স্টেথোর সঙ্গে গল্প কবিতা, কাগজকলমের যুগলবন্দিতে বাংলা সাহিত্যে নতুন প্রভাত
তিনি বিশিষ্ট চিকিৎসক। সারাদিন কেটে যায় রোগীদের আরোগ্য দিতে। বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী এই মানুষটি সফল সাহিত্যিকও। রয়েছে অনেক বই। সাহিত্যে অবদানের জন্য অর্জন করেছেন আন্তর্জাতিক পুরস্কারও।

তিনি একজন বিশিষ্ট চিকিৎসক। অভিজ্ঞ এই অমায়িক স্বভাবের মানুষটির কাছে গেলেই রোগীদের মনে হয় তাঁরা বুঝি কিছুটা সুস্থ বোধ করছেন। এতটাই ভরসা তাঁর ওপর। চিকিৎসক প্রভাত ভট্টাচার্য তাই সারাদিনই ব্যস্ত। রোগী সামাল দিতে দিতেই তাঁর সকাল থেকে রাত নামে। হয়তো কিছুটা ক্লান্তিও আসে।
রোগী দেখার শেষে বাকি সময়টা তাঁর একান্ত ব্যক্তিগত এবং পারিবারিক। তখন সব ক্লান্তি ভুলে তাঁর মনের খিদেটা চনমন করে ওঠে। হাতের কলম খাতার পাতায় উজাড় করে দিতে চায় মনের ভিতরে দানা বাঁধা কল্পনার বুনন।
দিনের শেষে চিকিৎসক প্রভাত ভট্টাচার্য তাঁর সেই সাহিত্যিক সত্ত্বার টানে বসে পড়েন কলম হাতে। তাঁর লেখা গল্প সংকলন, কাব্যগ্রন্থ, রহস্য রোমাঞ্চ কাহিনি, উপন্যাস, ঐতিহাসিক কাহিনি, ভ্রমণ কাহিনি, বন্যপ্রাণিদের নিয়ে বই, চিকিৎসা সংক্রান্ত বই, খেলাধুলার ওপর বই এক অনন্য সম্ভার। প্রতিদিন তাঁর লেখা বইয়ের বিক্রি নজর কাড়ে।
বর্তমানে শিশুসাহিত্যের সংখ্যা ক্রমশ কমছে। বাংলা সাহিত্যের সেই অভাব চিকিৎসক সাহিত্যিক প্রভাত ভট্টাচার্য মুছে দেওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছেন। শিশুসাহিত্যেও তাঁর অবদান উল্লেখযোগ্য। প্রতিবছরই বইমেলায় তাঁর একাধিক বই প্রকাশিত হচ্ছে।
এছাড়াও বছরের বিভিন্ন সময়ে তাঁর লেখা বই প্রকাশিত হয়ে চলেছে। বিভিন্ন প্রকাশনা সংস্থা তাঁর বই ছাপছে। কলেজ স্ট্রিটের বিভিন্ন দোকানেই তাঁর বই অনায়াসে পাওয়া যায়। পাঠকরা সেসব বই কিনছেন, পড়ছেন।
কলেজ স্ট্রিটের দেজ, দে বুক স্টোর, মহুয়া পাবলিশার্স, ধানসিঁড়ি সহ বিভিন্ন প্রকাশনা সংস্থার দোকানে তাঁর বই অনায়াসলভ্য। ইতিমধ্যেই তাঁর নিজের একটি পাঠক মহল তৈরি হয়ে গেছে। যাঁরা অপেক্ষায় থাকেন, খবর রাখেন প্রভাত ভট্টাচার্যের নতুন বই প্রকাশিত হল কিনা।
কলেজ স্ট্রিটে তো বটেই, এছাড়াও বিভিন্ন বইয়ের দোকানে, জেলায় জেলায় তাঁর বই এখন সহজেই পাওয়া যায়। আর অনলাইনে তাঁর বই কেনার সুবিধা তো রয়েছেই।
প্রভাত ভট্টাচার্যের লেখা উল্লেখযোগ্য বইগুলির মধ্যে রয়েছে ‘কাগজের মানুষ’, ‘দশভুজা’, ‘মায়াবী গ্রাম’, ‘গল্পনদীর দেশ’, ‘মাই ডটার’, ‘রানী রাজা কাহিনী’, ‘কাগজের মানুষ আর ফিনিক্স পাখি’, ‘এবার অ্যাডভেঞ্চার’, ‘সবুজ গ্রহের রহস্য’, ‘ডিটেকটিভ সূর্য’, ‘গোলকধাঁধায় ডিটেকটিভ সূর্য’, ‘শরাঘাত’, ‘মমির আক্রোশ এবং অন্যান্য গল্প’, ‘করোনার দিনলিপি’, ‘লক্ষ্যভেদ’, ‘জিয়ার কাণ্ডকারখানা’, ‘গল্পের গাছ’।
তাঁর গোয়েন্দা চরিত্র সূর্য। ডিটেকটিভ সূর্যের টানটান রুদ্ধশ্বাস রহস্যভেদ সব বয়সে মানুষকে সমানভাবে আকর্ষিত করে। শুধু বাংলা ভাষাতেই নয়, ইংরাজি ভাষাতেও তাঁর কলম সমানভাবে পারদর্শী। তাঁর লেখা ২টি ইংরাজি বইয়ের একটি ‘দ্যা কার্ডিয়াক ব্লু প্রিন্ট’ আর অন্যটি ‘মিস্ট্রিজ অফ দ্যা গ্রিন প্ল্যানেট’। এছাড়া বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় তাঁর লেখা নিয়মিতভাবে প্রকাশিত হয়।

বাংলা সাহিত্যে তাঁর অবদানের জন্য ইতিমধ্যেই অনেকগুলি পুরস্কার তাঁর ঝুলিতে। যারমধ্যে বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক পুরস্কার রয়েছে। অর্জন করেছেন ইন্দো স্প্যানিশ ইন্টারন্যাশনাল অ্যাওয়ার্ড। লন্ডন বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস তাঁকে মানপত্রে সম্মানিত করেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস দিয়েছে মেডেল ও মানপত্র। পেয়েছেন ইন্টারন্যাশনাল এক্সেলেন্স অ্যাওয়ার্ড।

এছাড়া ইন্ডিয়ান লিটারেচার অ্যান্ড আর্টস সোসাইটি তাঁকে মানপত্রে সম্মানিত করেছে। পেয়েছেন মরীচিকা বর্ষসেরা সম্মান ২০২৪, বঙ্গ সংস্কৃতি সম্মান ২০২৫, ইন্ডিয়ান কালচারাল সোসাইটির তরফে বঙ্গ সংস্কৃতি সম্মান ২০২৫।
তাঁর লেখা কাগজের মানুষের জন্য পেয়েছেন গোল্ডেন বুক অ্যাওয়ার্ডস। এছাড়া অক্ষরস্রোত সাহিত্য পত্রিকা তাঁর হাতে তুলে দিয়েছে মাইকেল মধুসূদন দত্ত স্মৃতি স্মারক ২০২৫, বিভূতিভূষণ স্মৃতি সম্মান ২০২৫, ডঃ সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণন স্মৃতি সম্মান।

চিকিৎসক লেখক প্রভাত ভট্টাচার্যকে বিভিন্ন সাহিত্য সংগঠন, সাহিত্য পত্রিকা থেকে নিয়মিত আমন্ত্রণ জানানো হয়। সম্মানিত করা হয়। সাহিত্যে তাঁর অদ্যাবধি অবদান অনস্বীকার্য। আগামী দিনে বাংলা সাহিত্য ও পাঠক মহল তাঁর আরও নতুন নতুন লেখার অপেক্ষায় রয়েছে।
বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রবাদপ্রতিম ব্যক্তিত্ব বলাইচাঁদ মুখোপাধ্যায়। লিখতেন বনফুল ছদ্মনামে। তিনিও পেশায় ছিলেন একজন চিকিৎসক। রোগীর চাপ সামলেও তাঁর কলম বাংলা সাহিত্যকে যা দিয়েছে তা চিরন্তন। বনফুলের মতই প্রভাত ভট্টাচার্যও একজন চিকিৎসক এবং সফল সাহিত্যিক। যাঁর কলম প্রতিদিন বাংলা সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করে চলেছে।