Kolkata

সময় বদলায়, বদলায় না ডাকিনী যোগিনী নিয়ে কৌতূহলী শৈশব

Published by
Adhirath Dey

শৈশবে কালীপুজোয় শিবের উপর পা দিয়ে জিভ বের করে দাঁড়িয়ে থাকা কালীমূর্তি ছাড়াও আরেকটি বিষয়ও কিন্তু ছিল আকর্ষণের মধ্যমণি। বলার অপেক্ষা রাখে না, পুরাণ আর রূপকথা হাতড়ে ছোট্ট মন মা কালীর দু’পাশে রাখা ডাকিনী আর যোগিনীর বীভৎস মুখ ও ভঙ্গিমায় ক্ষণিকের জন্য হলেও আবিষ্ট হয়ে পড়ত। বাল্যকালে মনে দাগ কাটা সেই দুই চরিত্রের উৎস সন্ধানে বড়দের জন্য থাকত একগুচ্ছ প্রশ্ন। যত না কালী প্রতিমা নিয়ে প্রশ্ন, তার চেয়েও বেশি প্রশ্ন থাকত তাঁর দু পাশের দুই ভয়ংকর দর্শন ডাকিনী-যোগিনী নিয়ে। সে ভয়ও হতে পারে, আবার কৌতূহলও হতে পারে।

প্রতিমার সঙ্গেই আসত ডাকিনী যোগিনী মূর্তি। কুমোরটুলিতেই তৈরি হত এসব মূর্তি। বারোয়ারির তরফে বায়না হত একসঙ্গেই। আবার আলাদা করেও বিক্রি হয় ডাকিনী যোগিনী। কুমোরপাড়ায় প্রবেশ করে প্রতিমার সাম্রাজ্য পেরিয়ে তারপর খুঁজে পাওয়া গেল ডাকিনী যোগিনীর ডেরা। এক শিল্পী জানালেন, মোটামুটি ৫০০ থেকে ৭০০ টাকায় ডাকিনী যোগিনীর জোড়া বিক্রি হচ্ছে। দাম গতবারের তুলনায় বিশেষ বাড়েনি। তার কথায় বর্তমান পুজো কমিটিগুলি তাদের বাজেট কাটছাঁট করায় কালীর এই অনুচরদ্বয়ের চাহিদা প্রায় ২০ শতাংশের মত কমেছে। দু’পাশে রক্তপান করা মূর্তির ভয়ঙ্কর দৃশ্যকে পাশ কাটিয়ে পৌঁছলাম আরেক শিল্পীর কাছে। যাঁর নাম বিনয় পাল। তবে তিনি কিন্তু এক মজার খবর দিলেন। খদ্দেরদের কাছে তারা ডাকিনী যোগিনীর জোড়ার দামই নাকি বলেন ২৬০০ টাকা। সেইখান থেকে দরদাম হয়ে সেটি এসে দাঁড়ায় ১৫০০ টাকা জোড়াতে। বিনয় দা আরও জানালেন এই সময়েই, অর্থাৎ কালীপুজোর ২-৩ দিন আগে থেকেই মূলত তাদের বিক্রিবাট্টা তুঙ্গে ওঠে।

আইফোন আর ইন্টারনেট গেমের যুগেও কালী প্রতিমার পাশে ডাকিনী যোগিনীর মত কিছু চরিত্র বাস্তবিকভাবেই টিকিয়ে রেখেছে তাদের অস্তিত্ব। এখনও যে মূর্তিগুলি প্যান্ডেলে চোখে পড়লে আট থেকে আশির চোখ একবারের জন্যও আটকে যায়। তথাকথিত বড়দের চোখের সামনে ফুটে ওঠে শৈশবের সেই তাক লাগানো ভয় মেশা এক কৌতূহলটা। প্যান্ডেলে ঠাকুর এলে যার টানে পড়িমরি করে ছুটে যেত তারা। অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকত কালী প্রতিমার দুপাশে দুই মূর্তির দিকে।

Share
Published by
Adhirath Dey

Recent Posts