Feature

মানুষ নয়, ৯ বছর ধরে রেলস্টেশনে সিগনালের কাজ করেছিল একটি বেবুন

ট্রেনের সিগনালে সামান্য ভুল হলেই মানুষের প্রাণ সংশয় হতে পারে। ৯ বছর ধরে সেই কাজ করেছিল একটি বেবুন। তার ওপর ভরসাও রেখেছিলেন রেল কর্তারা।

গল্পটির শুরু ১৮৮১ সালে। দক্ষিণ আফ্রিকার কেপটাউন-পোর্ট এলিজাবেথ রেলওয়ে সার্ভিসে জেমস ওয়াইড নামে একজন গার্ড ছিলেন। কাজের সময় তিনি চলন্ত রেলগাড়ির একটি থেকে অন্যটিতে লাফিয়ে যেতেন। এভাবেই একদিন লাফ দেওয়ার সময় জেমস চলন্ত ট্রেনের নিচে পড়ে যান।

প্রাণে বেঁচে গেলেও জেমসের ২টি পা হাঁটুর কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। কিন্তু হতাশ না হয়ে তিনি কাঠের খুঁটি দিয়ে নিজের জন্য ২টি নতুন পা তৈরি করেন। এমনকি ঘুরে বেড়ানোর জন্য একটি কাঠের ট্রলিও তৈরি করেছিলেন জেমস।

জেমস একদিন দক্ষিণ আফ্রিকার বাজারে জ্যাক নামে একটি বেবুনের দেখা পান। তার বুদ্ধিমত্তায় মুগ্ধ হয়ে জেমস তাকে কিনে পোষ্য হিসাবে বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। বাড়ির সব কাজেই জ্যাক তাঁকে সাহায্য করত।

জেমস যখন স্টেশনে কাজ করতেন জ্যাক সেটাও খুব মন দিয়ে লক্ষ্য করত। জ্যাকের পর্যবেক্ষণ ক্ষমতা এবং কর্মদক্ষতা দেখে জেমস তাকে নিজের সহকারী হিসেবে নিয়োগ করার কথা ভাবেন। তিনি জ্যাককে সিগনাল দেওয়ার পদ্ধতি শেখাতে শুরু করেন।

জেমসের নির্দেশে লিভার টানা থেকে বাঁশির আওয়াজ শুনে সিগনালের কাজ অবধি সবকিছুই জ্যাক নিপুণভাবে করতে পারত। তবে জ্যাকের কাজে ভীত হয়ে একজন রেলযাত্রী রেল কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ জানান। তখন রেলের একজন ম্যানেজার জ্যাকের কর্মদক্ষতা যাচাই করতে আসেন।

ম্যানেজারের নির্দেশে একজন ইঞ্জিনিয়ার বাঁশি বাজালে তা শুনে জ্যাক একেবারে সঠিক সিগনালটি পরিবর্তন করে। জ্যাকের কাজে মুগ্ধ হয়ে ম্যানেজার তাকে সরকারি কর্মচারির মর্যাদা দেন।

প্রতিদিন ২০ সেন্ট এবং প্রতি সপ্তাহে অর্ধেক বোতল বিয়ারের বিনিময়ে জ্যাক আনুষ্ঠানিকভাবে নতুন সরকারি দায়িত্ব পায়। ৯ বছর কাজের পর জ্যাক ক্ষয়রোগে আক্রান্ত হয়ে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করে। তার খুলিটি এখনও দক্ষিণ আফ্রিকার গ্রাহামসটাউনের আলবানি জাদুঘরে সংরক্ষিত রয়েছে।

Show Full Article

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *