৪ হাজার বছর পুরনো শিল্প আজও অম্লান বাংলার গ্রামে, দেশবিদেশেও চাহিদা প্রশ্নাতীত
পিতলের বাসনপত্র সকলেই কমবেশি দেখেছেন। তবে পিতল দিয়ে যে সূক্ষ্ম জালির কাজ হয় তার জন্য আলাদা দক্ষতা প্রয়োজন। সেই কাজ স্বচক্ষে দেখা সম্ভব এই গ্রামে।
মৌসুমি গুহ মান্না, বাঁকুড়া : পশ্চিমবঙ্গের একদম পশ্চিমে যে জেলাগুলি রয়েছে সেগুলি মূলত হস্তশিল্পের জন্য বিখ্যাত। যারমধ্যে একটি হল ডোকরা শিল্প। যা আসলে পিতল বা ব্রোঞ্জের সূক্ষ্ম কাজের নিদর্শন। ডোকরা হল মোম ঢালাই পদ্ধতিতে তৈরি একটি বিশেষ ধরনের শিল্পকর্ম।
ডোকরা শিল্পের ইতিহাস প্রায় ৪ হাজার বছর প্রাচীন। সিন্ধু সভ্যতার মহেঞ্জোদারোয় পাওয়া নর্তকী মূর্তি থেকে এই ধারনা করা হয়। পশ্চিমবঙ্গের পূর্ব বর্ধমানের গুসকরা এবং বাঁকুড়ার বিকনাতে এই শিল্পের প্রসার ঘটেছে। গুসকরায় শুধুই সলিড ডোকরার কাজ হলেও বিকনায় সূক্ষ্ম জালির কাজও হয়। তাই বিকনার কাজের কদর অনেক বেশি।
বাঁকুড়া জেলার বিকনায় ঠিক কবে ডোকরা শিল্পের প্রচলন হয়েছিল তা এখন আর সেখানকার বাসিন্দারা মনে করতে পারেননা। কারও মতে ১৫০ বছর বা তারও আগে বিকনায় ডোকরার কাজ শুরু হয়। তবে এই দীর্ঘসময়ে শিল্পীদের কাজের ধরণ পাল্টেছে।
এক সময় লক্ষ্মীর ভাঁড়, চাল মাপার কুনকে কিংবা ঘর সাজানোর জন্য হাতি, ঘোড়া এবং দেবদেবীর মূর্তি তৈরির মধ্যেই এই শিল্প সীমাবদ্ধ ছিল। কিন্তু ক্রেতাদের চাহিদার কথা মাথায় রেখে বর্তমানে তার পরিধি অনেক বিস্তৃত হয়েছে। শিল্পীদের কাছে ৪০ থেকে ৪৫০০ টাকা অবধি দামের জিনিস পাওয়া যায়।
সাম্প্রতিককালে গয়নার বাক্স, সাবান রাখার পাত্র, অ্যাশট্রে, ঘর সাজানোর জিনিসের পাশাপাশি তৈরি হচ্ছে বিভিন্ন রকমের গয়না। হাতের বালা থেকে শুরু করে কানের দুল, নকশি লকেট, বাহারি হার, খোঁপার কাঁটা, সবকিছুই এখন তৈরি করেন ডোকরা শিল্পীরা।
বিকনা গ্রামে বসবাসকারী প্রায় ৪২টি পরিবারের সকলেই ডোকরা শিল্পের সঙ্গে যুক্ত। পুরুষদের পাশাপাশি মহিলারাও এখন এই শিল্পকর্মে যুক্ত হয়েছেন। পুরুষ শিল্পীরা নকশা তৈরি করেন। সেই নকশায় মাটির প্রলেপ দেওয়া থেকে মেটাল কাস্টিং পর্যন্ত করেন মহিলারা।
সরকারি সহায়তায় শিল্পীদের কিছুটা হলেও উপকার হয়েছে। রাজ্যের বিভিন্ন মেলা এবং প্রদর্শনীতে শিল্পীদের অংশগ্রহণের মাধ্যমে বিক্রির পরিমাণ বেড়েছে। তাছাড়া গ্রামটিকে আলাদাভাবে চিহ্নিতকরণের জন্য সরকার থেকে একটি তোরণও তৈরি করে দেওয়া হয়েছে। যাতে পর্যটকরা সহজেই বিকনার সন্ধান পান।













