Feature

যোগ-জ্যোতিষ দ্বারা দৈবপ্রতিকার ও ভগবান লাভ

এই বিদ্যার দ্বারা অসুরদের গুরু শুক্রাচার্য বার বার অসুরদের জীবিত করেছিলেন। এই বিদ্যা দেবরাজ ইন্দ্র অথবা ঋষির পুত্র দধীচি মুনিকে শিখিয়ে ছিলেন।

মৃতসঞ্জীবনী বিদ্যা হচ্ছে মধুবিদ্যা (মধুমতীসূক্ত) যার দ্বারা মৃত্যুর পরেও পুনর্জীবন লাভ হয়। মহর্ষি তার্ক্ষ্য অরিষ্টনেমি ও যিশুখ্রিস্টের মৃত্যুর পর পুনরুত্থান লাভ হয়েছিল। এই বিদ্যার দ্বারা অসুরদের গুরু শুক্রাচার্য বার বার অসুরদের জীবিত করেছিলেন। আসলে এই মধুবিদ্যা হচ্ছে ব্রহ্মবিদ্যা বা ঈশ্বরতত্ত্ব। এই বিদ্যা দেবরাজ ইন্দ্র অথবা ঋষির পুত্র দধীচি মুনিকে শিখিয়ে ছিলেন। পরে দধীচি মুনি সেটি দেবতাদের বৈদ্য অশ্বিনীকুমারদ্বয়কে কৃপা করে প্রদান করেন। এই মধুবিদ্যা দ্বারা জীবন্মুক্ত হওয়া যায়। অমৃতত্ত্ব লাভ হচ্ছে জীবন্মুক্ত হয়ে বেঁচে থেকে নিত্যানন্দ তথা বহ্মানন্দ অনুভব করা। ঋকবেদ, বৃহদাণ্যক উপনিষদ ও মহাভারতে এই মধুবিদ্যার কথা বলা হয়েছে।

সত্যঋত-ব্রহ্ম, ঋতকামী সত্যধর্মা ব্যক্তিগণ বৈদিক মধুমতী সূক্ত উচ্চারণের দ্বারা দেহে আত্মবুদ্ধি নাশ হয়ে অর্গল (খিল) মুক্ত হয়ে জীবনকে মধুময় করে শ্রেয়োলাভের পথে জীবনকে উন্নীত করে থাকেন। শ্রদ্ধাবান পুরুষ ও দেবতাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাবার জন্য প্রতীক মধুপর্কের (ঘৃত, দধি, চিনি ও মধু) অর্ঘ প্রদানের ব্যবস্থা করা হয়েছে।


আকর্ষণীয় খবর পড়তে ডাউনলোড করুন নীলকণ্ঠ.in অ্যাপ

সত্য, অহিংসা ও ত্যাগ – এই তিনটি স্তম্ভের উপর নির্গুণ বহ্ম নারায়ণের প্রতিষ্ঠা। সেজন্য তেপায়ার উপর নারায়ণের ও সহস্রারের প্রতীক শালগ্রামশিলা রেখে পূজা করার ব্যবস্থা। যে ব্যক্তির মধ্যে এই তিনটি সদগুণ বর্তমান তিনি নররূপী নারায়ণের অবতার। তিনি সদগুরু। যে যুগের যিনি অবতার তিনিই সদগুরু হন। তাঁর হাতে থাকে জীবের মুক্তির চাবি। শক্তিরই অবতার। ঈশ্বরের চৈতন্যব্যক্তি মানুষের দেহে অবতরণ করলে তিনি অবতার হন।

সত্য কথা কলির তপস্যা। কলি হচ্ছে মিথ্যার প্রতীক। কলির ব্রাহ্মণ হচ্ছেন মিথ্যার ব্রাহ্মণ। পুরোহিত গুরু তান্ত্রিকগণ বিভীষণের অভিশাপ। দেব পুরোহিত ত্রিশিরার নিন্দা এবং যুগাবতার শ্রীরামকৃষ্ণের নিন্দা। যজমেনে পুরোহিতের অন্ন খেও না। শাশ্বত ধর্ম সত্যই প্রতিষ্ঠিত আছে। সত্যের কাছে ভগবান প্রকাশিত হন। সত্যকে না জানলে কিছুই হবে না। অহিংস পরম ধর্ম। সেই অহিংসা সত্যেই প্রতিষ্ঠিত আছে। যেখানে সত্যস্বরূপ ভগবান সেখানে হিংসা থাকতে পারে না। যেখানে মিথ্যা সেখানেই হিংসা। নিজে অহিংসক হলে কেউ তাঁকে হিংসা করে না। প্রমাণ থাইল্যান্ডের প্রত্যন্ত গ্রাম কাঞ্চন বুড়ির এক বৌদ্ধ মঠের ভিক্ষু সন্ন্যাসীগণ ষোলটি হিংস্র বাঘের সঙ্গে সর্বদা বাস করছেন। এটা টিভির অ্যানিম্যাল প্ল্যানেট চ্যানেলে প্রায়ই দেখানো হয়।

মহাত্মা বিজয়কৃষ্ণ গোস্বামীর আসনের তলায় সর্বদা একটি বিষধর সর্প বাস করত। তাঁর মাথায় জটায় থাকত অসংখ্য ছারপোকা। যিনি অর্থেতঃ ও কামতঃ অহিংসা নারায়ণ হন তাঁর মৃত্যু ভয় থাকে না। তিনি দৃশ্যতঃ মারা গেলেও পুনর্জীবিত হন। অহিংসার জন্যই তৃক্ষ মরীচির পুত্র অরিষ্টনেমি ও যিশুখ্রিস্টের পুনরুত্থান হয়েছিল।

অভয়দান করাই শ্রেষ্ঠ ধর্ম। কেহ মৃত্যু অভিলাষ করে না। ভয় থেকে মুখি। কিসের ভয়? মৃত্যুভয়। নিজে অভয়লাভ করলে তবেই অপরকে অভয়দান করা যায়। ‘হে জনক! তুমি অভয়লাভ করেছ’- মহর্ষি যাজ্ঞবল্ক্য। ‘যিনি সমগ্র জীবজগতকে ভয়ঙ্কর অপমৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা করতে পারেন তাঁর মহৎকর্ম লাভ হয়’।– ভগবান শ্রীকৃষ্ণ।– (মহাভারত, উদ্যোগ পর্ব- ৯২)।

হিন্দুধর্ম সনাতন। কারণ এই ধর্ম কোন ব্যক্তি বিশেষের দ্বারা প্রচারিত ধর্ম নয়। যা আজ আছে কাল থাকবে না এমন নয়। বৈদিক , পৌরাণিক, তান্ত্রিক ও ষড়দর্শনের উপর প্রতিষ্ঠিত এবং অবতারগণের উপদেশের ক্রমবিবর্তনের ধারায় শ্রেয়োলাভের পথে উন্নীত অভ্যুদয় মূলক ধর্ম। জীবের প্রকৃতি, স্বভাব ও সংস্কার জন্মগত চেষ্টা করে এর পরিবর্তন করা যায় না। চেষ্টা দ্বারা কেবল মাত্র অভ্যাসের পরিবর্তন করা যেতে পারে। কিন্তু স্বভাবো দুরতিক্রমঃ। স্বভাব পরিবর্তন করা যায় না।

মিথ্যাবাদীর ধর্মলাভ হয় না। মিথ্যাবাদীকে শেষ জীবনে চরম শাস্তিভোগ করতে হয়। অকালে তার অপমৃত্যু হয় – ব্রহ্মা। যার নেই ঈষৎ তাঁর সবই অনিষ্ট। ইষ্ট লাভ না হলে জ্যোতিষ শাস্ত্রের সত্য উপলব্ধি হয় না। এই জন্য চাই মধুবিদ্যা তথা ব্রহ্মবিদ্যার জ্ঞান- বেত্তাধীশী চেতনা। একের গায়ে অনেক শূন্য দিয়ে গেলে অনেক হয়ে যায়। আর এক-কে মুছে ফেললে সব শূন্য হয়ে যায়। এই জন্য সত্যস্বরূপ সেই এক-কে জানতে হবে- সত্য-ঋত-ব্রহ্ম। অর্থাৎ ইষ্টকৃপা না থাকলে এসবে সিদ্ধিলাভ হয় না। চাই অতীন্দ্রিয় অনুভূতি জীবাত্মার জ্ঞান-প্রজ্ঞা। সম্যক জ্ঞান সম্পন্ন হলে তবেই সত্য উপলব্ধি হয়।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *