National

দূষণ কাড়ছে জৌলুস, ফর্সা রংয়ে হলদে ছোপ

প্রতিদিন দূষণ কেড়ে নিচ্ছে জৌলুস। মানুষের ভিড়ে হাঁপিয়ে উঠছে তার শরীর। ফর্সা ধবধবে রংয়ে পড়েছে হলুদে ছোপ। যত্নই এখন একমাত্র ভরসা।

আগ্রা : তার আরও যত্নের দরকার। মানুষ ও দূষণ তাকে প্রতি নিয়ত হেনস্থা করে চলেছে। তার জৌলুস কেড়ে নিচ্ছে। এই অত্যাচার সহ্য করার পরিস্থিতিতে সে নেই। তাই এগিয়ে আসতে হবে শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষদের। যাঁরা রক্ষা করবেন তাকে। সেইসঙ্গে রক্ষা করবেন ভারতের অন্যতম শ্রেষ্ঠ স্থাপত্যকে।

যমুনার তীরে ঐতিহাসিক শহর আগ্রা। সেই মোগল আমল থেকে বহু ইতিহাসের সাক্ষী থেকেছে এই শহর। দেখেছে রাজনৈতিক পট পরিবর্তন নানা সময়ে। তবে তাতে কোনও আক্ষেপ রয়ে যায়নি তার। কারণ সে পেয়েছে এমন একটি উপহার যা পৃথিবীর নামি দামি শহরের কাছেও নেই।

সাদা মার্বেল পাথরের ওপর অপূর্ব কারুকার্যে ঢাকা তাজমহল শাহজাহান আর মমতাজের ভালবাসার শেষ স্মৃতি হয়ে আজও দাঁড়িয়ে রয়েছে আগ্রার গর্বিত বুকের ওপর। কিন্তু প্রশ্ন আর কতদিন তাজমহল তার শ্বেতশুভ্র মহিমা নিয়ে বিরাজ করতে পারবে? চারিদিক থেকে দৃশ্যমান ও অদৃশ্য শত্রুরা যে আস্তে আস্তে গ্রাস করতে শুরু করেছে এই অবর্ণনীয় সৌন্দর্যের প্রতিমূর্তিটিকে।

Taj Mahal
১৯০০ খ্রিষ্টাব্দে তাজমহল, ছবি – সৌজন্যে – উইকিপিডিয়া

রোজ হাজারে হাজারে মানুষ আসেন তাজমহল দর্শনে। একঝলক দেখার পরই তাঁদের কোথাও খটকা লাগে। প্রশ্ন করে বসেন গাইডকে, তাজমহল কি হলুদ হয়ে যাচ্ছে দিন দিন? গাইডরা এর উত্তর জানেন। এ সত্যি সকলেরই জানা।

বহু বছর ধরেই পরিবেশবিদ, সংরক্ষকরা গলা ফাটাচ্ছেন তাজমহলের ভেঙ্গে পড়া স্বাস্থ্যের দিকে নজর দেওয়ার জন্য। প্রতিদিন মানুষ ও পরিবেশের দ্বারা অত্যাচারিত হচ্ছে এই স্মৃতিসৌধ।

বাড়তে থাকা তাপমাত্রা, পাশের রাজ্য রাজস্থান থেকে উড়ে আসা বালির ঝড় ও সর্বোপরি ধুঁকতে থাকা দূষিত যমুনা চারিদিক থেকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে তাজমহলকে। তার ওপর তো আছেই গাড়ির বোঝা।

গোটা আগ্রা শহরে লক্ষ লক্ষ গাড়ি যাতায়াত করে। যমুনা এক্সপ্রেসওয়ে খুলে যাওয়ার পর গাড়ির চাপ আরও বেড়েছে। ফলে তা থেকে দূষণ মিশছে বাতাসে।

এর সঙ্গে তাজমহল দেখতে ভিড় করেন দূরদূরান্তের মানুষ। এত মানুষের ভার আর সহ্য করতে পারছে না সপ্তদশ শতাব্দীর মার্বেল পাথরের এই স্মৃতিসৌধ।

সুপ্রিম কোর্ট, ন্যাশনাল গ্রিন ট্রাইব্যুনাল নানা নির্দেশ দিলেও সরকার যমুনার দূষণ কমানো ও জলের গতি নিয়ন্ত্রণের জন্য জোরাল কোনও ব্যবস্থাই নিচ্ছে না বলে অভিযোগ জানিয়েছেন সবুজ বিপ্লবী শ্রবণ কুমার সিং। তাঁর মত আরও অনেক পরিবেশবিদই তাজমহলের আশেপাশের মারাত্মক দূষিত পরিবেশ নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন।

আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়া-র উদ্যোগে মুলতানি মাটি দিয়ে গোটা স্থাপত্যটিকে পরিস্কার করা হয়েছে কয়েকবার। প্রতি শুক্রবার সাবান জলে ধোয়া হয় গোটা তাজমহলকে। তবু দিন দিন নিজের পরিচিত শুভ্রতা হারিয়ে ফেলছে তাজ। আগামীদিনে যমুনা দূষণ ও বায়ুদূষণ কমানোর ব্যবস্থা না করলে ভারতের এই অন্যতম গর্ব অচিরেই হারিয়ে ফেলবে তার জৌলুস। — সংবাদ সংস্থার সাহায্য নিয়ে লেখা

Back to top button