হাততালি দিলেই ঘটে ম্যাজিক, জেগে ওঠে রহস্যেঘেরা হ্রদের জল
তিনভাগ জল আর একভাগ স্থলে ভরা বিচিত্র এই পৃথিবীতে নানারকম অদ্ভুত ঘটনার ঘনঘটা। বুদ্ধিতেও যার ব্যাখ্যা মেলেনা। এও তেমনই এক অবাক করা ঘটনা।
নোনতা থেকে মিষ্টি জলের হ্রদ যেমন আছে, তেমনই আছে কত রঙিন জলের হ্রদ। তা বলে কাছে গিয়ে হাততালি দিলে যে হ্রদ জীবন্ত হয়ে উঠতে পারে, সাড়া দিতে পারে, তা কে জানত! কিন্তু ভারতে এক অত্যাশ্চর্য জলাশয় আছে যা এভাবে নিজেই এক ইতিহাস।
গোয়ার একটা শান্ত গ্রাম নেত্রাভ্যালী। সেখানেই রয়েছে ৪০০ বছরের পুরনো এই অদ্ভুত হ্রদটি। নাম ‘বুদবুদ্যাচি তালি’। এই হ্রদ একইসঙ্গে কিংবদন্তী, বিজ্ঞান এবং মজাদার গল্পকথার এক আজব মিশেল। এটিকে গোয়ার একটি গুপ্ত সম্পদও বলা যায়।
হ্রদ যদি গল্প বলতে পারত তাহলে বুদবুদ্যাচি তালি এই গ্রামের ভিতর তাকে নিয়ে বানানো লম্বা গল্প নিজেই শোনাতে পারত। উপর থেকে দেখলে একে আর পাঁচটা সাধারণ জলাশয়ের মতই লাগে। শান্ত একটা পুকুর। যার পাড়ে মহিষের পাল অবাধে বিচরণ করে আর মাছিরা যেন ড্রোনের মত উড়তে থাকে। কিন্তু কেউ তার খুব কাছে গেলেই সে নিজেকে মেলে ধরে নতুন রূপে।
কেউ যদি হাঁটতে হাঁটতে হ্রদটির খুব কাছে পৌঁছে যান, সামনে গিয়ে হাততালি দেন তাহলেই এক বিরল দৃশ্যের সাক্ষী থাকতে পারবেন। এরকম কিছু করলেই হ্রদটি নিমেষে জীবন্ত হয়ে ওঠে।
তার গোটা শরীরে বুদবুদের সৃষ্টি হয়। যেন মনে হয় সে নিজের মধ্যে শতাব্দী প্রাচীন গল্প জমিয়ে রেখেছে। যা কারও আনাগোনার আভাস পেলেই শোনানোর জন্য উদগ্রীব হয়ে ওঠে।
এর থেকেই এই হ্রদের নাম হয়েছে বুদবুদ্যাচি তালি। কোঙ্কণী ভাষায় এর অর্থ বুদবুদের হ্রদ। স্থানীয় অধিবাসীরা প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে দেখার পরেও ৪০০ বছরের পুরনো হ্রদের ব্যাপারে হতবুদ্ধি হয়ে আছেন।
কেউ বলেন এসব কোনও প্রাচীন আত্মার কাজ যে গ্রামের পাহারাদার হয়ে রয়েছে। আবার কেউ বলেন এ শুধুই প্রকৃতির খেয়াল। কারও মতে আবার জলের নিচে থাকা কোনও ভগবান এভাবে ভক্তদের সামনে তাঁর উপস্থিতি জানান দেন। তবে বিজ্ঞানীরা মনে করেন জলের নিচে কার্বন ডাই অক্সাইড এবং সালফার ডাই অক্সাইড থাকার কারণে এটা হতে পারে।
তবে সব যুক্তিকে সরিয়ে কেবলমাত্র ওই শানবাঁধানো হ্রদের নীলচে সবুজ স্বচ্ছ জলের মনোরম রূপ দেখতেই পর্যটকেরা ভিড় জমান। হ্রদের পাশেই রয়েছে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের শতাব্দী প্রাচীন গোপীনাথ মন্দির। তাই গোয়ায় ঘুরতে গেলে একবার এই আশ্চর্য হ্রদ দেখে আসাই যায়।













