Festive Mood

কালীপুজোয় চোদ্দশাকের কথা

কালীপুজো উপলক্ষে কৃষ্ণা চতুর্দশী তিথিতে চোদ্দশাক খাওয়ার প্রথা একটা প্রচলিত আছে, সঙ্গে চোদ্দ প্রদীপ ধরানো। চোদ্দ প্রদীপ আসলে ঊর্ধ্বতন চতুর্দশ পুরুষের প্রতীক। তাঁদের আত্মার উদ্দেশ্যে শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা জানানো।

Published by
Sibsankar Bharati

প্রতিবছর কালীপুজোর আগের দিন চতুর্দশীতে যখন বাজারে যাই, তখন গিয়ে দেখি বিভিন্ন ধরনের শাকপাতা কুচি কুচি করে কেটে ডাঁই দিয়ে রেখেছে। জিজ্ঞাসা করলে উত্তর আসে চোদ্দটা শাকই আছে এর মধ্যে। এযুগে মিথ্যার যেন আর শেষ নেই।

কিনে এনে বাড়িতে শাকগুলো বাছলে দেখা যাবে খুব বেশি হলে স্মৃতিশাস্ত্র সম্মত শাক পাওয়া যায় সাকুল্যে পাঁচ সাতটা। বাকিগুলো বিভিন্ন ধরনের শাক ও গাছের পাতা।

যেমন চোদ্দশাকের মধ্যে কোটা পূরণ করার জন্য ভেড়ানো হয় লাল শাক, সজনে গাছের পাতা, পুঁই কলমি গুঁড়িকচুর পাতা, থানকুনি, লাউ ও কুমড়ো শাকের পাতা, পলতা ও তেলা কুচোর পাতা ইত্যাদি।

এসব পাতাগুলো এমন কুচিকুচি করে কাটা হয় যে, কারও বোঝার সাধ্য নেই কোনটা কোন গাছের পাতা বা কি শাক? এসব আমার চোখে দেখা।

সারাটা জীবন কোনও বাঙালির চোদ্দশাক খাওয়া তো দূরের কথা, চোখে দেখার সৌভাগ্য কারও কখনও হবে বলে আমার অন্তত মনে হয় না।

কালীপুজো উপলক্ষে কৃষ্ণা চতুর্দশী তিথিতে চোদ্দশাক খাওয়ার প্রথা একটা প্রচলিত আছে, সঙ্গে চোদ্দ প্রদীপ ধরানো। চোদ্দ প্রদীপ আসলে ঊর্ধ্বতন চতুর্দশ পুরুষের প্রতীক। তাঁদের আত্মার উদ্দেশ্যে শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা জানানো।

পরম্পরাগত কথা, কালীপুজোর আগের দিন পরলোকগত পূর্বপুরুষদের আত্মা দেখতে আসেন তাঁদের পূর্ব আবাসস্থলগুলি। তাই বাড়ির প্রতিটি আগমন ও নির্গমন স্থানে প্রদীপ জ্বালিয়ে রাখার উদ্দেশ্য হল, তাঁদেরই পথ দেখানোর আলো। চতুর্দশ পুরুষের স্মরণে তাঁদের আশীর্বাদলাভও হয়। এ যে হিন্দুবিশ্বাস।

মোমবাতি, প্রতীকী ছবি

দেহের সুস্থতা, রোগপ্রতিরোধক শক্তির প্রতীক হল চোদ্দশাক। পশ্চিমবাংলা তথা ভারতের যে কোনও প্রান্তের কোনও বাঙালি সারাজীবন কার্তিকী কৃষ্ণা চতুর্দশীতে চোদ্দশাক খেয়েছেন বলে আমার জানা নেই। তবে নামে ১৪ শাক প্রায় সব বাঙালি কখনও না কখনও খেয়েছেন।

যারা চোদ্দশাক বলে শাক বিক্রি করেন, তারা নিজে ও তাদের চোদ্দপুরুষ চোদ্দশাক দেখেছেন, খেয়েছেন, আজ পর্যন্ত আমার দৌড়ের মধ্যে কাউকে দেখিনি।

বর্তমানে চোদ্দশাকের মধ্যে সজনেপাতা, পুঁই, কলমী, পালং, নটে, গিমের সঙ্গে অন্যান্য নানান শাক মিলিয়ে একশ্রেণির অর্থলোভী প্রতারণা করে চলেছে প্রতি বছর।

বিখ্যাত পণ্ডিত স্মার্ত রঘুনন্দনের মতে চোদ্দশাকের তালিকায় আছে – নিম, সরষে, পলতা, হিঞ্চে, ঘেঁটু, ওল, বেতো, কেঁউ, কালিকাসুন্দি, জয়ন্তি, শালিঞ্চা, গুলঞ্চ, শতপুষ্পা ও সুষনি শাক।

মতান্তরে – ওল, কেঁউ, বেতো, সর্ষে, কালিকাসুন্দি, নিম, জয়ন্তি, শাঞ্চে, হেলঞ্চ, গুলঞ্চ, পলতা, সৌরভ, ভাঁটপাতা ও সুষনি শাক। তবে চোদ্দরকম শাক খাওয়ার কোনও কথা উল্লেখ নেই পুরাণ ও তন্ত্রে।

Share
Published by
Sibsankar Bharati

Recent Posts