State

অবহেলার ঘাস বদলে দিচ্ছে স্থানীয়দের জীবন, রাস্তার ধারে থমকে দাঁড়াচ্ছেন পর্যটকেরা

শস্যশ্যামলা এদেশের সর্বত্র রয়েছে রত্নভান্ডার। প্রতিটি রাজ্যই নিজ নিজ সম্পদে সমৃদ্ধ। বাংলায় আবার অবহেলায় বেড়ে ওঠা ঘাস বদলে দিচ্ছে জীবন জীবিকা।

মৌসুমি গুহ মান্না, ঝাড়গ্রাম : মধু কবি তো সেই কবেই লিখে গেছেন “হে বঙ্গ ভাণ্ডারে তব বিবিধ রতন”। বঙ্গের রত্নভান্ডারই তার হস্তশিল্পকে দিনের পর দিন সমৃদ্ধ করে চলেছে। বিষ্ণুপুরের বালুচরি থেকে শান্তিনিকেতনের কাঁথা, বাটিক শিল্প, সবই রাঢ় বাংলার গর্ব।

কয়েক বছর ধরে পুরুলিয়ার মুখোশ এবং বাঁকুড়ার টেরাকোটা, ডোকরার পাশাপাশি ঘর সাজানোয় নিজের জায়গা করে নিয়েছে সাবাই ঘাস। রাঢ়বঙ্গে প্রাকৃতিকভাবে জন্মানো এই সাধারণ ঘাস দিয়েই তৈরি হচ্ছে অসাধারণ সব জিনিস।

পশ্চিমবঙ্গের অনেক জায়গাতেই সাবাই ঘাস জন্মায়। তবে ঝাড়গ্রামে তার পরিমাণ অনেক বেশি। সুবর্ণরেখার তীরে অবস্থিত গোপীবল্লভপুর, বেলপাহাড়ি আর নয়াগ্রামের অর্থনীতিতে সাবাই ঘাসের অবদান অনস্বীকার্য। কারণ এখন প্রচুর মানুষ প্লাস্টিকের বদলে সাবাই ঘাসের তৈরি জিনিস বেছে নিচ্ছেন।

সাবাই ঘাস সংগ্রহ করে প্রথমে রোদে শুকোনো হয়। তারপর সেগুলিকে পাক দিয়ে দড়ি তৈরি করা হয়। এরপর সেই দড়ি দিয়ে ব্যাগ, টেবিল, ট্রে, ঝুড়ি, পেন স্ট্যান্ড, কন্টেনার, পাপোষ, কোস্টার, টেবিল ম্যাট, গয়না সহ নানা নজরকাড়া জিনিস তৈরি করা হয়।

প্রথমে সাবাই ঘাসের বুনন দিয়ে জিনিসটি তৈরি করার পর তা ভেষজ রঙে ডুবিয়ে গরম জলে ধোয়া হয়। আর সব শেষে রোদে ফেলে শুকিয়ে নেওয়া হয়।

সাবাই ঘাসের তৈরি প্রতিটি জিনিস খুবই হালকা অথচ টেকসই। সবচেয়ে বড় কথা প্রতিটি জিনিস একশো শতাংশ পরিবেশ বান্ধব। ব্রিটিশ আমলে যে সাবাই ঘাস দিয়ে শুধুই দড়ি তৈরি হত তা এখন নিত্যপ্রয়োজনীয় থেকে শৌখিন দ্রব্য বানাতেও কাজে লাগছে। অভিনব সব শিল্পসামগ্রিতে আকর্ষিত হচ্ছে সারা পৃথিবী।

বেলপাহাড়ির পথ ধরে গেলে দেখা যাবে স্থানীয় মহিলাদের উদ্যোগে পথের ধারেই গড়ে উঠেছে ছোট্ট দোকান। যেখানে সাবাই ঘাসের তৈরি বিভিন্ন সামগ্রি বিক্রি হয়। এতে স্থানীয় অর্থনীতি যেমন অক্সিজেন পাচ্ছে, তেমনই অনেক মহিলা কাজ পাচ্ছেন। রোজগার করতে পারছেন। বর্তমানে বাংলার এই কুটিরশিল্পকে বিশ্বের আঙিনায় পৌঁছে দিতে রাজ্যসরকারও উদ্যোগী হয়েছে।

Show Full Article

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *