পৃথিবীর মত সূর্যেও বৃষ্টি নামে, তবে একটু অন্যরকম
আবহাওয়ার খবরে বৃষ্টির পূর্বাভাস পেতে সকলেই অভ্যস্ত। পৃথিবীকে ভেজানোর জন্য আকাশ থেকে নামে জলের ফোঁটা। পৃথিবীর প্রাণভোমরা সূর্যও কিন্তু ব্যতিক্রম নয়। সেখানেও মাঝেমধ্যেই নামে বৃষ্টি।

পৃথিবীতে বৃষ্টি হওয়ার বিষয়টি সকলের কাছেই খুব স্বাভাবিক। জন্ম থেকে সবাই আকাশ থেকে নেমে আসা জলের ধারার সঙ্গে পরিচিত। আবার পৃথিবীর মতই সূর্যেও বৃষ্টি হয়। বিজ্ঞানীরা তাকে বলেন সৌরবৃষ্টি বা করোনাল রেন। তবে এই বৃষ্টি একেবারেই আলাদা ধরনের। এতে জলের বদলে অন্যকিছু ঝরে পড়ে।
কঠিন, তরল ও গ্যাসীয়, পদার্থের এই ৩ ধরনের অবস্থার সঙ্গে সকলে পরিচিত। এগুলি বাদে পদার্থের চতুর্থ অবস্থাটিকে বলা হয় প্লাজমা। সূর্যের বাইরের বায়ুমণ্ডল করোনা নামে পরিচিত। এটি খুবই কম ঘনত্বের কিন্তু অত্যন্ত উচ্চ তাপমাত্রার একটি স্তর। এখানে সৌরশিখা তৈরির সময় উত্তপ্ত প্লাজমা চৌম্বকীয় পথে উপরে উঠে যায়।
এরপর ওই উত্তপ্ত প্লাজমা তাপ বিকিরণ করে ঠান্ডা হয়ে যায়। তখন তা ফোঁটা ফোঁটা বৃষ্টির আকারে সূর্যের উপর ঝরে পড়ে। এই প্রাকৃতিক বিষয়কে বিজ্ঞানীরা সৌরবৃষ্টি বলেন। পৃথিবীতে বৃষ্টি বলতে জলের ফোঁটার আকাশ থেকে নিচে নেমে আসাকে বোঝায়। কিন্তু সূর্যের বৃষ্টিতে পাওয়া যায় উত্তপ্ত প্লাজমার ফোঁটা।
সৌরবৃষ্টি আসলে একটি মহাজাগতিক ঘটনা। বিজ্ঞানীরা এটিকে বহুবার প্রত্যক্ষ করেছেন। কিন্তু বহু দশক ধরে এই বৃষ্টির পিছনে আসল কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে তাঁরা হিমশিম খেয়েছেন। এতকাল বিজ্ঞানীদের ধারনা ছিল সূর্যের বায়ুমণ্ডলে উপস্থিত প্রতিটি পদার্থের তাপ বিকিরণের নির্দিষ্ট ক্ষমতা রয়েছে। তাই করোনায় প্লাজমার ঠাণ্ডা হতে অনেক সময় লাগে।
সম্প্রতি ইউনিভার্সিটি অফ হাওয়াই ইন্সটিটিউট ফর অ্যাস্ট্রোনমির ২ বিজ্ঞানী অ্যাস্ট্রোফিজিক্যাল জার্নালে এই বিষয়ে নতুন তথ্য দিয়েছেন। পুরনো যুক্তিকে খণ্ডন করে তাঁরা দাবি করেছেন সৌরশিখা তৈরির কয়েক মুহুর্তের মধ্যেই সৌরবৃষ্টি বা প্লাজমা বৃষ্টি দেখা যায়।
২ বিজ্ঞানী জানিয়েছেন, সূর্যের বায়ুমণ্ডলে থাকা বিভিন্ন পদার্থের তাপ বিকিরণের ক্ষমতাও ভিন্ন ভিন্ন। সৌরশিখা তৈরির মত মহাজাগতিক বিষয়ের সময় এসব পদার্থের অনুপাত এবং চরিত্র বদলে যায়। তাই তার উপরেও প্লাজমার ঠান্ডা হওয়ার বিষয়টি নির্ভরশীল।
ভবিষ্যতে নতুন এই গবেষণার সূত্র ধরে করোনার চরিত্র থেকে সৌরঝড় এবং সৌরশিখা তৈরির মত মহাজাগতিক বিষয়কে আরও সহজে বোঝা সম্ভব হবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞেরা।