Kolkata

বিশ্বায়নের যুগেও কি বিশ্বকর্মার সঙ্গে ঘুড়ির সম্পর্ক অটুট, ঘুড়ির দুনিয়ায় উত্তরের খোঁজ

বিশ্বকর্মা পুজো মানেই সকাল থেকে বিকেল অবধি আকাশে রঙ বেরঙের ঘুড়ির মেলা। আর সঙ্গে চলতে থাকে ভো কাট্টা-র উল্লাস।

Published by
News Desk

মৌসুমি গুহ মান্না, কলকাতা : বিশ্বকর্মা পুজোর দিন পশ্চিমবঙ্গ জুড়ে ঘুড়ি ওড়ানোর একটা প্রথা প্রচলিত রয়েছে। বিশ্বকর্মা হলেন স্থাপত্যের দেবতা। কথিত আছে তিনি দ্বারকা নগরী নির্মাণ করেছিলেন এবং অন্যান্য সকল দেবতাদের জন্য তিনি উড়ন্ত রথ বানিয়েছিলেন। তাই বিশ্বকর্মা পুজোর দিন এই দেবতার নির্মাণ ও কারিগরি দক্ষতার প্রতি সম্মান জানাতে ঘুড়ি ওড়ানো হয়।

২৮০০ বছর আগে চিন দেশে প্রথম ঘুড়ি আবিষ্কার হয়। ১৮৫০ সাল থেকে বিশ্বকর্মা পুজোকে কেন্দ্র করে বাংলায় ঘুড়ি ওড়ানো শুরু হয় বলে মনে করা হয়। অনেক রাজবাড়িতেই এই পুজোর দিন ঘুড়ি ওড়ানোর প্রথা প্রচলিত ছিল।

সেই সময় বিত্তশালী মানুষরা নিজেদের অর্থ এবং প্রতিপত্তি প্রদর্শনের জন্যে ঘুড়ির সাথে টাকা বেঁধে ওড়াতেন। আবার কখনও টাকা দিয়েও ঘুড়ি তৈরি করাতেন।

বাংলার চিরাচরিত ঘুড়িগুলির মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় পেটকাটি, চাঁদিয়াল, মোমবাতি, বগগা, ময়ূরপঙ্খীর মত ঘুড়িগুলি। তবে এই চেনা ঘুড়ির বাইরেও ডায়মন্ড, রোলার, স্লেড, ডেল্টা, বক্স, অক্টোপাস, ল্যানটার্ন ইত্যাদি নানারকম ঘুড়ি বাজারে এখন বেশ জনপ্রিয়।

চৌকো চেহারার চিরাচরিত ঘুড়ির পাশাপাশি এখন ক্রমে জায়গা করে নিচ্ছে চিনের নানা আকারের ঘুড়ি। যা দেখতে একদম অন্যরকম। চেহারাও অনেকক্ষেত্রে সাধারণ ঘুড়ির চেয়ে অনেকটা বড়।

সময়ের হাত ধরে সবই বদলায়। ঘুড়ির সরঞ্জামেও এসেছে বদলের ছোঁয়া। যুগের হাত ধরে ঘুড়ি আর তার মাঞ্জা সুতোতেও এসেছে পরিবর্তন। আগেকার পাতলা ফিনফিনে কাগজের পাশাপাশি এখন ঘুড়ি তৈরিতে ব্যবহার হচ্ছে পাতলা প্লাস্টিক। পুরনো দিনের কাচ গুঁড়ো, পায়রার ডিমের খোলা ভেঙ্গে রাত জেগে মাঞ্জা দেওয়ার দিনও এখন ইতিহাস। বদলে বিকোচ্ছে সস্তাদরের ধারাল চিনা মাঞ্জা।

বাগবাজারের ‘পাপ্পু কাইটস’-এর পাপ্পু জানালেন, সময়াভাবে মানুষ এখন প্রায় ঘুড়ি বিমুখ। তাছাড়া এখনকার প্রজন্মও ঘরে বসে গেম খেলতে ভালবাসে বলে তাদের কাছে পুরনো দিনের এই আনন্দ এখন অনেকটাই অর্থহীন। তাই দোকানে কেনাবেচাও আগের তুলনায় প্রায় অর্ধেক হয়ে গেছে।

এছাড়া চিনা মাঞ্জার তুলনায় পাপ্পুর দোকানের সুতির মাঞ্জা সুতোর দাম অনেকটাই বেশি। তাই আগে যেখানে বিশ্বকর্মা পুজোর সময় দোকানে ভিড় থিকথিক করত এখন তা ফাঁকাই পড়ে থাকে।

তবে ঘুড়ি যে একেবারে হারিয়ে গেছে তা নয়। সময়ের অভাব, পড়ার চাপ, অন্যান্য বিনোদনের সুযোগ ক্রমে কিশোর, তরুণদের ঘুড়ি বিমুখ করেছে মাত্র। ঘুড়ি কিন্তু আজও শরতের আকাশে সুতোর টানে মাথা নাড়ে। অন্য ঘুড়ির সুতোকে নিজের ঘুড়ির সুতোর টানে ছিন্ন করতে পারলে আজও সমস্বরে চিৎকার শোনা যায় ভো কাট্টা।

Share
Published by
News Desk