Business

বাজেটে মধ্যবিত্ত ব্যবসায়ীদের সামাজিক সুরক্ষা কোথায়? ক্ষুব্ধ এফটিও

সাধারণ চাকুরীজীবীরা চাকরি করেন। মাস গেলে মাইনে পান। অবসরের বয়স হলে শেষ জীবনের সুরক্ষার জন্য প্রভিডেন্ট ফান্ড, গ্র্যাচুইটি, পেনশন সবই রয়েছে। কিন্তু সাধারণ ব্যবসায়ী সমাজের সুরক্ষা কোথায়? তাঁদের কথা কে ভাববে? এটা তো সরকারের দায়িত্ব। যাতে সাধারণ ব্যবসায়ীরা নিজেদের জীবনধারণ নিয়ে নিশ্চিন্ত বোধ করেন। কিন্তু হল কই? তাঁদের জন্য এমন কোনও সুরক্ষা বন্দোবস্ত তো বাজেটে দেখা গেল না। প্রবল আক্ষেপের সুরেই একথা জানালেন ফেডারেশন অফ ট্রেডার্স অ্যাসোসিয়েশনস-এর সম্পাদক তারকনাথ ত্রিবেদী। তাঁর দাবি, যেভাবে দিনের পর দিন বড় শিল্পগোষ্ঠী খুচরো বাজারে থাবা বসাচ্ছে তাতে সাধারণ ব্যবসায়ীদের মাথায় হাত পড়ার জোগাড় হয়েছে। নোটবন্দির জের এখনও অব্যাহত। মানুষের ক্রয় ক্ষমতা কমেছে। বড় বিপণি সস্তার ৩ দিন, সস্তার ৪ দিন করে প্রচার করে তাদের যাবতীয় পড়ে থাকা মাল বিক্রি করে দিচ্ছে। কিন্তু তারাও বিপদে। কারণ এফডিআইয়ের থাবা আরও বড়। বিদেশি লগ্নি এলে, বিদেশি সংস্থা পুরোদমে বাজারে নামলে এসব বিপণিও শেষ হয়ে যাবে। ছোট ব্যবসায়ীদের ভবিষ্যৎ তো অন্ধকার।

তারকবাবুর দাবি, বাজেটে সাধারণ ব্যবসায়ীদের কথা মাথায় রেখে সরকার একটা সেল তৈরির ঘোষণা করতে পারত। যে সেল দেশের লক্ষ লক্ষ ছোট ও মাঝারি ব্যবসায়ীদের স্বার্থ, তাঁদের প্রয়োজন বিবেচনা করে ব্যবস্থা নিত। তাঁদের সামাজিক সুরক্ষার বন্দোবস্ত করত। কিন্তু সেসব হল কই? সরকার তাঁদের ‘কেয়ার’ করছে না বলেই মনে করছেন এফটিও-র সম্পাদক। তাঁর অভিযোগ দিনের পর দিন চিঠি লেখা হয়েছে। জানানো হয়েছে সাধারণ ব্যবসায়ীদের সমস্যার কথা। কিন্তু চিঠির প্রাপ্তি স্বীকার ছাড়া আর কিছুই করেনি কেন্দ্রীয় সরকার। তাই ছোট ও মাঝারি ব্যবসায়ীরাও মনে করছেন না কেন্দ্র তাঁদের কথা ভাবে।

বাজেট প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে গিয়ে পশ্চিমবঙ্গের অন্যতম বৃহৎ ব্যবসায়ী সংগঠনের সম্পাদক তারকনাথ ত্রিবেদী যা বললেন তা কিন্তু গোটা ব্যবসায়ী সমাজের বক্তব্য হিসাবেই প্রতিধ্বনিত হল। যা কিন্তু কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন বিজেপির জন্য অবশ্যই অশনি সংকেত। গুজরাটে কান ঘেঁষে জয়। রাজস্থান উপনির্বাচনে শোচনীয় পরাজয় কিন্তু বিজেপির জন্য আতঙ্কের ঘণ্টা বাজিয়ে দিয়েছে। তারপরও বাজেটে সামাজিক সুরক্ষা থেকে ছোট ব্যবসায়ীদের সুবিধা অসুবিধা বিবেচনা করে দেখা, সব ক্ষেত্রেই কেন্দ্রের উদাসীনভাব কিন্তু এঁদের মধ্যে ক্ষোভের পাহাড় তৈরি করেছে। যা কিন্তু ভোটবাক্সে প্রভাব ফেলতে সময় নেবেনা বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞেরা।

বাজেট প্রতিক্রিয়া দিতে গিয়ে তারকবাবু টেনে আনেন সরকারের ঘোষিত সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য তথাকথিত দরিদ্রদের বছরে পরিবার পিছু ৫ লক্ষ টাকা করে খরচের বোঝা বহনের প্রতিশ্রুতি। ১০ কোটি পরিবার নাকি এই সুবিধা পাবেন। কিন্তু সেই সুবিধা পাওয়ার শর্ত কী হবে? কীভাবে মিলবে এই সুবিধা? তারজন্য কি করতে হবে? এসব কিছুরই কোনও সদুত্তর দেয়নি সরকার। কিছুই পরিস্কার নয়। আজ যদি কারও এই সুবিধা নেওয়ার দরকার পড়ে তবে তিনি কিন্তু জানেনও না কীভাবে মিলবে এই সুবিধা, কোন দরজায় কড়া নাড়বেন তিনি। তাই এই নিয়ে এখনই উচ্ছ্বসিত হওয়ার মত কিছুই দেখছেন না তারকবাবু। বরং তাঁর দাবি, ব্যবসায়ী থেকে সাধারণ মানুষ, যাঁরা মোটা টাকা প্রিমিয়াম দিয়ে মেডিক্লেম করছেন, তাঁরাও বাস্তবে ক্লেমের টাকার সামান্যই হাতে পাচ্ছেন। হাসপাতালের বাকি খরচ তাঁদের পকেট থেকে ব্যয় করতে হচ্ছে। এটাকে অন্যায় বলেই মনে করছেন তারকনাথ ত্রিবেদী। এক্ষেত্রে সাধারণ মানুষ যাতে তাঁদের প্রাপ্য ক্লেমের টাকা ঠিকঠাক পান তা দেখা সরকারের দায়িত্ব বলেই মনে করছেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী একসময়ে জানিয়েছিলেন মুদ্রা যোজনায় কোনও ছোট ব্যবসায়ী বা স্বনি‌যুক্ত ব্যক্তি চাইলে তাঁদের অত্যন্ত কম সুদে ১০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ঋণ দেওয়া হবে। কিন্তু বাস্তবে সেই সুবিধা কার কাছে গেছে? প্রশ্ন তুলে তারকবাবুর দাবি, তিনি একটি সংগঠন চালাচ্ছেন। কিন্তু তাঁর জানা নেই পশ্চিমবঙ্গে এমন কোনও ব্যবসায়ী আছেন যিনি এই সুবিধা পেয়েছেন। সুর চড়িয়ে তারকবাবুর দাবি, এটা কারা কীভাবে পাচ্ছেন বা পেয়েছেন তা বিস্তারিত জানিয়ে শ্বেতপত্র প্রকাশ করুক সরকার।

গুচ্ছ গুচ্ছ অভিযোগ। রাশ রাশ ক্ষোভ। কেন্দ্রীয় সরকারের অবজ্ঞা। এসবের সঙ্গে লড়াই করেও অবস্থা কোন পথে যায় সেদিকেই নজর রাখতে চাইছে এফটিও। এখনই রাস্তায় নেমে বা ব্যবসা বন্ধ করে কোনও আন্দোলনের রাস্তায় যেতে তাঁরা রাজি নন। বরং এতকিছুর পরও সরকারের ওপরই আস্থা রাখতে চাইছেন তাঁরা। তাঁদের আবেদন, সরকার ছোট, মাঝারি ব্যবসায়ীদের দিকটা একটু বিবেচনা করে দেখুক।

এদিকে কেন্দ্রীয় বাজেট নিয়ে যে হতাশা, ক্ষোভ তারকবাবুর শব্দে ঝরে পড়েছে, অতটা কঠিন শব্দ তিনি রাজ্য বাজেট নিয়ে প্রয়োগ করেননি। বরং তাঁর মনে হচ্ছে জিএসটি হতে দিয়ে রাজ্য তাদের হাতে থাকা কর ক্ষমতা কেন্দ্রের হাতে তুলে দিয়েছে। ফলে তাদের করনীয় তেমন কিছু নেই। তবে ব্যবসায়ীদের রাজ্য বাজেটও হতাশ করেছে বলেই প্রতিক্রিয়ায় জানিয়েছেন এফটিও-র সম্পাদক তারকনাথ ত্রিবেদী।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *