট হয়ে যায়।

সোভিয়েত সরকারের সেদিকে ভ্রূক্ষেপ ছিলনা বলেই অভিযোগ। তাই ১৯৬০ সাল নাগাদ আরলের প্রায় ৫০ শতাংশ জল শুকিয়ে গেলে সেখানকার অধিবাসীরাও জীবিকার খোঁজে অন্য প্রদেশে চলে যান।

১৯৯৭-এর মধ্যে ৯০ শতাংশ জল শুকিয়ে যায় আরল সাগরের। এই ঘটনাকে বিংশ শতাব্দীর সবচেয়ে ভয়াবহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ হিসাবে ধরা হয়।

Aral Sea
মরুভূমিতে পরিণত হওয়া আরল সাগর, ছবি – সৌজন্যে – ফ্লিকার – @Arian Zwegers

সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের হাত ধরে নতুন ২ দেশ কাজাখস্তান ও উজবেকিস্তানের জন্ম হয়। এই ২ দেশের প্রশাসন এক হয়ে বিভিন্ন প্রকল্পের সাহায্যে হ্রদটিতে জল ফেরানোর চেষ্টা করে।

কিন্তু দুর্বল ব্যবস্থাপনার জন্য পুরো প্রকল্প বাতিল হয়। এরপর উভয় দেশের মধ্যে বিভিন্ন মতপার্থক্যের কারণে এই নিয়ে আলোচনা আর এগোয়নি। ফলে ২০১০-এর মধ্যে জল সম্পূর্ণ উবে গিয়ে এই সাগরের মত হ্রদ মরুভূমিতে পরিণত হয়।

Show Full Article

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *