ফাইল : বিশ্বকর্মা পুজো, নিজস্বচিত্র
কলকাতা : আজ বিশ্বকর্মা পুজো। পুজোকে কেন্দ্র করে কিছু বাজারে গত বুধবার ভিড় দেখা গিয়েছিল ঠিকই। পুজোর সামগ্রি, মূর্তি, ফুল কেনার ভিড়। তবে বৃহস্পতিবার সকালে বিশ্বকর্মা পুজোর চেনা ছবিটা উধাও।
সকালে বিভিন্ন কলকারখানায় পুজো হয়েছে ঠিকই। তবে তা নিঃশব্দে। কি যেন একটা আতঙ্কের মধ্যে করতেই হবে তাই পুজো করা! পুজোটা সেরেই সব গুটিয়ে কত দ্রুত বাড়ি ঢোকা যায় এদিন সেই মানসিকতাই নজর কেড়েছে।
এদিন সকাল থেকেই শুরু হয়েছে পুজোর প্রস্তুতি। বিশেষত কলকারখানায় ভোর থেকেই কর্মীরা আসতে শুরু করেন। কেউ ঠাকুর সাজান। কেউ হাতে গড়া ছোট্ট প্যান্ডেলে ফিনিশিং টাচ দেন।
কারও আবার দায়িত্ব পড়েছিল হোমের কাঠ কেটে টুকরো করার। কেউ পুজোর জায়গাটা ধুয়ে মুছে পরিস্কার করেছেন। কেউ আবার ফল কেটে সাজিয়েছেন। অন্যান্য বারও এটাই হয়। কিন্তু সেই উৎসাহটা এদিন নজরে পড়েনি।
বিশ্বকর্মা পুজোয় মাইকের রমরমা থাকে। এবার তাও তেমন ভাবে কানে বাজেনি। রাস্তায় কিছু মানুষজনকে একটু অন্য সাজে নজরে পড়লেও তা সংখ্যায় ছিল নগণ্য।
বিশ্বকর্মা পুজোর দিন মানেই বাঙালির মনে দুর্গাপুজোর হাওয়া লেগে যাওয়া। এবার সেটাই খুঁজে পাওয়া যায়নি করোনা আবহে। মানুষের মনে বেশ একটা পুজো পুজো গন্ধ উধাও। আর বিশ্বকর্মা পুজো মানেই উৎসবের মরসুমের শুরু। কিন্তু এদিন উৎসবের আবহটাই অধরা।
অনেক জায়গায় বিশ্বকর্মা পুজো শেষে খাওয়া দাওয়ার বন্দোবস্ত থাকে। বিশেষত কলকারখানায় তো বটেই। কোথাও ইলিশ, তো কোথাও পাঁঠার মাংস। কোথাও মুরগি। সঙ্গে খিচুড়ি বা ভাত, পাঁচমিশেলি তরকারি, ডাল, ভাজা। শেষ পাতে দই-মিষ্টি। এবার সেই তালিকাতেও কাটছাঁট।
খাওয়া দাওয়া হয়েছে ঠিকই কিছু জায়গায়। তবে মেনুতে সেই রমরমা ছিলনা। মেশিনের দেবতার পুজো। ফলে মেশিন এদিন সারাদিন ঘুমে আচ্ছন্ন। বরং সারা বছর যে মেশিন নিরন্তর খেটে চলে, সেই মেশিন এদিন পূজিত হচ্ছে। তার তেলকালি মাখা শরীরে পড়েছে মালা, গাঁদা ফুল।
এ ছবি আগেও ছিল আজও আছে। সময় বদলেছে কিন্তু বঙ্গ জীবনের কয়েকটা দিন, কয়েকটা উৎসব তার চিরাচরিত স্পন্দন ধরে রেখেছে। অনেকে মনে করেন প্রজন্মের বদল অনেক পরম্পরাকে শেষ করে গড়ে তোলে নতুন পরম্পরা। কিন্তু বিশ্বকর্মা পুজোয় অন্তত পশ্চিমবঙ্গে সেই পরিবর্তন অধরা। তবে এবার করোনা অনেকটাই বিশ্বকর্মা পুজোর আনন্দ মাটি করেছে।