National

এমন চায়ের দোকান কেউ দেখেননি, হাতকড়া পরে চায়ের দোকান চালান যুবক

এমন চায়ের দোকান কেউ কোথাও দেখেছেন কি, যেখানে চায়ের দোকানি হাতে হাতকড়া পরে চা করেন। দোকানে ঝোলানো থাকে বরের পাগড়ি, মালা।

ভারতে চায়ের দোকানের অভাব নেই। প্রতিটি পাড়া থেকে অলিগলি, সর্বত্র একটি চায়ের দোকান পেয়েই যাবেন। আমজনতা চায়ের দোকানে দাঁড়িয়ে এক ভাঁড় বা এক কাপ চায়ে চুমুক দিয়ে একটু জিরিয়ে নেন। তারপর ফের কাজে মন দেন।

তাই দেশের সাধারণ মানুষের কাছে চায়ের দোকান অত্যন্ত পরিচিত এক জায়গা। কিন্তু ঘোর চা বিলাসী মানুষও এই চায়ের দোকানে গিয়ে একটু অবাক হবেন। প্রথম ধাক্কা চায়ের দোকানের নাম।

পথের ধারের এই চায়ের দোকানের নাম সেকশন ৪৯৮এ টি কাফে। স্বামী বা শ্বশুরবাড়ির লোকজনের অত্যাচার থেকে মহিলাদের রক্ষা করতে আইপিসি-র এই ধারার কথা প্রায় সকলের জানা।

দোকানে লেখা থাকে যতক্ষণ না তিনি ন্যায় বিচার পাবেন, ততক্ষণ তাঁর চা ফুটতে থাকবে। দোকানের এক ধারে একটি লাল রংয়ের ঝলমলে পাগড়ি। যা সাধারণভাবে বর পরে বিয়ে করতে যান। সেই পাগড়িতে মালা ঝোলানো। তাও আবার বরমাল্য।

চা বিক্রেতা যুবকের এমন চায়ের দোকানের নাম এবং তাঁর হাতকড়া ও দোকানের সাজসজ্জা দেখার পর প্রায় সব মানুষের মনেই প্রশ্ন জাগে কেন? সেই কেন-র উত্তর এখন রাজস্থানের অন্তা শহরের অধিকাংশ মানুষই জানেন।

এমনকি যাঁরা হ্যাশট্যাগ জাস্টিস ফর কেকে সম্বন্ধে জানেন তাঁদেরও জানা। কেকে বলেই পরিচিত ওই চা দোকানি যুবক। যাঁর আসল নাম কৃষ্ণকুমার ধাকড়। মধ্যপ্রদেশের নিমাচ জেলার বাসিন্দা কৃষ্ণকুমার এখন সকলের কাছে কেকে। যিনি রাজস্থানের অন্তা শহরে একটি চায়ের দোকান চালান। মায়ের সঙ্গে থাকেন একটি টিনের চালের ঘরে।

কেকে নিজেই তাঁর কাহিনি জানিয়েছেন। ২০১৮ সালের জুলাই মাসে রাজস্থানের অন্তা শহরের এক তরুণীর সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়। সব ঠিকঠাক চলছিল। ২ জনে মধ্যপ্রদেশের আঠানা শহরে একটি ব্যবসাও দাঁড় করান।

মহিলাদের ব্যবসায় উৎসাহ দেওয়ার জন্য বেশ সুনামও অর্জন করেন কেকে। কিন্তু ২০২২ সালে আচমকাই একদিন তাঁর স্ত্রী বাড়ি ছেড়ে বাপের বাড়ি চলে যান। কয়েক দিনের মধ্যে কেকে-র বিরুদ্ধে আইপিসি সেকশন ৪৯৮এ অর্থাৎ পণের দাবিতে অত্যাচার এবং ১২৫ ধারা অর্থাৎ খোরপোশের দাবিতে মামলা দায়ের করেন।

কেকে-র মনে হয় এখানেই তাঁর জীবনের শেষ। তারপর মায়ের কথা ভেবে প্রাক্তন স্ত্রীর শহর অন্তাতেই একটি টিনের চালের ঘরে মাকে নিয়ে থাকতে শুরু করেন। সংসার চালানোর জন্য বেছে নেন চায়ের দোকান। তাঁর আগের ব্যবসা তুলে দেন কেকে।

চায়ের দোকানের নাম ও তাঁর হাতের হাতকড়া, সবই এক প্রতিবাদের ভাষা। কেকে-র বক্তব্য, তাঁর প্রতিবাদ মহিলাদের বিরুদ্ধে নয়। তাঁর প্রতিবাদ মহিলাদের রক্ষা করতে যে আইন তৈরি হয়েছে তার অপব্যবহার নিয়ে।

তাঁর আরও দাবি, তিনি একা নন, এমন অনেক মানুষ রয়েছেন যাঁরা এই আইনের অপব্যবহারের শিকার। কেকে-র মতে, তাঁর চায়ের দোকান কেবল তাঁর রোজগারের আস্তানা নয়, একটি বিচারালয়ও। — সংবাদ সংস্থার সাহায্য নিয়ে লেখা

Show Full Article

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *