অসম্ভবকে সম্ভব করছেন এক কৃষক, কলকাতার পাশেই ফলাচ্ছেন মিষ্টি স্বাদের কমলালেবু
পাহাড় বা তরাই অঞ্চলে কমলালেবু ভাল হয়। কিন্তু এই উষ্ণায়নের যুগে কলকাতার পাশেই যে এমন মিষ্টি স্বাদের কমলালেবু ফলতে পারে তা দেখিয়ে দিলেন এক কৃষক।
মৌসুমি গুহ মান্না, অশোকনগর : কমলালেবু পাহাড়ি এলাকাতেই ভাল হয়। সমতলে, বিশেষত কলকাতা বা তার ধারেকাছে কমলা চাষ করলে ছোট আকারের টক কমলালেবুই পাওয়া যেতে পারে, এমন ধারনাও রয়েছে অনেকের।
এমনও ধারনা রয়েছে যে বর্ষার কারণে কমলালেবুর গাছের ক্ষতি হয়। তাই এমন সমতলে কমলা চাষ মুশকিল। কিন্তু সব ধারনাকেই ভুল প্রমাণ করে কলকাতার খুব কাছেই এক কৃষক তাঁর একান্ত প্রচেষ্টায় তৈরি করেছেন কমলালেবুর বাগান।
যেখানে থরে থরে ঝুলছে বিভিন্ন প্রজাতির কমলালেবু। হাত বাড়ালেই যাদের ছোঁয়া যাবে। খেতে অসামান্য। মিষ্টি তো বটেই। তার সঙ্গে কমলালেবুর স্বাদ গন্ধেও ভরপুর।
এমন অসম্ভবকেই সম্ভব করে দেখিয়েছেন কেওটসাহা গ্রামের সুধীর নার্সারির মালিক নারায়ণ চন্দ্র মণ্ডল। উত্তর ২৪ পরগনার অশোকনগরের সেনডাঙায় অবস্থিত এই গ্রাম। যেখানে প্রায় সাড়ে ৮ বিঘা জমিতে তাঁর নার্সারি রয়েছে। সেখানেই ছকভাঙা কিছু করার ইচ্ছায় নারায়ণবাবু ২ বছর আগে কমলালেবু চাষ শুরু করেন।
চাষির ঘরে জন্ম এবং বেড়ে ওঠা। তাই ছেলেবেলা থেকেই পড়াশুনোর পাশাপাশি বাবার সাথে চাষের কাজে হাত লাগাতেন নারায়ণবাবু। নিজের অভিজ্ঞতায় বুঝতে পারেন কোনওরকম কেমিক্যাল ছাড়া জৈব পদ্ধতিতে চাষ করলে সমতলেও কমলালেবু ফলানো সম্ভব। যাতে প্রবল বর্ষাতেও গাছ নষ্ট হয়না।
এই ভাবনাকে সত্যি করতেই তিনি দার্জিলিং, ভুটান সহ বিভিন্ন জায়গা থেকে প্রায় ৮-১০ রকমের কমলার চারা এনে বাগান করেন। তাঁর এই অভিনব প্রচেষ্টাকে স্থানীয় মানুষজন প্রথমে নানাভাবে ব্যঙ্গ করতেন। কিন্তু গাছে ফল ধরার পর সেই লেবু খেয়ে সকলেই মুগ্ধ হন।
নারায়ণবাবু কয়েকবার স্থানীয় বাজারেও কমলালেবু বিক্রি করতে গিয়েছিলেন। পরে লোকমুখে তাঁর বাগানের কথা ছড়িয়ে পড়ে। তখন থেকে তিনি শুধুমাত্র বাগানে আগত পর্যটকদের কাছেই তাঁর বাগানের লেবু থেকে চারাগাছ সবই বিক্রি করেন। তাঁর বাগানে কমলালেবু ছাড়াও অ্যাভোকাডো, পারসিমন, এমনকি আপেল গাছও রয়েছে।

নারায়ণবাবু নিজে পর্যটকদের বাগান ঘুরিয়ে দেখানো থেকে গাছের পরিচর্যা, সব করেন। পর্যটকদের কারণে নভেম্বর থেকে জানুয়ারি অবধি দক্ষিণবঙ্গের এই কমলা বাগানে তিলধারণের জায়গা থাকেনা।
শীতের মরসুমে এই কমলা বাগানে গিয়ে ছবি তোলাই এখন মানুষের নতুন আকর্ষণ। এখন অশোকনগরের এই কমলা বাগান চোখে দেখতে বহু পর্যটক সেখানে হাজির হচ্ছেন।













